• ঢাকা, বাংলাদেশ শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২১ পূর্বাহ্ন
নোটিশ
রাজশাহীতে আমরাই প্রথম পূর্ণঙ্গ ই-পেপারে। ভিজিট করুন epaper.rajshahisangbad.com

চুরির ঘটনায় মামলা নেয় না পুলিশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
সর্বশেষ: সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নয়াগোলার এক রাতেই চার বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। গত ২৮ জুন সংঘটিত ওই চুরির ঘটনায় আলাদা আলাদা ‘অভিযোগ’ দেয়া হয় থানায়। কিন্তু চারটি অভিযোগের একটিও মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ। উল্টো অভিযোগকারীদের সঙ্গেই দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

শুধু নয়াগোলার ঘটনাই নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় চুরির ঘটনায় মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। অনুসন্ধানে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি চুরি ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ার তথ্য পেয়েছে প্রতিবেদক। গত রোববার ভোরে শহরের পাঠানপাড়ায় গৃহবধূকে কুপিয়ে জখম করে স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা চুরির ঘটনাও মামলা নিতে গড়িমসির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগিরা বলছেন, ঘটনার পর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয় না। একটি সাধারণ অভিযোগ দিতে বলে। সেই অভিযোগ একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু মাসের পর মাস ওই অভিযোগের আর তদন্ত হয় না। শেষ পর্যন্ত কোন তদন্ত ছাড়াই তামাদি হয়ে যায় অভিযোগটি।

২৮ জুন রাতে নয়াগোলার যে চারটি বাড়িতে চুরি হয় তাদের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদ আলীর বাড়ি। তিনিও ঘটনার পর অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ৮ দিন পর তার অভিযোগটি তদন্ত ছাড়াই পড়ে আছে। রোববার রাতে মোহাম্মদ আলী বলেন, তার বাড়ি থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা চুরি হয়। ঘটনার পর তিনি থানায় গেছিলেন মামলা দায়ের করতে। কিন্তু ওসি তাকে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন।

ওসির পরামর্শমতে লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনো কোন ব্যবস্থা নেয় নি পুলিশ। তিনি জানান, তার অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সদর থানার এসআই শরিফুল ইসলামকে। পরে একাধিকবার তাকে মুঠোফোনে কল করেছিলেন মোহাম্মদ আলী। কিন্তু ওই এসআই সাড়া দেন নি। এমনকি তদন্তের জন্যও আসেন নি। তার অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ডও হয়নি। রোববার রাতে এসআই শরিফুল বলেন, আমি তদন্ত করে এসেছি। ঘটনার সত্যতা আছে বলে মনে হয়েছে। কিন্তু এরপরও কেন মামলা হল না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আমার কাজটুকু করেছি। মামলা হবে কি-না সেটা ওসি স্যার দেখবেন।
নয়গোলার আরো তিনটি চুরির অভিযোগেরও কোন সুরাহা হয়নি। ওই অভিযোগ তিনটি দিয়েছিলেন আবু সুফিয়ান, আবু রায়হান ও জাহিদ হোসেন।

প্রায় ৬ মাস আগে সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের তাহেরপুর-বালুগ্রাম থেকে আব্দুল আহাদ নামে এক ব্যক্তির একটি গরু চুরি হয়। গত ১৩ জানুয়ারি আব্দুল আহাদ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। তার অভিযোগেরও শেষ পর্যন্ত মামলা হয়নি। রোববার রাতে আব্দুল আহাদ বলেন, ঘটনার পর পুলিশের এক কর্মকর্তা আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর আর অগ্রগতি নেই। আমার অভিযোগটি কি হয়েছে জানিনা। তিনি বলেন, অভিযোগটি মামলা হিসেবে নিলে হয়তো কোন একটা সুরাহা হতো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনা ধামাচাপা দিতেই পুলিশ চুরির মামলা নিতে চায় না। কারণ চুরির মামলা নিলে সেটি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির রেকর্ডে নথিভূক্ত হয়। মাসিক আইনশৃঙ্খলা প্রতিবেদনেও উল্লেখ করতে হয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে হয়। তাই কৌশলে পুলিশ চুরির ঘটনা মামলা হিসেবে নিতে চায় না। অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্তের নামে টালবাহানা করে।

চুরির ঘটনায় মামলা না নেয়ার ব্যাপারে জানতে রাত ৮ টায় সদর থানার ওসি মো. মেহেদী হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন বাসায় আছি। থানায় না গিয়ে কিছু বলতে পারছি না।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. নূরুজ্জামান জানান, চুরির শিকার ব্যক্তি চাইলে সরাসরি মামলা দায়ের করতে পারবেন। কিন্তু কেন চুরির ঘটনায় মামলা না নিয়ে শুধু অভিযোগ নেয়া হয় তা জানেন না তিনি। ওসির কাছে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।


আরো খবর