• ঢাকা, বাংলাদেশ সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য হলেন সাংবাদিক মঈন উদ্দীন বাড়ির কাছেই মিলছে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ  বিভাগীয় কমিশনারের সাথে রাজশাহী প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সিন্ডিকেট ভাঙতে নগরীতে শিক্ষার্থীদের ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি আরএমপি কমিশনারের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় ব্র্যাকের কমিউনিটিভিত্তিক পর্যটন প্রকল্প ‘অতিথি’র যাত্রা শুরু নগর বিএনপির উদ্যোগে ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন রাজশাহীতে পুকুর দখলের চেষ্টার অভিযোগ, নিরাপত্তার দাবি চাষির রাজশাহীতে কৃষককে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান: নগরীতে সুপারির ভেতরে ১৪শ পিস ইয়াবা উদ্ধার
নোটিশ
রাজশাহীতে আমরাই প্রথম পূর্ণঙ্গ ই-পেপারে। ভিজিট করুন epaper.rajshahisangbad.com

চাপাইনবাবগঞ্জে আম বাণিজ্যে ক্ষতি শত কোটি টাকা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
সর্বশেষ: শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলন-সংঘাত ও পরে দেশজুড়ে কারফিউয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আম পচে নষ্ট হওয়া ও স্থানীয় বাজারে কম দামে বিক্রির কারণে চাষী-ব্যবসায়ীরা এ ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছে কৃষি অ্যাসোসিয়েশন। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন বলেও মনে করে সংগঠনটি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আমের মধ্যম ও নাবী জাতের যখন ভর মৌসুম, তখই ছাত্র আন্দোলনের নামে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে সংঘাত। এতে ১০ দিন দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে আম পাঠাতে পারেন নি চাষী ও ব্যবসায়ীরা। প্রচুর আম পেকে নষ্ট হয়েছে বাগানে। ক্ষতি এড়াতে চাষীরা গাছ থেকে আম পাড়লেও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হয়েছে কম দামে।

সদর উপজেলার যৌবনকোবন এলাকার আম চাষী ও উদ্যোক্তা আসাদুল আল মাহমুদ বিপ্লব জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সারাদেশেই এখন নাবী জাতের আম জনপ্রিয়। অর্থাৎ মৌসুমের শেষদিকে যে আমগুলো বাজারে আসে সেগুলো বেশি দামে বিক্রি করা হয়। নাবী জাতের আম যখন বাজারে আসা শুরু হয়েছে তখনই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় এবং পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সরকার কারফিউ জারি করে। তিনি বলেন, এটা আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে শেষ মুহূর্তে এসে আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি। কারণ এবার মৌসুমের শুরু থেকেই আমের দাম ঊর্ধমুখী ছিল এবং চাষী-ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখছিলেন।

সদর উপজেলার নয়ানগর এলাকার আরেক কৃষি উদ্যোক্তা গোলাম মোস্তফা সুমন জানান- ফজলি, বারি-৪, আম্রপালি জাতের আম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। এ সব জাত মধ্যম ও নাবী হিসেবে পরিচিত। জেলায় উৎপাদিত এ তিন জাতের আমের বেশিরভাগই ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে পাঠাতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। কাজেই তাদের কম দামে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ভরা মৌসুমের আমের দাম গড়ে ৭৫ টাকা কেজি হওয়ার কথা কিন্তু স্থানীয় বাজারে আম ৩০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করতে হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে চাষী-ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহীর চারঘাট এলাকার আম ব্যবসায়ী সুবোধ কুমার চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে প্রায় ৪২ লাখ টাকায় আমের বাগান কিনেছিলেন। ওই বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে এখন পর্যন্ত পেয়েছেন ৩১ লাখ টাকা। অবশিষ্ট আম থেকে আর এক থেকে সোয়া লাখ টাকা আয় হবে বলে ধারণা তার। সব মিলিয়ে তার ক্ষতির পরিমাণ ১০ লাখ টাকার মতো। সুবোধ কুমার বলেন, লাভের আশায় অতদূর থেকে এসেছি ব্যবসা করতে। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা এতগুলো টাকা লস করে গেলাম। আন্দোলন না হলে এ লস হতো না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক জানান, জেলা থেকে প্রতিদিন ৩ শতাধিক ট্রাকে সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিক টন আম যায় দেশের অভ্যন্তরীন বাজারে। এই আমের মূল্য গড়ে ২৫ কোটি টাকা। আন্দোলনের ১০ দিনে ২৫০ কোটি টাকার আম বেচা-কেনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছু আম পচে নষ্ট হওয়ায় এবং কিছু আম কম দামে বিক্রি করায় অঙ্ক গিয়ে দাঁড়ায় ১৫০ কোটি টাকার ঘরে। কাজেই ওই ১০ দিনে চাষী ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ১০০ কোটি টাকা। তিনি বলেন, আমরা চাষীরা বেশ ভালোই ক্ষতিগ্রস্ত। ভর মৌসুমে আমরা বিক্রি করতে পারিনি। অনেক আম চাষীর শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দেয়ার মতো নগদ টাকা ছিল না। শ্রমিকদের পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া হয়েছে আম। এমন পরিস্থিতি আগে কখনো হয়নি। মুনজের আলম মানিক বলেন, আমাদের কৃষি নিয়ে অনেক কথা হয় কিন্তু ক্ষতি যা হবে তা কৃষকদেরই। কৃষকদের ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, এটা কোনভাবেই আলোচনা হয় না।

আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে না পারলেও কৃষি বিভাগ জানিয়েছে এখনো গাছে রয়েছে মোট উৎপাদনের ৪০ শতাংশ আম। আন্দোলন ও কাউফিউয়ের কারণে এই বিপুল পরিমাণ আম নিয়ে চাষী ও ব্যবসায়ীরা বিপাকে রয়েছেন বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার। তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে চারটি জনপ্রিয় নাবি জাত রয়েছে। এ জাতগুলোর উপর নির্ভর করেই ভাল ব্যবসা করেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সম্প্রতি যে সমস্যা হয়েছিল সে কারণে সব জায়গায় আমের চাহিদা কমে যায়। ওই সময় যে আম পেড়েছিল চাষীরা তা কাঙ্খিত দামে বিক্রি করতে পারেন নি। এ জন্য তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আমের দাম আবারো বেড়ে যাবে এবং চাষী ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি কিছু পুষিয়ে যাবে, যুক্ত করেন ওই কর্মকর্তা।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জামির আম বাগানে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে।


আরো খবর