বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) হামলা, ব্যাংক লুট, নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার সদস্যের অস্ত্র লুট এবং ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় পুরো জেলাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ইতোমধ্যেই র্যাবের মধ্যস্থতায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে শনিবার (৬ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে বান্দরবান এসেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক, মসজিদ ও উপজেলা পরিষদ পরিদর্শন করেছেন।
রুমা উপজেলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, শান্তিপ্রিয় এলাকা, যেখানে শান্তির সুবাতাস সবসময় বইতো সেখানে আমরা এ ধরনের ঘটনা কামনা করি না। হামলায় কাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সেনাবাহিনী তারা তাদের মতো করে কাজ করবে।
ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।
তিনি বলেন, আমরা আর কোনো কিছুকে চ্যালেঞ্জ নিতে দেব না। এর উৎপত্তি, উৎস কোথায় খুঁজে বের করব। তাদের সকলকেই আইনের আওতায় আনব।
রুমা উপজেলা পরিদর্শন শেষে দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বান্দরবান সার্কিট হাউসে পৌঁছান। সেখানে তিনি জেলা পুলিশের গার্ড অফ অনার গ্রহণ করেন। পরে বান্দরবান জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে জেলা প্রশাসনসহ সরকারি নিরাপত্তা সেক্টরের সকল বিভাগের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটি সশস্ত্র সংগঠন তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা মনে করি যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে অপরাধ করেছে। কাজেই রাষ্ট্র চুপ থাকতে পারে না। আমরা এ জন্য যা যা করণীয় তা করব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আমরা পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করব।আমরা সীমান্তে বিজিবি বৃদ্ধি করব।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সামরিক বাহিনীর প্রধানকে নির্দেশনা দিয়েছেন সবাই মিলে যেন যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। তার আগে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিজিবি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তা করব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কোনো ধরনের অস্ত্রধারীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে থাকতে দেব না।
আমরা অনেক ধৈর্যের সঙ্গে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাদের সঙ্গে দুইবার আলোচনায় বসেছেন। তারা আলোচনায় না গিয়ে তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেছে।
তিনি আরও বলেন, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা যদি বিদেশেও আশ্রয় নেয়, আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদেরকে দেশে ফেরত এনে বিচারের ব্যবস্থা করব।
কেএনএফের সঙ্গে আর কোনো আলোচনা হবে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের বাইরে না। এই এলাকার জনসাধারণ যদি মনে করে আলোচনা হওয়া উচিত, তাহলে আলোচনা হতেও পারে, এই সিদ্ধান্ত জনগণের। তবে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কাজ চালিয়ে যাবে।
এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, আনসার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল হামিদুল হক, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, সুরক্ষা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বান্দরবান আসনের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশৈসিং, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, বান্দরবান রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মেহেদী হাসান, জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার সৈকত শাহীনসহ সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।