রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য এক শিক্ষার্থীকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে চাঁদা দাবির ঘটনার জট খুলতে শুরু করেছে। একে একে বেরিয়ে আসছে সেদিনের ঘটনার মুল তথ্য। যদিও ওই ঘটনায় পুলিশের পক্ষে তদন্ত চলছে। একই সাথে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া সেই শিক্ষার্থীর বক্তব্যে বেরিয়ে আসছে সেদিনের ঘটনার সাথে কারা জড়িত। দিন গড়ানোর সাথে সাথে ওই ঘটনার সাথে কোন কোন পুলিশ সদস্যও জড়িত তা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। এছাড়াও গত ৪ মের ঘটনায় আলোচিত হচ্ছে গোদাগাড়ী থানার এক ঝাড়ুদের নাম। তিনি ঝাড়ুদার হয়েও পুলিশের সাথে অভিযানে গিয়ে আসামীদের হ্যান্ডকাপ পরানো, পুলিশের অন্যতম সদস্য হিসাবে নিজেকে পরিচয় দেয়া, সাধারণ লোকজনদের উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়, মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানোসহ তার নানা অপকর্ম প্রকাশ হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোদাগাড়ীর থানার ওই ঝাড়ুদারের নাম এনামুল হক। তিনি তানোর থানার নুড়িয়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে। গত ৪ মে রাতের ঘটনায় চার পুলিশ সদস্যদের সাথে এনামুলও ছিলো। ভুক্তভোগি শিক্ষার্থী তার ছবি দেখে এনামুলকে সনাক্ত করেছে।
জানা গেছে, গত ৪ মে (শনিবার) রাতে গোদাগাড়ীর গোগ্রাম স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী সোহানকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে পুলিশ ও থানার ঝাড়ুদার এনামুল। সেই শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের দাবিতে স্থানীয় জনতা প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এক এএসআইকে আটকে রাখে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় জনতাকে এলোপাথাড়িভাবে মারপিটও করে। যদিও পরে শিক্ষার্থী সোহানকে উদ্ধার করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এঘটনায় পরের দিন প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ৪ জন ও গোদাগাড়ী থানার ৬ জন পুলিশকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
ঘটনাটি নিয়ে পুলিশের মধ্যে তোলপাড়গ শুরু হয়। ঘটনাটি চুলচেরা বিশ্লেষন করে তদন্ত প্রতিবেদন চায় পুলিশের উর্ধ্বতন মহল। তবে সন্দেহের তালিকায় চলে আসে থানার ঝাড়ুদার এনামুলের নাম। ঘটনাটি তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের টিম শিক্ষার্থী সোহানের সাথে যোগাযোগ করেন। একই সাথে সাংবাদিকরাও তার সাথে কথা বলেন। এনামুলের ছবি দেখে তার উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষার্থী সোহান। একই সাথে সনাক্ত হয় সেদিনের ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যেদেরও। ঘটনার রাতে শিক্ষার্থী সোহান ৪ জন পুলিশ উপস্থিত থাকার কথা জানায়।
ঝাড়ুদার এনামুলের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে সুইপার হিসেবে থানায় চাকরি পান তিনি। এরপর রাজশাহী পুলিশ লাইনে কাজ শুরু করেন এনামুল। প্রায় ৪ বছর পুলিশ লাইনে কাজ করার পর তাকে গোদাগাড়ী মডেল থানায় পাঠানো হয়। দেড় বছর আগে তিনি গোদাগাড়ী মডেল থানায় যোগদান করেন। মাদক অধ্যুসিত এলাকায় যোগদানের পর থেকে তিনি ঝাড়ুদার হয়েও পুলিশ পরিচয় দিতেন ও যোগ দিতেন পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে।
এব্যাপারে গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল মতিনের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীকে উঠিয়ে নিয়ে দুই লাখ টাকা দাবির ঘটনায় তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঝাড়ুদার এনামুলের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে যদি জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।