বাংলা বছরের সমাপনী মাস চৈত্র। চৈত্রের শেষ দিনটিকে হিন্দুধর্মালম্বীদের মতে চৈত্র সংক্রান্তি বলা হয়। পঞ্জিকা মতে চৈত্র মাসের শেষ সংকান্তি উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায় নানা পূজা অর্চনা ও আচার অনুষ্ঠান করে থাকে। বাংলা সনের শেষ মাসের নাম করন করা হয়েছে চিত্রা-নক্ষত্রের নামনুসারে। আদিগ্রন্থ পুরানে বর্ণিত রয়েছে ২৭টি নক্ষত্র আছে যা রাজা প্রজাপতির দক্ষের সুন্দরী কন্যার নামানুসারে নামকরন করা হয়। একদিন মহা ধুমধামে চন্দ্রদেবের সংগে বিয়ে হয় দক্ষের ২৭ কন্যার।
দক্ষের এক কন্যা চিত্রার নামনুসারে চিত্রানক্ষত্র এবং চিত্রানক্ষত্র থেকে চৈত্র মাসের নামকরন করা হয়। চৈত্র মাসের অন্যতম প্রধান উৎসব চড়ক। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা সদরের মাঝিপাড়া গ্রামে প্রায় ৭শত বছর পূর্ব থেকে চৈত্র সংক্রান্তিতে মানুষের পিঠে বড়শি ফুটিয়ে চড়ক ঘুরানো হয়ে আসছে। এবারও হিন্দু ধর্ম মতে চৈত্র সংকান্তি উপলক্ষে আজ ৩০ চৈত্র ১০৩০ বাংলা (১৩ এপ্রিল-২০২৪ইং) আদমদীঘি উপজেলার সদরের মাঝিপাড়া গ্রামে চড়ক অনুষ্ঠিত হবে। চড়ক পূজা উপলক্ষে মাঝিপাড়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায় বিভিন্ন মন্দিরে পূজা অর্চনার আয়োজন করেছে।
চড়ক পুজা আয়োজক কমিটির প্রধান উপদেষ্ঠা ও জমিদার পরিবারের প্রবীন ব্যক্তি বাবু সত্যেশ চন্দ্র নিয়োগী (ভানু বাবু) জানান, চৈত্র সংক্রান্তি চড়ক উপলক্ষে গত ১৯ চৈত্র তাদের মন্দিরে ঘটস্থাপন পূজা করে পূজার কার্যক্রম শুরু করেছে। ১৯ চৈত্র থেকে ২৩ চৈত্র পর্যন্ত ঘটস্থাপন পূজা করা হয়। এরপর ২৪ চৈত্র রোববার ফুলভাংগান পূজা,২৫ চৈত্র সোমবার নাগরাকাটা পূজা,২৬ চৈত্র মঙ্গলবার কালী পূজা ও ভড়ন খেলা, ২৭ চৈত্র বুধবার শ্বশ্মান খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ চৈত্র বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃক্ষস্বরী পূজা, মহালদার পূজা, শিতলা পূজা, শিবপূজা, কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
২৯ চৈত্র শুক্রবার প্রতিটি মন্দিরের প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়। আজ ৩০ চৈত্র শনিবার চড়ক গাছে পুজা শেষে বিকেলে লম্বা গাছের খুটিতে বাঁশ বেঁধে দড়ি ঝুলিয়ে চড়ক গাছ তৈরী করে মানুষের পিঠে বড়শি ফুটিয়ে চড়ক ঘুরানো হবে। চড়ক কল্পে মানুষের পিঠে বড়শি ফুটানো সহ তান্ত্রিক মন্ত্র পরিচালনা করবেন মাঝিপাড়া গ্রামের সন্যাসী মদন বিশ্বাস এবং পিঠে বড়শি ফুটিয়ে চড়ক করবেন খোকন বিশ্বাস। চৈত্র সংকান্তি চড়ক উপলক্ষে আজ শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী মেলা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা ও চড়ক মেলা উপলক্ষে আদমদীঘির মাঝিপাড়া গ্রাম সহ আশপাশের গ্রামগুলোতে জামাই-মেয়ে সহ আত্নীয়-স্বজনের ব্যাপক সমাগম ঘটে।