যেসব পর্যটক সাফারি (বনে-জঙ্গলে ভ্রমণ) করতে পছন্দ করেন, বন্যপ্রাণীদের কার্যকলাপ, জীবনযাপন কাছ থেকে দেখা তাদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। বিভিন্ন সময় এমন বিরল কিছু মুহূর্তের দেখা পেয়েও যান তারা।
কিন্তু ভারতের উত্তরপ্রদেশের পিলভিট টাইগার রিজার্ভ ফরেস্টে যা ঘটেছে, তাকে বিরলের মধ্যেও বিরলতম বলা চলে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারি প্রশাসনের (আইএএস) সাবেক কর্মকর্তা ড. রবি গুপ্ত সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পিলভিট টাইগার রিজার্ভ ফরেস্টে বাঘিনী এবং ভালুকের মুখোমুখি অবস্থানের একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যা ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।
৪৯ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের সেই ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, জঙ্গলের একটি কাঁচা সড়কের এক মাথায় দাঁড়িয়ে আছে একটি জিপগাড়ি এবং আরেক মাথায় রাজকীয় কেতায় বসে আছে বাঘিনীটি। হঠাৎ একটি ভাল্লুক পাশের ঝোপে থেকে বেরিয়ে গাড়ি এবং বাঘিনীর মাঝামাঝি এসে সড়ক পার হয়ে পাশের ঘাসঝোপে ঢুকে পড়ে। ভালুকটির একপাশে দাঁড়িয়েছিল জিপগাড়ি এবং আরেক পাশে বসে ছিল বাঘিনীটি। উভয়ের অবস্থান থেকে বেশ দূরে ছিল এবং সড়ক পেরোনোর সময় ভালুকটিও ডানে-বামে কোনো দিকে তাকায়নি।
ভালুকটি সড়ক পেরোনোর পর বাঘিনী উঠে সামনে এগিয়ে যায় এবং যে জায়গায় ভালুকটি সড়ক পার হয়েছিল, সেখানে গিয়ে ঝোপের ওপর দিয়ে সতর্কভাবে ভালুকটির গতিবিধি দেখতে থাকে। বস্তুত সড়কে ভালুকটি দেখা দেওয়ার পর থেকেই সেটির গতিবিধির ওপর সতর্ক নজর রাখছিল বাঘিনীটি।
ভালুকটি চলে যাওয়ার পর সড়কে যখন বাঘটি তার গমনপথের দিকে তাকিয়েছিল, ঠিক তখন আচমকা ঝোপ থেকে বেরিয়ে আসে ভালুকটি, তেড়ে যায় বাঘিনীর দিকে। বাঘিনীটি যদি তার এই তেড়ে আসার প্রতিক্রিয়া আক্রমণাত্মক হতো, তাহলে নিশ্চিত সংঘাত বাঁধতো জঙ্গলের দুই শক্তিমান মাংসাশী বন্যপ্রাণীর মধ্যে; কিন্তু বাঘিনী শান্ত থাকায় তেড়ে এলেও আর আক্রমণ না করে আস্তে আস্তে মুখ ঘুরিয়ে পিছু হটে যায় ভালুকটি।
এক্সে পোস্ট হওয়া ভিডিওটির কমেন্ট বক্সে এক নেটিজেন লিখেছেন, ‘মুখোমুখী হওয়া সত্ত্বেও কেউ কাউকে আক্রমণ করল না— এমন দৃশ্য দেখা সবসময়ই মনোমুগ্ধকর।’
আরেক নেটিজেন লিখেছেন, ‘ভালুকের ঘ্রাণশক্তি দুর্দান্ত, অন্যদিকে বাঘের দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি অতুলনীয়। জঙ্গলে যে অবস্থায় এই প্রাণী দু’টি মুখোমুখী হয়েছে, তাতে সংঘাত বাঁধা তেমন অস্বাভাবিক ছিল না; কিন্তু তারপরও তারা যে সংযমের পরিচয় দিল— তার কারণ সম্ভবত উভয়ই মা এবং তাদের সন্তান রয়েছে। সন্তানদের কথা বিবেচনা করেই তারা লড়াইয়ে নামেনি।’