টানা পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট।
আর এই সংকট মোকাবিলায় ইসরায়েলের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ। এরমধ্যে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দাবি করেছে তারা গাজাকে ‘ত্রাণের বন্যায় ভাসিয়ে’ দেওয়ার চেস্টা করছে।।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা সহায়তা দিয়ে গাজাকে ‘প্লাবিত’ করার চেষ্টা করছে। রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, উত্তর গাজায় খাদ্য সরবরাহের জন্য নতুন একটি স্থল পথ খোলার পর ইসরায়েল আরও সাহায্য কনভয়কে এই অঞ্চলে ঢুকতে দেবে।
জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি আগ্রাসনের অধীনে থাকা গাজা উপত্যকা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল এর আগে বলেছেন, গাজায় সাহায্য বিতরণ রোধ করতে স্থলপথগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া জাতিসংঘও বলেছে, ‘চলমান যুদ্ধ এবং ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ, সেইসাথে নিরাপত্তাহীনতা, ঘন ঘন সীমান্ত বন্ধ এবং প্রবেশের বাধা’ নিরাপদ ও দক্ষ উপায়ে সাহায্য কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার কাজকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল হাগারি ইঙ্গিত দেন, গাজায় সাহায্য পাঠানোর জন্য আরও রুট খোলা হতে পারে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মানবিক সহায়তা দিয়ে এই এলাকা (গাজা) প্লাবিত করার চেষ্টা করছি।’
আইডিএফ এর আগে জানিয়েছিল, গত মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ ইসরায়েলের কিবুতজ বেয়েরির কাছে গাজা সীমান্ত বেড়ার ৯৬ নম্বর গেট দিয়ে খাদ্য বহনকারী ছয়টি লরি প্রবেশ করেছে।
রিয়ার অ্যাডমিরাল হাগারি আরও বলেন, সহায়তাবাহী আরও কনভয় অন্যান্য প্রবেশপথ থেকে ঢুকতে শুরু করবে এবং এর পাশাপাশি আকাশ ও সমুদ্রপথেও সহায়তা সরবরাহ করা হবে। এছাড়া সাহায্য সুষ্ঠু ও দক্ষতার সাথে বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য আরও কিছু করা দরকার।
তিনি বলেন, এসব সহায়তা বিতরণ কোনও রুটিন মেনে হবে না, ইসরায়েল এসব সাহায্য হামাসের হাতে পড়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
এর আগে গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ বা ভূখণ্ডটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ দুর্ভিক্ষ থেকে এক ধাপ দূরে রয়েছে বলে জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে জানিয়েছিলেন। একইসঙ্গে তিনি সেসময় সতর্ক করে বলেন, কোনও ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া না হলে গাজায় ব্যাপক দুর্ভিক্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’ হয়ে উঠতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭২ হাজারের বেশি মানুষ।
ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
এছাড়া গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত দুই সপ্তাহে সেখানকার হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে অন্তত ২৭ জন মারা গেছে। অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় মৃতদের মধ্যে ২৩ জনই শিশু।
এমন অবস্থায় অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের একটি ত্রাণ কেন্দ্রে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার এক কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২২ জন।
যদিও হামলায় পাঁচজন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।