সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলি বিমান হামলার কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে তেহরান। হামলায় ইরানের সামরিক বাহিনীর সাত কমান্ডারের প্রাণহানির ঘটনার একদিন পর এই হুমকি দিয়েছে ইরান।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, দামেস্কে কনস্যুলেটে সন্দেহজনক ইসরায়েলি বিমান হামলার প্রতিশোধ নেবে ইরান।
তিনি বলেছেন, ‘‘প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে ইহুদিবাদী ইসরায়েল নিজেকে রক্ষার জন্য তার অ্যাজেন্ডায় অন্ধ হত্যাকাণ্ড ফিরিয়ে এনেছে। এটা অবশ্যই জানতে হবে যে, তাদের এই লক্ষ্য কখনই অর্জিত হবে না এবং এই কাপুরুষোচিত অপরাধের জবাব দেওয়া হবে।’’
দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ায় ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা ও তাদের মিত্রদের লক্ষ্যবস্তু করে আসছে ইসরায়েল। তবে সোমবারের হামলাটি প্রথমবারের মতো ইরানের কনস্যুলেট ভবনে চালানো হয়েছে। হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর শীর্ষ একজন কমান্ডার ও তার ডেপুটিসহ অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, সোমবারের হামলায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি ও তার ডেপুটি জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি রাহিমি নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকারবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, ইসরায়েলি ওই হামলায় আট ইরানি, দুই সিরিয়ান এবং একজন লেবানিজসহ মোট ১১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের সবাই যোদ্ধা।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান এই হামলাকে ‘‘সব ধরনের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও চুক্তির লঙ্ঘন’’ বলে অভিহিত করেছেন। কনস্যুলেট ভবনে হামলার ঘটনায় ইসরায়েল জড়িত বলে দাবি করেছেন তিনি।
পৃথক এক বিবৃতিতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, ইরানের প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার রয়েছে। আর এই প্রতিক্রিয়ার ধরন ও হামলার শাস্তি সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তেহরান।
সিরিয়ায় কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলি হামলার ঘটনার পরপরই তেহরানের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র এই হামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হয়েছে গত ৭ অক্টোবর। ওই দিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে ঢুকে এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা ও ২৫৩ জনকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে রাখে হামাস।
হামাসের হামলার পর সেদিনই গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের সাথে হামাসের এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে যোগ দিয়েছে ওই অঞ্চলের ইরান-সমর্থিত অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। হামাসের সাথে লড়াইয়ের পাশাপাশি এসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও তখন থেকে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৩২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে।