বড়াল নদের উপর প্রস্তাবিত ব্রীজ নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব শাহাদাত হোসাইন । শুক্রবার (১৭ মে) বিকাল ৪টায় উত্তরে নাটোর জেলার জামনগর ও দক্ষিনে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বড়াল নদের উপর প্রস্তাবিত ব্রীজ নির্মান স্থান পরিদর্শন করেন তিনি । এতে ২০ গ্রামের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায় হতে যাচ্ছেন জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
জানা যায়, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার গোচর, কুশাবাড়িয়া, জোতরঘু, হামিদকুড়া, নাটোরের বাগাতিপাড়ার জামনগর, বাঁশবাড়িয়া, কালিকাপুর, দোবিলা, মুন্সিপাড়া, কৈচারপাড়া, করমদশি, ভিতরভাগ, মাঝপাড়া, গৈলারঘোপসহ ২০টি গ্রামের মানুষ একটি ব্রীজের জন্য ৫২ বছর থেকে অপেক্ষায় রয়েছেন। এ ব্রীজ নির্মানের জন্য স্থানীয়রা উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের মাধ্যমে আবেদন করেন।
আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব শাহাদাত হোসাইন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের ব্রীজটি নির্মানের প্রয়োজন রয়েছে বলে স্থানীয়দের আস্তস্থ করেন।
এ সময় তার সাথে ছিলেন উপ-সচিব সুমি মজুমদার, ১০০ মিটার বাস্তবায়ন প্রকল্পের পিডি কাওছার আলম, উপজেলা প্রকৌশলী বেলাল হোসেন।
স্থানীয় জামনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানি, আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি, সাবেক সভাপতি শহীদুজ্জামান শাহীদ, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ৫ জুন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান নিপন, সাইদুল ইসলাম, কাউন্সিলর নওশাদ আলী, গোচর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হোসেন লাল্টু প্রমুখ।
বর্তমানে বড়াল নদের দুই পাশের গ্রামগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। এ সব গ্রামে শিক্ষার হার অনেক ভালো । নদী বিধৌত গ্রামগুলো সবজি চাষে বিখ্যাত। এ গ্রামগুলোতে বেগুন, পটল, আলু, করলা, শিম, মুলা, গাজর, টমেটো, বরবটি, মসলা জাতীয় ফসল মরিচ, হলুদ, পিয়াজ, রসুন, আদা, ফলের মধ্যে আম, কাঁঠাল, লিচু, বরই, পেঁয়ারার চাষ হয়।
তারা এলাকার নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব কৃষিপণ্য রপ্তানি করেন। জামনগর-গোচর এলাকায় বড়াল নদরে উপর ব্রীজ না থাকায় গ্রামগুলোতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য খুব কম দামে নিজ এলাকায় গ্রামীণ ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করতে হয়। অনেক দিন আগে থেকে ২০ গ্রামের মানুষ একটি ব্রীজ নির্মানের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
এদিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী একটি বিখ্যাত হাট। যা জামনগর গ্রাম থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দুরে। আড়ানী হাট থেকেই ব্যবসায়ীরা ট্রাকে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে এসব কৃষিপন্য নিয়ে যায়। কিন্তু এ সকল গ্রামের প্রধান অন্তরায় বড়াল নদ। প্রতিদিন নৌকায় নদ পার হয়ে আড়ানীর হাটে যেতে হয় এলাকার মানুষদের। এছাড়া দুই কিলোমিটার পথ ৫/৬ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। অথচ একটি ব্রীজ বদলে দিতে পরে ২০টি গ্রামের ভাগ্যে। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদ, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পূর্বে প্রার্থীরা এলাকাবাসির দাবির মুখে ব্রীজটি করার প্রতিশ্রুতি দেন। ক্ষমতায়নের পর কেউতা বাস্তবায়ন করেনি। মালামাল পারাপারের সময় প্রায় দূর্ঘটনা ঘটে ।
জামনগর গ্রামের মাহাতাব আলী বলেন, ব্রীজের অভাবে তাদের উৎপাদিত কৃষি পন্য সঠিকভাবে বাজার জাত করতে পারছে না। এছাড়া প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে অনেক বার মাপযোগ করে মাটি পরীক্ষায় নিয়ে গেছেন। অবশেষে স্থানীয় সরকারর বড় এক কর্মকর্তা এসে পরিদর্শন করে গেলেন।
আড়ানী পৌর আ.লীগের সাবেক সভাপতি ও কুশাবাড়িয়া গ্রামের শহীদুজ্জামান শাহীদ বলেন, জামনগর-গোচর বড়াল নদের উপর ব্রীজ নির্মান করা হলে ২০টি গ্রামের মানুষ কৃষি পণ্য সঠিকভাবে বাজার জাত করনের লক্ষ্যে সাধারণ মানুষ নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে পারবে। এছাড়া মানুষ বর্ষা মৌসুমে নৌকায় ও শুস্ক মৌসুমে বাঁশের সাকো দিয়ে অনেক কষ্টে পার হতে হয়। অনেক সময় মানুষ সময় মতো পৌছতে পারে না। ব্রীজটি নির্মান হলে ২০টি গ্রামের মানুষের দূর্ভোগ লাঘব হবে।
এ ব্যাপারে বাঘা উপজেলা প্রকৌশলী বেলাল হোসেন বলেন, জামনগর-গোচর বড়াল নদের উপর প্রস্তাবিত ব্রীজ নির্মানের ব্যাপারে মন্ত্রনালয়ে কাগজপত্র অনুমোদনের জন্য পাঠানোর কারণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব শাহাদাত হোসাইন স্যার ব্রীজ নির্মান স্থান পরিদর্শন অাসছেন। আশা করছি সামনের অর্থ বছরের কাজ হবে।