• ঢাকা, বাংলাদেশ শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:০৯ অপরাহ্ন
নোটিশ
রাজশাহীতে আমরাই প্রথম পূর্ণঙ্গ ই-পেপারে। ভিজিট করুন epaper.rajshahisangbad.com

কেউ চোখ রাঙাবে আর আমরা সহ্য করবো এটা ভাবা ভুল: লিটন

রিপোর্টার নাম:
সর্বশেষ: শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহীতে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারাকে যে স্থানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে সেই স্থানটিকে ‘পবিত্র’ করার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ঈদের পর সেখানে ইসলামি জালসার আয়োজন করে দোয়া-কালাম পড়া হবে বলে জানান তিনি। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নগরীর গণকপাড়া জয় বাংলা চত্বরে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে লিটন এসব কথা বলেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারাকে গত ৯ মার্চ নগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদ এলাকায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে সংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি। পরিচালনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। এই অনুষ্ঠানে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অনিল সরকারসহ জেলা ও মহানগরের বড় একটি অংশ উপস্থিত ছিলেন না। ওই অনুষ্ঠানে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী রাজশাহী আওয়ামী লীগকে ‘রাহুমুক্ত’ করার ঘোষণা দেন। আর রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকারকে অশ্লীল ভাষায় গালি দেন। মুলত ঐ অনুষ্ঠানের বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয় বৃহস্পতিবারের সভা থেকে।
প্রধান অতিথি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, একজন (প্রতিমন্ত্রী দারা) কিছু একটা হয়ে গেছেন, তাকে সংবর্ধনা দিতেই পারেন। লোক ভাড়া করে আনা হলো, সাহেববাজার বড় মসজিদ প্রাঙ্গণটিকে কলুষিত করা হলো। সংগঠনের নামে আমরা দেখলাম অন্যকে গালাগালি করে ছোট করা হলো।
দেখলাম, সেই মঞ্চে যার গায়ে ছাত্রদলের গন্ধ, যার গায়ে ফ্রিডম পার্টির গন্ধ, যার পরিবারে এখনো স্বাধীনতার বিপক্ষের মানুষের চলাচল আছে, যার নিজের এলাকায় তাকে গডফাদার বলা হয়, কীসের গডফাদার আমি সেটা বলতে চাই না। তিনি ঘোষণা করলেন- রাজশাহীর আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হলো। আরে উনি তো নিজেই ছাত্রদল ফ্রিডম পার্টি করে এসেছেন, উনি আবার আওয়ামী লীগকে রাহুমুক্ত করবেন কীভাবে? আমরা জন্মগতভাবে রক্তের মধ্যে দিয়েই আওয়ামী লীগ করি।’
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমরা মনে করি, বড় মসজিদ প্রাঙ্গণটাকে কলুষিত করার জন্য সেখানে মিলাদ দিয়ে পবিত্র করা দরকার। আমরা সেটা করতে চাই। ঈদের পরেই আমরা সেখানে ইসলামি জলসা দিয়ে মাওলানাদের ডেকে এনে, দোয়া-কালাম পড়িয়ে পবিত্র করতে চাই। কারণ, কিছু রাজাকার, কিছু বিএনপি, জনগণের ভোটে তারা কতটুকু এগিয়ে আছেন আমি সে প্রশ্নে যাব না। তারা ওখানে বড় বড় কথা বলে আমাকে, আমাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
লিটন বলেন, আমার পিতা আওয়ামী লীগ করেছেন, জাতির পিতার সাথে রাজনীতি করেছেন। আমাদের যদি ক্ষান্ত করা এত সোজাই হতো এতগুলো মানুষকে একটা ডাকেই আসতো? আসতো না।
কিছু বিএনপি থেকে আসা লোক আমাকে অবাঞ্চিত করে বড় বড় কথা বলে। এই মঞ্চে যারা বসে আছেন আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতারা। আজ ৪০ বছর কেউ ৪৫ বছর আওয়ামী লীগ করছেন। অনিলদার মত লোককে মঞ্চে উঠে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করছে। ফেসবুকে অশালিন ভাষায় লেখালেখি করা এই যে অপচেষ্টা করা হচ্ছে আমি বলতে চাই আমাকে রাজশাহী থেকে বহিস্কার করে কোন লাভ নেই। শেখ হাসিনা আমাকে বাংলাদেশে নিয়ে গেছেন। তিনি আমাকে বাংলাদেশের ১৭ জন প্রেসিডিয়াম মেম্বারের একজন করেছেন। সেই গৌরব উপরে আল্লাহ নিচে শেখ হাসিনা আমার নেত্রী, আমাকে দিয়েছে। গা জ¦ালা করে তো কোন লাভ নাই। গা জ¦লতে পারে আপনার। কিন্তু এই গা জ¦ালা দিয়ে কোন লাভ হবে না। আপনারা যে ভাষায় কথা বলছেন, বিএনপি জামায়াত সেই ভাষায় কথা বলেন। আওয়ামী লীগকে কটাক্ষ করে। ঐ যে আমি বললাম আপনাদের গায়ে বিএনপি জামায়াতের গন্ধ আছে। সেই কারণেই কটাক্ষ করে কথা বলেন।
আজকে আমি বলতে পারি আমার ২২/২৩বছর থেকে শুরু করে আজকে ৬৪ বছর যৌবনের সমস্ত উত্তাপ দিয়ে, আমার কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে এখানে আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলেছি। ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য নয়। কারো চোখ রাঙানি শোনার জন্য নয়। কেউ মঞ্চে উঠে আজে বাজে কথা বলে চোখ রাঙাবে আর আমরা সেটি সহ্য করে নিবো এটা ভাবা ভুল। এটা মনে করিয়েন না। আমারও মনে করলে অনেক কিছু করতে পারি। আপনাদের গায়ের জ¦ালা আমরা বুঝি। তা না হলে আপনারা ইফতার পার্টির নাম করে শত শত প্যাকেট রাস্তার উপর ছিটিয়ে রাখলেন জনগনের উপর প্রতিশোধ নিলেন। ক্যানো রাজশাহী এত পরিষ্কার ক্যানো তার এলাকা এত নোংরা। আজকে রমজান মাস অনেক কথা বলতে পারলাম না, পারছি না। কিন্তু ঈদের পরে আপনারা যদি সংযত না হন যদি সঠিক পথে রাজনীতি না করেন, নিজের এলাকার বাহিরে যদি মাথা ঘামান তবে আমাদের বাধ্য হতে হবে সেই ভাবে রাজনৈতিক ভাবে আপনাদের মোকাবেলা করতে। আমার কারো দয়ায় রাজনীতি করে এই জায়গায় আসিনি। খেটে খুটে জনগনকে ভালোবাসা নিয়ে তাদের ভোট নিয়ে এসেছি। এত ভোট বাংলাদেশের মধ্যে কেউ পায়নি। যে ভোটটি আমাকে রাজশাহীবাসী দিয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ। আমার পুরো অন্তরটা কেটে দিলেও তাদের ঋণ শোধ হবে না। সেই রাজশাহীবাসী আমার সাথে আছে। আমাকে ভয় দেখিয়ে কোন লাভ হবে না।
বিশেষ অতিথি আসাদুজ্জামান আসাদ এমপি বলেন, কিছুদিন আগে কিছু রাজাকার শাবক রাজশাহীকে অশান্ত করতে এসেছিল। তারা খায়রুজ্জামান লিটনের পায়ের নিচে বসে নেতা হয়েছে। যারা কয়দিন আগে জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়েছে, তারা এখন নোংরা কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক। রাজাকার শাবকদের বলব, যদি সাহস থাকে, ক্ষমতা থাকে কোথায় সমাবেশ করবেন জানাবেন। সেখানে গিয়ে ওই মঞ্চে দাঁড়িয়েই আপনাদের মুখোশ উন্মোচন করতে চাই।
মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা এমপি বলেন, ‘লিটনকে ছোট করে কেউ যদি মনে করেন বড় হবেন, তাহলে তিনি আহাম্মুক। এখন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমরা এই ষড়যন্ত্রকারীদের উৎখাত করব।’
এ সময় রাজশাহী-৪ আসনের সাবেক এমপি এনামুল হক ও রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক এমপি ডা. মনসুর রহমান ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
সাবেক এমপি এনামুল হক তার বক্তব্যে বলেন, ‘গাছের থেকে পরগাছা বড় হয়ে গেছে। তারা মূল গাছ সম্পর্কে কটু কথা বলছেন। তাদের বলব শিষ্টাচার মেনে রাজনীতি করুন নইলে পালাবার জায়গা পাবেন না। এ সময় তিনি ‘আগাছা’ দূর করে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি করার অনুরোধ জানান।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘বাংলার মাটিতেই মীরজাফর-মোস্তাকের জন্ম হয়েছে। রাজশাহীতে কেন নতুন করে এদের জন্ম হবে না? জন্ম হয়েছে, আমরা প্রতিহত করব।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘সংবর্ধনার মঞ্চ থেকে কালাম (এমপি আবুল কালাম আজাদ) আমাকে গালি দিয়েছেন। কোন ভদ্র-শিক্ষিত মানুষ এটা করেন না। এর বিচারের ভার আমি আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদেরই দিলাম।’


আরো খবর