নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহীতে শুরু হয়েছে দুই দিনের যুব জলবায়ু সম্মেলন। সম্মেলনের প্রথম দিন আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়বেই। যত দিন যাবে, সংকট ততই বাড়বে। তাই এখন থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে পৃথিবীব্যাপী অসংখ্য মানুষ এর শিকার হবে।
বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) ও বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরাম জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে এ আয়োজন করে। ‘ক্ষতিপূরণের অঙ্গীকার, জলবায়ু সুবিচার’ শীর্ষক এই সম্মেলনে বিভিন্ন এলাকার যুবরা অংশগ্রহণ করেন। একাডেমীর বাইরে বরেন্দ্র অঞ্চল, নদী সমতল অঞ্চল, হাওর অঞ্চল ও উপকূল অঞ্চলের শস্যের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রাজশাহী মহানগরের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, পৃথিবীব্যাপী আজ জলবায়ু পরিবর্তনের নানা ক্ষতি হচ্ছে। যুবরা সেই সমস্ত ক্ষতি তুলে ধরতে পারে। এতে আগ্রহী করে তুলতে এ ধরনের যুব জলবায়ু সম্মেলন জরুরি।
পরে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে কার্বন উদগীরনের ফলে সব দেশই ক্ষতির মুখে পড়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে। এটি এখন থেমে যাওয়ারও সম্ভাবনা কম। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে হিমালয়ের বরফ গলবে, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়বে। একইসঙ্গে উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে। কৃষিজমি লবণাক্ত হয়ে উঠবে। বহু মানুষ কাজ হারাবে। এই সমস্ত মানুষগুলোকে কীভাবে নতুন কাজ দেওয়া যায়, তাদের পুনর্বাসন করা যায়, সে বিষয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’
নদী ও পরিবেশ গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘এখন যে ক্ষতি আমরা দেখতে পাচ্ছি, তার প্রেক্ষাপট অনেক আগেই তৈরি হয়েছে। এখন যে ক্ষতি হচ্ছে, তারও চিত্র আমরা অনেক বছর পরে দেখতে পারব। পৃথিবীকে আমরা বিশৃঙ্খলভাবে ব্যবহার করছি বলেই এটি হচ্ছে। পৃথিবীর এই ক্ষতি অল্প কিছু দেশ করলেও তার শিকার হচ্ছে সব দেশ। তাই যারা ক্ষতি করছে, তাদের কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। এই আন্দোলনকে বেগবান করতে যুব সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে।’
সম্মেলনে আলোচনায় আরও অংশ নেন বেসরকারি নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য উপাচার্য ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অভিজিৎ রায় ও কাজী রবিউল আলম; প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী রবিউল আলম, বরেন্দ্র পরিবেশের সভাপতি মোহা. জাকির হোসেন প্রমুখ।
প্রথম দিনের আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন প্রকৃতি গবেষক পাভেল পার্থ। সেখানে বারসিকের গবেষক শহিদুল ইসলাম বরেন্দ্র অঞ্চল নিয়ে একটি গবেষণাপত্র তুলে ধরেন। সভাপতিত্ব করেন বরেন্দ্র অঞ্চল যুব সংগঠন ফোরামের আহ্বায়ক শাইখ তাসনীম জামাল।