• ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০৭:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
চলে গেলেন বরেন্দ্রের প্রাণ পুরুষ ড. আসাদুজ্জামান বালু ও মাটি দস্যুতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বাঘায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যু: মেয়ের পা বিচ্ছিন্ন চাঁপাইনবাগঞ্জে খাস জায়গায় দোকানঘর নির্মাণের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ রাকসু নির্বাচন ও শতভাগ আবাসনের দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ আ’লীগের স্থগিতাদেশ বাতিল বা প্রত্যাহার না হলে নির্বাচনের সুযোগ নেই: ইসি মাছউদ ডিবি’র অভিযানে ১৫ কেজি গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার রাজশাহীতে ১৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় হবে দুদকের কার্যালয় তানোরে তিন সপ্তাহ নিরুদ্দেশ যুবকের বস্তাবস্তি মরদেহ উদ্ধার ফারাক্কার প্রভাব: পদ্মায় ঢেউ নেই, আছে ধু ধু বালুচর
নোটিশ
রাজশাহীতে আমরাই প্রথম পূর্ণঙ্গ ই-পেপারে। ভিজিট করুন epaper.rajshahisangbad.com

টুপি সেলাইয়ে স্বাবলম্বী নিয়ামতপুরের নারীরা

এস কে সরকার, নিয়ামতপুর
সর্বশেষ: বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪

আজিদা বেগম বেড়াতে  গিয়েছিলেন বোনের বাড়ি মহাদেবপুর উপজেলার বাগডোব গ্রামে। গিয়ে দেখেন সবাই সুই-সুতা দিয়ে টুপি সেলাইয়ের কাজে করছে। তিনিও কাজটা শিখলেন।

 

আসার সময় কয়েকটা টুপি সঙ্গে করে নিয়ে আসলেন। তার দেখাদেখি  পাড়া প্রতিবেশীরাও কাজটা শিখলো। এইভাবে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার বাদমাঞ্চলি গ্রামে গড়ে উঠলো টুপি সেলাইয়ের কাজ। সেটা আজ থেকে ২২ বছর আগের কথা।  বাদমাঞ্চলি থেকে সেই  সুই-সুতার ফোড় ছড়িয়ে পড়েছে সারা উপজেলায়। নকশা করা এসব কাপড়ের তৈরি টুপি পাঠানো হয় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। টুপি সেলাইয়ের কাজ করে প্রত্যন্ত গ্রামের নারীরাও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, নিয়ামতপুর উপজেলার প্রায় সব গ্রামের নারীরা এই টুপি সেলাই করলেও হাজীনগর, চন্দননগর, ভাবিচা আর নিয়ামতপুর সদর ইউনিয়নের  নারীরা এই কাজের সঙ্গে বেশি  যুক্ত। সারা বছর টুপি সেলাইয়ের টুকটাক কাজ হলেও রমজান মাস এবং দুই ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়ে যায় স্থানীয় কারিগর ও ব্যবসায়ীদের। মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে এসব টুপির চাহিদাও ব্যাপক।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্দিষ্ট নকশার ওপর নিয়ামতপুরের নারীরা নানা রঙের সুতায় যে টুপি বুনে চলেছেন, তা ওমানের আঞ্চলিক ভাষায়  ” কুম্মা”  নামে পরিচিত। হাতে তৈরি এসব টুপির প্রধান বাজারও ওমান। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত ও কাতার এবং আফ্রিকা মহাদেশের দেশ তানজানিয়া ও মরক্কোর বাজারেও রপ্তানি হয় এসব টুপি।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক থান কাপড় থেকে প্রকারভেদে ৯০ থেকে ১০০টি টুপি তৈরি হয়। কাপড়ের থান থেকে টুপি মাপমতো কাটার পর মেশিনে প্রাথমিক সেলাইয়ের কাজ করা হয়। এরপর ওই কাপড়ে ট্রেসিং পেপার, তেল ও ব্লুর (নীল) সাহায্যে বিভিন্ন প্রিন্ট (নকশা) করা হয়। সেই প্রিন্ট করা টুপি গ্রামে গ্রামে নারীদের পৌঁছে  দেয়া হয়।

ব্যবসায়ী ও কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, বিশেষ ধরনের এ টুপিতে মূলত চেইন, দেওয়ান, বোতাম, গুটি দানা ও মাছের কাঁটা নামের ছয় ধরনের নকশা হয়ে থাকে। প্রতিটি টুপিতে থাকে আলাদা আলাদা নকশা কারিগরদের পারিশ্রমিকের তারতম্য হয় কাজের মান ও গুণের ওপর।

১০ বছর ধরে টুপির ব্যবসা করছেন মহাদেবপুর উপজেলার কামরুজ্জামান বাসার। তিনি জানান,
নিয়ামতপুরের ১১ টি গ্রামে তার ১১ জন এজেন্ট রয়েছেন। সুই-সুতায় নকশা তোলার কাজ শেষে টুপির কাপড়গুলো নিয়ে এসে বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। প্রতিটি টুপি নকশা ও কাজের মানভেদে  ৪০০ থেকে ২ হাজার টাকা দামে ফেনীর ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।

গত কয়েকদিনে  উপজেলার পাঁচটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে  নারীরা একসঙ্গে বসে টুপি সেলাই করছেন।
কথা হয় বাদমাঞ্চলি গ্রামের গৃহবধূ রেহেনা বেগমের সঙ্গে। বললেন, তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি (এজেন্ট ) হিসেবে কাজ করেন। নিজেও টুপি সেলাই করেন। ব্যবসায়ীরা তার কাছে টুপি দিয়ে যায়। তিনি পাড়া প্রতিবেশীসহ আশেপাশের কয়েকটা গ্রামে টুপি পাঠান। টুপিতে সেলাইয়ের কাজ শেষ হলে  তারা তার কাছে টুপি জমা দিয়ে টাকা নিয়ে যায়।

তিনি আরও জানান,  নিয়ামতপুরে  গুটি বা দানা সেলাইয়ের টুপির কাজ বেশি হয় । একেকটি টুপির নকশা করতে ১০-১৫ দিন লাগে। মজুরি পাওয়া যায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

তামান্না বেগম বলেন, সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে টুপিতে নকশা তোলার কাজ করে মাসে দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা আয় করেন তিনি।

ডিমা গ্রামের গৃহবধূ রেনুকা বেগম বলেন, গ্রামের নারীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী  হওয়ায় টুপি সেলাইয়ে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে মজুরিটা আরেকটু বেশি হলে আরও বেশি আয় হতো তাঁদের।

নিয়ামতপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমিনা খাতুন (অতিরিক্ত দায়িত্ব )  বলেন, গ্রামের নারীরা গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি টুপি সেলাই করে বাড়তি আয় করছে। তাছাড়া টুপির কাজের মাধ্যমে নারীরা সংসারে কিছুটা হলেও আর্থিক সাহায্য করতে পারছেন। প্রত্যন্ত গ্রামে এটা অনেক বড় ব্যাপার।


আরো খবর