ঈদের আগে বৃদ্ধ বাবা- মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল তার। কিন্তু বাসের ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য তার নেই।
যেকোনো মিষ্টি খাবারের রেসিপিতে থাক, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ
একজন যাত্রীর কাছে ময়মনসিংহ পর্যন্ত বাসের ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ৩১০ টাকা করে। রহিম মিয়া হতাশার সঙ্গে বলেন, আমার পরিবারে ছয়জন সদস্য। সবার টিকিট কিনতে হলে ১৮৬০ টাকা খরচ হবে। এত টাকা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। তাই ঝুঁকি নিয়েই পিকআপ ভ্যানে করে যাচ্ছি।
বাসের অল্প দূরত্বে বেশি ভাড়া এবং ট্রেনের টিকিট না পাওয়ায় রহিম মিয়ার মতো ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা ছাড়ছেন শহরের অসংখ্য নিম্ন আয়ের মানুষ। গৃহকর্মী, রাজমিস্ত্রী, রিকশাচালক, দিনমজুর এবং ভিক্ষুকরাও পর্যন্ত পিকআপ ভ্যান, ট্রাক, লেগুনা; এমনকি অটোরিকশায় করেও যার যার গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন।
ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষায় ঝুঁকি নিতে বাধ্য করছে ঢাকার নিম্ন আয়ের মানুষকে।
সোমবার (৮ এপ্রিল) ঢাকার বিভিন্ন টার্মিনালে, পাড়া মহল্লার বাজারগুলোতে এবং শহরের ভেতর প্রধান সড়কের স্টপেজ গুলো সরেজমিনে ঘুরে নিম্ন আয়ের মানুষকে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে।
এই কয়েক দিন বাস টার্মিনালগুলোতে টিকিট কেনার জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে মানুষকে। অনেকেই টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বাসের টিকিটের অধিক মূল্যের কারণে এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে কিছুটা অর্থ বাচাতে নিম্ন আয়ের অনেকে হতাশ হয়ে টিকেট না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। এদেরই অনেকে বাড়ি ফিরতে খোঁজেন বিকল্প ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন।
দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার গৃহকর্মী রোজিনা আক্তারের মুখেও একই গল্প; ‘ঈদের জন্য গ্রামের বাড়িতে যেতে চাই। কিন্তু বাসের টিকিটের দাম অনেক বেশি। তাই পিকআপ ভাড়া করে কয়েকজন মিলে যাচ্ছি। ’
মান্ডা- মুগদা এলাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করা শহীদুল ইসলামও ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার লোভ সামলাতে পারছেন না। কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী-বাচ্চারা অপেক্ষা করছে। ঈদের নতুন জামাকাপড়, সেমাই, খাবার কিনতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাই বাসের টিকিট না কিনে বালুর ট্রাকে করে যাচ্ছি।
এদিকে, ঢাকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যানবাহনে ভিড় দেখা যাচ্ছে। ট্রেন, বাস, লঞ্চ সবকিছুতেই যাত্রীদের ভিড়।
বাস মালিকরা বলছেন, ঈদের কারণে যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি। তবে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে এই বিষয়টি মানতে নারাজ পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগরের মহাখালী বাস টার্মিনালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশের কর্মকর্তা বলেন, ঈদের আগে যানবাহনের ভিড় নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সার্বক্ষণিক কাজ করছে। যানবাহনগুলো যেন নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রীদের বহন করে সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি যানবাহনের ফিটনেস ও অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে অভিযান চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকে করে যাত্রা করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আমরা যাত্রীদের বাসের টিকিট কেটে নিরাপদে যাত্রা করার জন্য অনুরোধ করছি।