দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে মেক্সিকো। কুইটোতে মেক্সিকান দূতাবাসে পুলিশের হামলার পর ইকুয়েডরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের এই সিদ্ধান্ত নেয় উত্তর আমেরিকার দেশটি।
মূলত ভাইস-প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাসকে গ্রেপ্তার করতেই মেক্সিকান দূতাবাসে ওই অভিযান চালায় পুলিশ। রোববার (৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইকুয়েডরের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাসকে গ্রেপ্তার করতে রাজধানী কুইটোতে অবস্থিত মেক্সিকান দূতাবাসে পুলিশের হামলার পর ইকুয়েডরের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছে মেক্সিকো।
মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডর বলেছেন, তারা (ইকুয়েডর) ‘আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ করে দূতাবাসে ‘জোরপূর্বক প্রবেশ’ করেছে।
বিবিসি বলছে, দুর্নীতির অভিযোগে ইকুয়েডর কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর দেশটির সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাস গত বছরের ডিসেম্বরে মেক্সিকান দূতাবাসে আশ্রয় নেন। গ্লাসের আইনজীবী বলেছেন, তিনি নির্দোষ।
তবে দূতাবাসে হামলা চালিয়ে গ্লাসকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ পাহারায় তাকে গুয়াকিল শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং সেখানে তিনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় কারাগারে বিচারের অপেক্ষায় থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
জর্জ গ্লাস ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইকুয়েডরের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের কারণে তাকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
সেই বছর পরে ব্রাজিলিয়ান নির্মাণ জায়ান্ট ওডেব্রেখটে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্রসিকিউটররা বলেছেন, তিনি ১ কোটি ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার ঘুষ নিয়েছেন।
গত বছরের নভেম্বরে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। কিন্তু ইকুয়েডর কর্তৃপক্ষ দুর্নীতির আরও অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আরেকটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং এরপরই গ্লাস রাজধানী কুইটোর মেক্সিকান দূতাবাসে আশ্রয় নেন।
গত শুক্রবার মেক্সিকো জানায়, তারা পরিস্থিতির ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের পরে’ জর্জ গ্লাসকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে। তবে এই পদক্ষেপকে ইকুয়েডর অবৈধ হিসাবে মনে করছে।
ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্সি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইকুয়েডর একটি সার্বভৌম দেশ এবং আমরা কোনো অপরাধীকে মুক্ত থাকতে দেব না।’
এদিকে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ওব্রাডর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে লিখেছেন, সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাসকে গ্রেপ্তারের জেরে (ইকুয়েডরের সঙ্গে) কূটনৈতিক সম্পর্ক অবিলম্বে স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও লিখেছেন, ‘ইকুয়েডরের পুলিশ জোরপূর্বক আমাদের দূতাবাসে প্রবেশ করে এবং সেই দেশের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্টকে আটক করে। তিনি একজন শরণার্থী ছিলেন এবং তিনি যে নিপীড়ন ও হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন তার কারণে আশ্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্নের কাজ করছিলেন। এটি আন্তর্জাতিক আইন এবং মেক্সিকোর সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’
এর কয়েক ঘণ্টা পরে মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়াও ‘অস্বাভাবিক এবং নিন্দনীয় পদক্ষেপের’ জেরে ইকুয়েডরের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বলে এক সরকারি বিবৃতিতে ঘোষণা দিয়েছে।
মেক্সিকোর পররাষ্ট্রসচিব অ্যালিসিয়া বারসেনা জানিয়েছেন, দূতাবাসে পুলিশি হামলার এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন কূটনীতিক আহত হয়েছেন।