প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর এদেশে একটি গোষ্ঠী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। শুরু হয়ে যায় হত্যা, ক্যু আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলতে শুরু করে তারা। ‘আমি জনগণের ভাগ্য ফেরাতে শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে দেশে ফিরেছি। দেশে গণতন্ত্র এনেছি। জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছি।’ রংপুরে জিলা স্কুল মাঠে বুধবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এই রংপুর বিভাগের প্রতিটি জেলা, বলতে গেলে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমি ঘুরেছি। দেখেছি মানুষের হাহাকার। মিটিংয়ে এলে দেখতাম মানুষের দারিদ্র্য। ছিন্ন বস্ত্র, পেটে খাবার নেই। খবর: নিউজবাংলা
‘প্রতিজ্ঞা ছিল, যখনই সরকার গঠন করতে পারব, এই মানুষের ভাগ্য আমরা পরিবর্তন করব। দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করব। আজ অত্যন্ত এটুকু বলতে পারি- আজকের বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমাতে পেরেছি, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ করতে পেরেছি।
‘আজ মানুষ ভালো আছে। দুবেলা দুমুঠো খেতে পারছে। আওয়ামী লীগ সরকার এই অঞ্চল থেকে মঙ্গাকে বিতাড়িত করেছে।’
দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো জীবন দিতে প্রস্তুত বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন সরকারে ছিলাম তখনও মঙ্গা ছিল না। ২০০১ সালে যখন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসেন তখন দুই হাতে টাকাপয়সা লুট করেন। তিনি ও তার ছেলেরা মিলে এদেশে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন। আবার দেশে মঙ্গা শুরু হয়। ২০০৮-এর নির্বাচনের পর আমি যে পদক্ষেপ নিয়েছি, তারপর থেকে এ দেশের মানুষের কোনো কষ্ট হয়নি।’
মানুষ এখন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে, অনেক আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছি। মানুষ এখন শান্তিতে ভোট দিতে পারে। ভোট দেয়ার জন্য ভোটার তালিকাও করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। নারীদের জন্য কাজের সুবিধা করে দিয়েছি। আমাদের কাজের লক্ষ্য দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করা, দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নতি করা। এই অঞ্চলে জীবনেও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে না, মঙ্গা দেখা দেবে না। বাংলাদেশে কোনো ভূমিহীন মানুষ থাকবে না। তিস্তা মহাপরিকল্পনাও বাস্তায়ন করবো।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। কয়লা ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ নিয়ে কয়েক দিন কষ্ট হয়েছে। এখন ঠিক হয়ে গেছে। বিদ্যুতের আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’
শেখ হাসিনা জনসভাস্থলে পৌঁছান বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে। মঞ্চে আসন গ্রহণ করার আগে জনসভাস্থলে উপস্থিত বৃহত্তর রংপুরবাসীর জন্য ১ হাজার ২৪০ কোটি টাকার ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী উত্তরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, ‘রংপুর বিভাগ করেছি। লালমনিরহাটে এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। রংপুর অঞ্চলে গ্যাস আনার কাজ চলমান।
‘আওয়ামী লীগের আমলে কোনো মঙ্গা হয়নি। নৌকা প্রতীকে ভোট দিলে আর আওয়ামী লীগ সরকারে এলে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।’
রংপুরের পুত্রবধূ শেখ হাসিনা এই অঞ্চলের মানুষকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি খালি হাতে আসিনি। আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। কতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। এখানে প্রতিটি উন্নয়ন কাজ যাতে ত্বরান্বিত হয় সে ব্যবস্থা করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি কত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, এরা মানুষের জাত না। ক্ষমতায় থাকলে লুটপাট করে। না থাকলেও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা শুধু জ্বালাও-পোড়াও আর ধ্বংসই করতে পারে। খালেদা জিয়া ও তার কু-পুত্র তারেক জিয়া লুটপাট করতে জানেন। তারা ধ্বংস করে আর আমরা সৃষ্টি করি। নৌকা ক্ষমতায় এলে কাজ হয় আর অন্য কেউ এলে কোনো কাজ হয় না।
‘খালেদা জিয়া মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর এসবের পরিবর্তন হয়েছে। সাড়ে ১৪ বছরে যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান আমরা করতে পেরেছি। ট্রেনিং দিয়েছি, কাজের ব্যবস্থা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘রংপুরকে বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগ কৃষকের বন্ধু। কুষকদের জন্য কুড়িগ্রামে ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সারের দাম কমিয়ে দিয়েছি। অথচ খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে কৃষক সার চাইলে গুলি করে হত্যা করেছেন।’
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একে এম শাহাদাত হোসেন।