খুব আহামরি কোনো গোল নয়, যেখানে বড় অবদান ছিল ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের। গোলবারের এক কোনায় আলতো টোকা দিয়ে ম্যাচজয়ী তারকা বনে গেলেন এন্ড্রিক। তবে ১৭ বছর বয়সে ওয়েম্বলিতে স্বাগতিক ইংল্যান্ড সমর্থকদের সামনে স্নায়ুচাপ সামলানো–ই যে তার বড় কীর্তি। প্রতিপক্ষে মাঠে ব্রাজিলকে জয় এনে দিয়ে তিনি একাধিক রেকর্ডও গড়েছেন। এরপর থেকে ভাসছেন প্রশংসার জোয়ারে।
‘বিষ্ময় বালক’ এন্ড্রিক চলতি মৌসুম শেষ করেই যোগ দেবেন রিয়াল মাদ্রিদে। আরও দুই বছর আগেই তাকে কিনে রেখেছে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠ দলটি। রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের জহুরির চোখ কেন এন্ড্রিককে কিনে রেখেছে, সেটার প্রমাণ পাওয়া গেল গতকাল (শনিবার)। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলের ১-০ গোলের জয়টা যে এসেছে তারই পা থেকে। ওয়েম্বলিতে গোল করা সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় এন্ড্রিক।
গোলটি করার সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর ২৪৬ দিন। ১৯৯৪ সালে ‘দ্য ফেনোমেনন’–খ্যাত রোনালদো নাজারিওর পর ব্রাজিলের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সী গোলদাতাও এখন এন্ড্রিক। ১৭ বছর ২২৮ দিন বয়সে রোনালদো নিজের প্রথম গোলটি করেছিলেন। তবে সম্মিলিত হিসাবে ব্রাজিলের হয়ে কম বয়সী গোলদাতাদের সবার ওপরে আছেন ফুটবলসম্রাট পেলে। ১৬ বছর ২৫৭ দিন বয়সে এই প্রয়াতি কিংবদন্তি গোল করেছিলেন। এরপর ১৬ বছর ৩০৬ দিন নিয়ে দুইয়ে আছেন এডু গাসপার।
অল্প বয়সেই নজর কাড়া এন্ড্রিক ২০২২ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক স্কাউটদের নজরে আসেন। ব্রাজিলের ১-০ গোলে জয় পাওয়ার দিনে আরও একটি গোল পেতে পারতেন তিনি। তবে সেটি না পাওয়া হলেও ইংলিশদের টানা ১০ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙেছে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম গোলে। এন্ড্রিক গোল করেই কেঁদেছেন উচ্ছ্বাসে, জানিয়েছেন– ‘এটি অনন্য অনুভূতি, এখনও হজম করে ওঠার চেষ্টা করছি। আমার পরিবার আছে এখানে, আমার বান্ধবী, এজেন্ট, সবাই আছে…। আমি এমন নই যে খুব কান্নাকাটি করি, নিজেকে সামলে রাখছি। তবে সত্যিই এটা অনন্য এক অনুভূতি, আমি খুবই খুশি।’
পরবর্তীতে ব্রাজিল কোচও তাকে নিয়ে দারুণ সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। ব্রাজিলের কোচ হয়ে আসার পর জয় দিয়ে শুরু করা প্রথম ম্যাচের পর দরিভাল জুনিয়র বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সে যে মানসিকতা দেখিয়েছে, তা যদি ধরে রাখতে পারে, তাহলে সে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ও বিশ্ব ফুটবলের খুবই গুরুত্ব নাম হবে।’
ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটও তার প্রশংসা করেছেন, ‘আমরা জানি সে (এন্ড্রিক) ভয়ঙ্কর খেলোয়াড়। সে গোল করার পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানে। তবে আমরা রক্ষণে যেরকম ভূমিকা রেখেছি, তারচেয়েও ভালো করতে পারতাম। এটি তার জন্য দুর্দান্ত মুহূর্ত। আমরা তাদের মতো বেশ কয়েকবার গোলের চেষ্টা করেছি, কিন্তু শেষমুহূর্তে গিয়ে সেই নিষ্ঠুর পরিস্থিতি এলো, যা ম্যাচের ফল পাল্টে দিয়েছে।’
এন্ড্রিককে নিয়ে আরও বড় মন্তব্য করেছেন সাবেক ইংলিশ মিডফিল্ডার জো কোল মাঝে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোমারিওকে দেখার কথা জানিয়েছেন, ‘আমার ধারণা, তার মধ্যে রোমারিওর কিছুটা ছায়া আছে। শরীরের গঠন এবং যেভাবে বল সামনে বাড়িয়ে দেয়, তা দেখলেই বোঝা যায়। এ ছাড়া তার মুখে যে উচ্ছ্বাস, সেটাও একই কথা বলে। ওয়েম্বলিতে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে গোল করেছে, অসাধারণ ব্যাপার!’
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের জার্সিতে অবশ্য আরও আগেই অভিষেক হয়েছিল এন্ড্রিকের। গত নভেম্বরে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ৫৭ বছরের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে তিনি মাঠে নেমেছিলেন। এরপর দেশের হয়ে তৃতীয় ম্যাচেই পেলেন প্রথম গোলের স্বাদ। যদিও এদিন তিনি নামলেন ৭১ মিনিটে রদ্রিগো গোয়েসের বদলি হিসেবে। এ বিস্ময়বালক ভবিষ্যতে ফুটবল প্রতিভার আলো কতদূর ছড়াবেন সেটি সময়ই বলে দেবে। আপাতত ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার অপেক্ষায় আছেন তিনি, এরপর তার গায়ে উঠবে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি।