• ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
রাজশাহীতে কৃষককে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান: নগরীতে সুপারির ভেতরে ১৪শ পিস ইয়াবা উদ্ধার রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাজু, সম্পাদক অপু সাগর-রুনি হত্যার বিচারের বাধা কেটে গেছে: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আমরা নিষিদ্ধের রাজনীতি বিশ্বাস করি না: খায়রুল কবির যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সফর শেষে দেশে ফিরলেন সেনাপ্রধান জুলাই-আগস্টে নিহত পুলিশের সংখ্যা নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে ক্লাসে শৃঙ্খলাভঙ্গ: সারদায় প্রশিক্ষণরত ৫৯ এসআইকে শোকজ গোলটেবিল বৈঠক-রাজশাহী যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস কমায় উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকি: ওয়েবিনারে বক্তারা
নোটিশ
রাজশাহীতে আমরাই প্রথম পূর্ণঙ্গ ই-পেপারে। ভিজিট করুন epaper.rajshahisangbad.com

গোলটেবিল বৈঠক-রাজশাহী যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
সর্বশেষ: রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪

রাজশাহীতে ‘যক্ষ্মা চিকিৎসায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে শনাক্তের বাইরে থাকা  (মিচিং) যক্ষ্মা রোগীদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সমাজের এলিট শ্রেণির মানুষ, হতদরিদ্র মানুষ, দুর্গম চর এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, কারাগার, কারখানায় কাজ করেন এমন মানুষদের কাছে চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো যায় না। এক শ্রেণির মানুষ গোপন করেন আরেক শ্রেণির মানুষ চিকিৎসাসেবার বাইরে থাকেন, অথচ তারা অন্যদের মধ্যে অনবরত যক্ষ্মার জীবাণু ছড়িয়ে যাচ্ছেন। এই ক্ষেত্রে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনাতামূলক প্রচার এবং  প্রচারই শেষ কথা নয়, হতদরিদ্র মানুষের আয়-রোজগারের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাজশাহী নগরের একটি রেস্তোরাঁয় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরত চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রত্যেকেই বিষয়ের ওপরে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। পরে  তাদের বক্তব্যের ওপরে মুক্ত আলোচনা হয়। এতে উপস্থিত সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে এই কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
“যক্ষ্মা চিকিৎসায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠক স্টপটিবি পার্টনারশিপের সহযোগিতায় যৌথভাবে আয়োজন করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ও প্রথম আলো। যৌথভাবে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির এসিটিবির চীফ অফ পার্টি ডা . অং ক্য জাই মগ ও সিনিয়র রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর ডা. আদিল সিকদার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক আনোয়ারুল কবীর, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক জহিরুল হক, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) এর  রাজশাহী বিভাগীয় যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞ মো. সাইফুল ইসলাম,বারিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক সমীর মজুমদার, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মো. আব্দুস সালাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কাজী শুসমিন আফসানা, রাজশাহী তিলোত্তমার পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা খাদিজাতুল কোবরা, ব্র্যাকের রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম, ইবনে সিনা ট্রাস্টের রাজশাহী  করপোরেট শাখার কর্মকর্তা মাসুদ রানা। গণমাধ্যম প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সোনার দেশ প্রত্রিকার সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত ও দৈনিক রাজশাহীর সংবাদের সম্পাদক আহসান হাবীব অপু।  অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-বারিন্দ এর অধ্যাপক সমীর মজুমদার বলেন, বেসরকারি খাতে যারা যক্ষ্মা চিকিৎসার জন্য যায়, তাদের হিসাবটা পাওয়া যায় না। এটা না পাওয়া গেলে সঠিকভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা যায় না। তিনি প্রস্তাব করেন প্রাইভেট সেক্টরে ডট সেন্টার খোলা যায় তাহলে রোগী হয়রানির শিকার হয় না। তবে অনেকেই মেনে নিতে চায় না যে, তাদের যক্ষ্মা হয়েছে। তারা বলেন, যক্ষ্মা তো গরিবের রোগ। তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি এক পরিসংখ্যান থেকে বলেন, বিশ্বের ৩০টা দেশ যক্ষ্মা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছয় নম্বরে। তিনি আরেকটি বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন যে, বাংলাদেশ নি¤œ আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলে বিদেশি সাহায্য আর পাওয়া যাবে না। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসায় নিজেদের সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে।
তিলোত্তমা-রাজশাহীর পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ণ কর্মকর্তা ডা. খাদিজাতুল কোবরা বলেন,তারা সিটি করপোরেশনের ১০টি ওয়ার্ডে কাজ করেন। প্রয়োজনে বাসায় গিয়ে নমুনা নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।  রোগ নিশ্চিত হলে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। চিকিৎসা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা ইতিবাচকভাবে রোগীকে বুঝিয়ে তাদের কেন্দ্রে নিয়ে আসেন এবং চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।  নগরের ঘোষপাড়ার মোড়ে ব্র্যাক সেন্টার, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ডট সেন্টার, আইডিডিআরবি রয়েছে তাদের সহযোগিতায় এগুলো করা হয়। তিনি বলেন, তাদের স্বেচ্ছাসেবীরা দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে কাজ করেন।  এ ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত বা নি¤œমধ্যবিত্তের সহযোগিতা পেলেও এলিট শ্রেণির ক্ষেত্রে বাধা আসে। তারা বাসায় ঢোকার অনুমতি দেন না। এই ক্ষেত্রে তাদের যে ভূমিকাটি রয়েছে, প্রাইভেট সেক্টরের চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে সম্পর্কটা বাড়ানো যায়, দেখা সাক্ষাৎটা বেশি করা যায় তাহলে মিচিং কেসগুলো চিকিৎসার অধীনে আসবে। কারণ প্রাইভেট সেক্টরের চিকিৎসকদের রেফারেন্সটা কাজে লাগানো যাবে। এগুলো প্রতিবেদনের মধ্যে নিয়ে আসা যাবে।
ইবনে সিনার করপোরেট শাখার কর্মকর্তা মাসুদ রানা এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কাজী শুসমিন আফসানা বলেন, উন্নয়ন থিয়েটারের মাধ্যমে যক্ষ্মা বিষয়ে সচেতনতামূলক ছোট ছোট নাটক তৈরি করে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় দেখানো যেতে পারে। এনজিও গুলো এ ব্যাপারে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। যক্ষ্মার ভয়াবহতা বোঝাতে তিনি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, তার দাদা (পিতামহ) ২৭ বছর বয়সে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। শুধু তাই না, দাদাদের পাঁচ ভাই একই রোগে মারা গেছেন। এমনকি তার বাবাও আক্রান্ত হয়েছিলেন।
ব্র্যাকের রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক  মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, তারা দেশের ৫১টি জেলায় যক্ষ্মা নিয়ে সরাসরি করেন আর বাকি ১৩টি জেলায় অন্যদের সহযোগিতায় কাজ করেন। তিনি বলেন, ২০২২ সালের দেশে যক্ষ্মার ৩০ শতাংশ রোগী মিচিং  ছিল। যা ২০২৩ সালে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছেন। এরাই যদি জীবাণু ছড়িয়ে যেতে থাকে। ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তিনি বলেন, বারিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডট সেন্টার করার জন্য তারা চিঠি প্রস্তুত করেছেন। সেখানে তাদের শুধু একটা কক্ষের দরকার পড়বে। তিনি বলেন, তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে পোর্টেবল এক্সরে মেশিনে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষের এক্সরে করে যক্ষ্মা শনাক্ত করছেন। তিনি বলেন, তাদের প্রতিনিধিরা কোনো বেসরকারি হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ কথা বলার সুযোগ দিতে চান না। এ ব্যাপারে তারা সহযোগিতা কামনা করেন।
সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত শুধু সচেতনতা বাড়ানোকেই শেষ কথা না বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় রোজগারের বিষয়টিও আলোচনায় নিয়ে প্রস্তাব করেন।
সম্পাদক আহসান হাবীব যক্ষ্মা রোগীর লক্ষণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন। গণমাধ্যমে সব রকম সহযোগিতার বিষয়ে তিনি ভূমিকা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাপারটিও রয়েছে। তাদের সক্ষমতার বিষয়টিও দেখার আছে। এ জন্য ঢালাওভাবে তাদের ওপর নির্ভর না করে তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। বক্তারা রাত আটটা পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ এবং বিকেলেও ওষুধ সরবরাহের প্রস্তাব করেন। যাতে দরিদ্রদের কাজের সময়টা নষ্ট না হয়। বক্তারা হতদরিদ্র মানুষ, দুর্গম চর এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, কারাগার, কারখানায় কাজ করেন এমন মানুষদের কাছে  সচেতনতা ও চিকিৎসা সেবা পৌঁছানোর মাধ্যমে  মিচিং কেস শনাক্ত করে যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।


আরো খবর