জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসকে ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার দিয়েছে বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেটি ঠিক নয় বলে দাবি করেছে ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন।
বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ সরকারের একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যা অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থা এবং অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে উন্নয়ন কার্যক্রমের সমন্বয় করে।
সংস্থাটি বলছে, ড. ইউনূসের পুরস্কারের বিষয়টি প্যারিসের ইউনেস্কো সদরদপ্তর একেবারেই অবহিত নয়। ইউনেস্কোর পুরস্কার নিয়ে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস পরিকল্পিত মিথ্যাচার ও প্রতারণা করেছেন। তাই ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ইউনূস সেন্টারের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার ব্যাখ্যা চাইবে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন।
বুধবার সন্ধ্যায় ইউনেস্কো কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল জুবাইদা মান্নান সই করার একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ঢাকার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এবং ইউনূস সেন্টারের অফিসিয়াল ওয়েব পেজে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের (বিএনসিইউ) দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
ইউনূস সেন্টারের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে যে সংবাদ ছাপা হয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৬ মার্চ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ১১তম গ্লোবাল বাকু ফোরামে ড. ইউনূসকে ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
যদিও ইউনেস্কো ঢাকা অফিস জানিয়েছে, প্যারিসের ইউনেস্কো সদরদপ্তর এ বিষয়ে একেবারেই অবহিত নয়।
এতে আরও বলা হয়, ‘১১তম বাকু ফোরাম যেখানে এ সম্মাননা দেওয়ার সংবাদ প্রচার হয়েছে, সেখানে ইউনেস্কোর কোনো অফিসিয়াল প্রতিনিধিত্বই ছিল না। অধিকন্তু ইউনূস সেন্টার কর্তৃক দাবি করা সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননাও নয়। ড. ইউনূসকে ‘ট্রি অব পিস’ নামক একটি ভাস্কর্য স্মারক/সম্মাননা প্রদান করেন ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পী মিস হেদভা সের। মিজ হেদভা নিজে নিশ্চিত করেছেন যে, ড. ইউনূসকে ‘ট্রি অব পিস’ প্রদানে ইউনেস্কোর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।’
‘সেহেতু এই পুরস্কারের বিষয়টি প্রতারণামূলক এবং পরিকল্পিত মিথ্যাচার। তাই তাদের (ড. ইউনূস ও ইউনূস সেন্টার) বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।’
‘নিজামি গজনবী ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের আমন্ত্রণে ইসরায়েলি ভাস্কর্যশিল্পী মিস হেদভা সের ড. ইউনূসকে এটি প্রদান করে। মিস হেদভা সের ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক কূটনীতিবিষয়ক গুইউইল অ্যাম্বাসেডর। কিন্তু ইউনেস্কোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি নন এবং ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার/সম্মাননা দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না।’
‘সুতরাং উল্লিখিত বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন ড. ইউনূস পরিচালিত ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতারণামূলক। বাংলাদেশ ইউনেস্কোর অন্যতম সক্রিয় সদস্যরাষ্ট্র। ভবিষ্যতে ইউনেস্কোর মতো জাতিসংঘের এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং সুখ্যাতিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নাম অপব্যবহারের বিষয়ে ড. ইউনূস এবং ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করা হলো। একই সঙ্গে বিষয়টি যেহেতু প্রতারণামূলক এবং পরিকল্পিত মিথ্যাচার, সেহেতু তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।’
বিবৃতিতে একেবারে নিচের অংশে সম্প্রতি শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ড. ইউনূসের কারাদণ্ডের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। তাকে কোনো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার বা সম্মাননা দেওয়া সমীচীন নয় বলেও এতে বলা হয়।
সেখানে আরও বলা হয়েছে, ‘গত ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের আদালত ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের আরও তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে। ড. ইউনূস এবং তার সহযোগীরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন, যেটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। এছাড়া আয়কর আইন লঙ্ঘনের জন্য তার ব্যক্তিগত আয়কর দাবি আদালতে বিচারাধীন। সুতরাং তিনি যতদিন আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমাণিত নন, ততদিন তাকে কোনো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার বা সম্মাননা প্রদান সমীচীন নয়।’