দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ আর্জেন্টিনায় মশা বাহিত প্রাণঘাতী রোগ ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আর্জেন্টিনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪১৯ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে সব বয়সী নারী-পুরুষ রয়েছেন। ইতোমধ্যে অনেকের মৃত্যুও ঘটেছে। মৃতদের অধিকংশেরই বয়স ৭৫ থেকে ৮০ বছর।
কতজনের মৃত্যু হয়েছে— সেই সংখ্যা প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে প্রদেশিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়গুলো থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আর্জেন্টিনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩৫ লাখ মানুষ এবং তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১ হাজার জনের।
এদিকে একদিকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, অন্যদিকে ডলারের মজুত তলানিতে ঠেকে যাওয়ায় ব্যাপক মূল্যস্ফীতিতে টালমাটাল আর্জেন্টিনায় ডেঙ্গুর ওষুধ দুর্লভ হয়ে ওঠায় ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন সাধারণ জনগণ। এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, খোদ রাজধানী বুয়েন্স এইরেসের অধিকাংশ ফার্মেসি-ওষুধের দোকানে ‘ডেঙ্গুর ওষুধ নেই’- নোটিশ ঝুলছে।
হাতে গোনা অল্প কয়েকটি ওষুধের দোকানে এবং অনলাইনে যদিও ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে, তবে তার দাম সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ফলে অধিকাংশ মানুষের সামনে বিনা চিকিৎসায় ডেঙ্গুতে ভোগা ব্যতীত আর কোনো বিকল্প থাকছে না।
আর্জেন্টিনার সরকার অবশ্য শিগগিরই এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী মারিও রুশো বেতার সংবাদমাধ্যম রেডিও কন্টিনেন্টালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সাপ্লাই চেইনে কিছু সমস্যা থাকায় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এটি সাময়িক, শিগগিরই সমাধান করা হবে।’
তবে আর্জেন্টিনার ওষুধ কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, কাঁচামাল সংকটের কারণে তারা ওষুধ তৈরি করতে পারছেন না। এই সংকট সমাধানে আরও কয়েক মাস লাগবে বলে ধারণা তাদের।
আমেরিকা মহাদেশভুক্ত দেশগুলোর স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত আন্তঃসরকার সংস্থা প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশনের (পাহো) তথ্য অনুসারে, চলতি ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে যত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, শতকরা হিসেবে তাদের হার গত বছর ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসের তুলনায় অন্তত ৩ গুণ বেশি।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি হয়েছে মহাদেশটির তিনটি দেশে— ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং প্যারাগুয়ে। পাহোর তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চ— তিন মাসে দক্ষিণ আমেরিকায় যত রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ৯৮ শতাংশই এ তিন দেশের।