আহসান হাবীব অপু
তখন আমি স্কুলের ছাত্র। আমাদের বাড়িতে ঐ সময় দৈনিক সংবাদ পত্রিকা নিয়মিত যেতো। বাড়িতে পত্রিকা পৌঁছতে প্রায় বিকেল হয়ে যেতো। আবার রাস্তায় কোন সমস্যা হলে রাতে পত্রিকা আসতো। অপেক্ষায় থাকতাম কখন পত্রিকা আসবে। পত্রিকার লেখাগুলো পড়ে মনে এক ধরনের স্বস্তি পেতাম। মনে হতো কত সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন লেখক। সাংবাদিকরা কত সুন্দর করে নিজেদের মত করে খবর লেখেন। এই লেখা পড়তে পড়তেই একসময় মনের ভেতরে প্রচণ্ড আগ্রহ জন্মালো সাংবাদিক হওয়ার। ঐ সময় দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি হিসেবে রাজশাহীতে কাজ করতেন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক মলয় ভৌমিক স্যার। এখন তিনি অবশ্য আর এই পেশায় জড়িত নন। তিনি এখন পুরোপুরিই অধ্যাপক। ঐ সময় সংবাদের উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা করার আশা নিয়ে অনেক কষ্টে মলয় স্যারের টেলিফোন নম্বর জোগাড় করি। প্রতিদিনের ছোটখাটো যা খবর পেতাম স্যারের বাড়ির টেলিফোন নম্বরে জানাতাম। পরে যেগুলো পাঠানোর মত গুরুত্ব পেতো সেগুলো স্যার ঢাকা অফিসে পাঠাতেন টেলিফোন কিংবা ফ্যাক্স মেশিনের মাধ্যমে। আর আমি পরের দিন বিকেল কিংবা রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম আমার পাঠানো কোন খবর ছাপা হবে এই আশা নিয়ে। দেশের খবর জানার জন্য এই অপেক্ষা কিন্তু পাঠাকেরও ছিলো। তখনকার খবর জানার মাধ্যম বলতেও তো এই সংবাদপত্রই ছিলো। এখন বদল হয়েছে সময়ের। এখন আর খবর জানার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। খবর পাঠানোর জন্য সাংবাদিকদেরও আর অপেক্ষা করতে হয়না। প্রতি মুহুর্তের খবর জানানোর জন্য এখন অগনিত মাধ্যম আমাদের চারপাশে। সকালের খবর এখন বিকেলেও অনেকেই জানতে চান না। সেই ধৈর্য্য থাকে না। ঘটনা যখন ঘটছে তখই মানুষ জানছে নানান মাধ্যম ব্যবহার করেন। এটি যে শুধু নিজের এলাকার কিংবা দেশের খবর জানার ক্ষেত্রে তাও নয়। বিশে^র যেকোন প্রান্তের খবরই এখন বলা চলে হাতের মুঠোই। এমনই একটি সময়ে আমরা রাজশাহী সংবাদ নিয়মিতভাবে প্রকাশ করছি একটি বিভাগীয় শহর থেকে। নানান সময়ে নানান সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। তবে, এর মাঝে প্রতিদিনের লড়াইটা আমাদের পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতার। দ্রুততম সময়ে বিশে^র খবর যখন জেনে যাচ্ছেন, তখনও একজন পাঠক কী পেলে পত্রিকা পড়বেন এমন ভাবনাটা আমাদের মাথায় রাখতেই হয়। এই চ্যালেঞ্জটা নিয়েই পথ চলছি আমরা। সুস্থ ভাবনা নিয়ে সাংবাদিকতা করার প্রত্যয় নিয়ে রাজশাহী সংবাদ যে যাত্রা শুরু করেছিলো আজও সেই নীতির প্রতি অবিচল। আমাদের গেলো ৬বছরের পথ চলা সহজ ছিলো না। সামনের পথগুলোও খুব মসৃন হওয়ার আশা নেই। এটিই সাংবাদিকতা বলে আমরা মনে করি। প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে চলার নামইতো সাংবাদিকতা। তবে বিগত সময়ে আমরা পাঠাকের কাছ থেকে সহযোগিতা ও ভালোবাসা পেয়েছি, তাদের ধরিয়ে দেয়া ভুলগুলো থেকে আমরা যেভাবে শিক্ষা নিয়েছি তাতে আমাদের মনের জোর বেড়েছে। আমরা আশাবাদি হয়েছি। আমরা এখন বহুদূর যাবার স্বপ্ন দেখতে শিখেছি।
৬ বছর পেরিয়ে সাত বছরে পা দিয়ে আমরা পাঠকের কাছে প্রত্যাশা করি অতীতের মতই আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন। আমরা সমাজের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরার জন্য সব ধরনের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। এগিয়ে চলা বাংলাদেশের ইতিবাচক খবর পাঠকের সামনে তুলে ধরতেও এতটুকু আলসেমি থাকবে না আমাদের।