আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারিদের মাঝে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।রাজশাহীর তানোরের খামারিরা তাদের গরু-ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তানোরের ছোট বড়ো মিলে প্রায় ২৬ হাজার ৯ শত খামারি প্রায় ৪০ হাজার কোরবানির গবাদিপশু প্রস্তুত করেছে আসন্ন কোরবানির জন্য।
কোরবানির পশু প্রস্তুত করা তানোরের খামারিদের অনেকে জানান,সীমান্তবর্তী ভারতীয় গরু আধিক্য ঠেকানো না গেলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন খামারিরা। জানা যায়, সীমান্তবর্তী বিভিন্ন উপজেলা দিয়ে আসে প্রায় শতভাগ গরু ভারতীয়। এসব গরু সীমান্তের বিভিন্ন পকেট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গরুর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় নাগরিকেরাও এ দেশে গরু নিয়ে প্রবেশ করেন।
এদিকে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তানোরের খামারিরা। খামারিরা বলছেন এবার তানোর উপজেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ গরু ছাগল রয়েছে, তাই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত হতে গরু প্রবেশ করলে ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। তানোর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা মোঃওয়াজেদ আলী বলেন,এবার তানোর উপজেলায় গরু ছাগল রয়েছে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলায় এবার ২৯ হাজার ২৬০ পশু কোরবানির চাহিদা আছে। তার বিপরীতে এবার পশু রয়েছে ৩৯ হাজার চারশ বত্রিশটি।প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা জানান, তানোর উপজেলায় কোরবানির জন্য যে পরিমাণ পশু রয়েছে তাতে চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১ হাজারের অধিক পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। তানোর উপজেলার আরো কয়েকজন খামারিরা বলেন,আমরা গরুকে কোনো প্রকারের রাসায়নিক খাদ্য দিচ্ছি না। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক দানাদার খাবার, ঘাস এসবই খাওয়ানো হচ্ছে। তানোর উপজেলার খামারি আবুল বাশার সুজন বলেন, আমাদের খামারে এই মুহূর্তে দেশি, শাহীওয়াল,ফিজিয়ান, ফিজিয়ান ক্রস জাতের গরু রয়েছে। আমার এখানে ৩০০ থেকে ১১০০ শো কেজি ওজনের পর্যন্ত গরু রয়েছে।
কলমা গ্রামের খামারি নুর আলম জানান, আমার খামারে ১‘শ এর অধিক বিক্রি উপযোগী গরু রয়েছে,যা আমি এবারের ঈদে বিক্রি করবো। ১লক্ষ থেকে ৫লক্ষ টাকা মূল্য পর্যন্ত গরু রয়েছে।শেষ মুহূর্তে বাজারে ভারতীয় গরু চলে আসলে আমাদের পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না, লোকসানে পড়তে হবে আমাদের। তাই সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন থাকবে ভারতীয় গরু যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার।খামারিরা আরো অভিযোগ করেন,এবার পশুর সঠিক দাম পেলে তাই আগামীতে গরুর খামার আরো বাড়বে।
কিন্তু গরুর দাম না পেলে অনেক খামারি নিঃস্ব হয়ে পড়বে। খামারীরা আরো জানান, এবার অনেক গ্রাম অঞ্চলে বড় ষাড় পালন করছেন ছোট-বড় খামারিরা। চড়া দামের খড়, খৈল, গমের ভাত, কাচা ঘাস, ভুষি ও নালী খাবার দিয়ে এসব গরু মোটা-তাজা করা হচ্ছে। তাদের এসব গরু ঈদ হাটে বিক্রি করে তারা লাভবান হবেন। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানান এবার ঈদকে সামনে রেখে পশু কোরবানি নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগও নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। এছাড়াও মনিটরিং করা হচ্ছে গরু হৃষ্টপুষ্ট করণের সাথে জড়িত খামারিদেরও।সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড, জুলফিকার বলেন, কোরবানির ঈদকে ঘিরে এবছর আমাদের পর্যাপ্ত পশু মজুদ রয়েছে। উদ্বৃত্তও থাকবে।আমাদের এবার প্রায় ৮১ টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম বিভিন্ন উপজেলার হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাকে চাহিদমত সেবা দিবে। ইন্ডিয়া হতে এবার যাতে গরু না আসতে পারে সে ব্যাপারে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। আমরা কড়াকড়িভাবে বিষয়টি মনিটরিং করছি। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথেও এবিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে।