• ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন
নোটিশ
রাজশাহীতে আমরাই প্রথম পূর্ণঙ্গ ই-পেপারে। ভিজিট করুন epaper.rajshahisangbad.com

পবায় ফসলি জমিতে প্রকাশ্যে পুকুর খনন

রিপোর্টার নাম:
সর্বশেষ: শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২

পবায় ফসলি জমিতে প্রকাশ্যে পুকুর খনন

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহীর পবায় প্রকাশ্য চলছে ফসলি জমিতে পুকুর খনন। পুকুর খনন সিন্ডিকেটের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে এই খনন কাজ। এতে করে রাতারাতি তিন ফসলি জমি পরিনত হচ্ছে পুকুরে। পুকুর খননের ফলে পুকুরের পাশের জমিতে হচ্ছে না ফসল। এদিকে পুকুর খনন বন্ধে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনে আবেদন দিয়েও ফলাফল মিলছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানি শুকানোর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় একদিকে জোরেশোরে এবং অন্যদিকে চুপিসারে আবারো শুরু হয়েছে অপরিকল্পিত পুকুরখননযজ্ঞ। প্রশাসনের কর্মকর্তারা দিনে খননকাজে ব্যবহৃত মেশিন অকেজো করলেও রাতে ঠিকই চলছে খনন। আর এ চিত্র জেলার প্রায় সবক’টি উপজেলাতেই। বিশেষ করে পবা, মোহনপুর, দুর্গাপুর, গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলায় পুকুরখনন চলছে প্রকাশ্যই।
এরইমধ্যে পবা উপজেলার বাগধানি, কর্ণহার, দর্শনপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে জোরেশোরে চলছে পুকুরখনন। প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চলছে এসব পুকুরখনন। এসব পুকুর খনন বন্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে এ আবেদন করেছেন এলাকাবাসী।
আবেদন থেকে জানা গেছে, দারুশা এলাকার মৃত হারুনার রশিদ ওরফে হারানের ছেলে পুকুরখনন সিন্ডিকেটের প্রধান মিনারুল ইসলাম বিগত কয়েক বছর থেকে কর্ণহার ও এর আশেপাশের বিল এলাকায় পরিবেশ ও রাস্তাঘাট নষ্ট করে বেপরোয়াভাবে অবৈধ পুকুরখনন চালিয়ে যাচ্ছে। নতুনভাবে কর্ণহার গুচ্ছগ্রামের পাশে ১২৫ বিঘা পুকুরসহ আরো কয়েকটি পুকুরখনন করছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন এখানে অভিযান চালানোর পরেও দিন-রাত পুকুরখনন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আর এর সাথে জড়িত আছে নগরীর কয়েরদাঁড়া এলাকার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে আব্দুল লতিফ বাবু।
এদিকে, স্থানীয়রা বলছেন, রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগীতা ও প্রশাসনের সমর্থন ছাড়া এই অপরিকল্পিত পুকুরখনন কখনোই সম্ভব নয়। পুকুর খননে মাছের লাভের চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি হচ্ছে কৃষিজীবী ও পরিবেশের। সংসদ সদস্য, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের মদদেই অপরিকল্পিত পুকুর খননের মহোৎসব চলছে বলে দাবি করছেন সচেতনমহল, পরিবেশবাদি ও ভুক্তভোগিরা।
সরেজমিনে শুক্রবার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার বিলধরমপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার হাওয়ার মোড়ের পাশেই কর্নহার বড় বিল। হাওয়ার মোড়ের পাশেই গতবছর করা হয়েছে পুকুর। এবার তার পাশেই নতুন করে পুকুর কাটছে পুকুরখনন সিন্ডিকেটের প্রধান মিনারুল ইসলাম। দিনের বেলায় সেখানে কাটা হচ্ছে পুকুর। ভেকু মেশিনও আছে সেখানে। প্রায় ৪০ বিঘার একটি ধানি জমিকে পুকুরে রূপান্তরে জন্য এরই মধ্যে পাড় তৈরি করা হয়েছে। বিলের মূল সড়কের পাশেই এটি করা হচ্ছে। মূল সড়ক থেকে দেখা মিলছে ভেক্যু মেশিনের। কাছে গিয়ে দেখা মিললো না কারো।
স্থানীয় এক কৃষক জানান, সকাল থেকেই এই মেশিন মাটি কাটছিলো। আপনাদের আসার খবর পেয়েই তারা মাটি কাটা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেছে। আপনারা চলে গেলে আবারও পুকুর কাটা শুরু হবে।
যেখানে পুকুর কাটছে ঠিক তার পার্শের জমি মো হুমায়নের। তিনি বলেন, পুকুরের পাশের জমি হলে সেখানে কোন ফসল হয় না। এমনকি জলবাদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আমরা তাদের অবৈধভাবে পুকুর কাটতে মানা করেছিলাম। তারা ক্ষমতা দেখিয়ে রোজই পুকুর কাটছে।
আরেক কৃষক ঈদ্রিস আলী। তিনি বলেন, প্রশাসনের কাছে পুকুর নিয়ে বার বার অভিযোগ করেও এটি বন্ধ করতে পারিনি। তারা পুকুর কাটছেই। পুলিশ তাদের কোন বাধা দিচ্ছে না। এমন কী জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েও আমাদের জমি রক্ষা করতে পারছি না। এই জমিতে আমাদের আর কোন ফসল হবে না। এটি আমাদের জন্য খারাপ। প্রশাসনের কাছে বার বার বলছি এটি বন্ধ করতে কিন্তু তারা এগুলো করছে না। রাজনৈতিক ব্যক্তি আর কিছু প্রভাশালী থানা আর ইউএনও অফিসের যোগসাজসে প্রকাশ্যে দিনের বেলাতে মেশিন চালু রেখেছে। পুলিশ তাদের আটকও করছে না। তাদের নামে আমাদের করা মামলাও আছে। তবুও তারা পুলিশের সামনেই দিনে ও রাতে পুকুর কাটছে।
এবিষয়ে মিনারুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি পুকুর খনন করছেন না। তবে ভেক্যু মেশিনটি তার। এটি তিনি ভাপা খাটাচ্ছেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, পুকুর খননের সময় ধরা পড়ে জেল খাটার পর থেকে তিনি এই কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।
এবিষয়ে হুজুরিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, নতুন করে কোন পুকুর আমি খনন করতে দেই না। পুকুর খনন যারা করছে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেই করছে। আমরা চেস্টা করছি। উর্ধনত কর্তৃপক্ষকে জানাছি। তারা এগুলো নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) অভিজিত সরকার বলেন, এই বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমি পুকুর খননের খবর শুনেছি। আমি আজ ছুটিতে আছি। আগামীকাল (শনিবার) সকালেই এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরো খবর