• ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৮ পূর্বাহ্ন
নোটিশ
রাজশাহীতে আমরাই প্রথম পূর্ণঙ্গ ই-পেপারে। ভিজিট করুন epaper.rajshahisangbad.com

বদলগাছীতে এক শিক্ষক পরিবারকে কোনঠাসা করতে মরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান

নওগাঁ প্রতিনিধি
সর্বশেষ: সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪
বদলগাছীতে এক শিক্ষক পরিবারকে কোনঠাসা করতে মরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান

নওগাঁর বদলগাছীতে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরই এক শিক্ষক পরিবারকে কোনঠাসা করতে মরিয়া হয়ে উঠার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি পন্থী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের প্রধানকুন্ডি গ্রামের ৮০ বছর বয়সী অবরসপ্রাপ্ত শিক্ষক মনজুর হোসেনের বাড়িতে ঢুকে প্রকাশ্যে তার ছেলেকে মারধর করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান এমরান হোসেন ও তার বাহিনীর সদস্যরা।
বর্তমানে চেয়ারম্যানের হুমকির মুখে ওই গ্রামে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে পরিবারটি। নিজ বাড়িতেও ফিরতে পারছেন না ওই শিক্ষকের অন্য সন্তানরাও। এদিকে একই সময়ে গ্রামের ১৬ বিঘা খাস জমি অবৈধভাবে দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আলোচিত বিএনপি পন্থী এ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান ও তার তিন ছেলের আকস্মিক তান্ডব এলাকায় স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথ্যানে বিজয়লাভের পরই বদলগাছী উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের প্রধানকুন্ডি গ্রামে শুরু হয় তান্ডব। বিএনপিপন্থী ইউপি চেয়ারম্যান এমরান হোসেন দখলে নেন গ্রামের ১৬ বিঘা খাস জমি। পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে ওইদিন সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে পথরোধ করা হয় ঢেকড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মনজুর হোসেনকে। ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ৩ ছেলে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন ৮০ বছর বয়সী বয়জৈষ্ঠ ব্যক্তিকে। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের সহযোগীতায় মনজুর হোসেন বাড়িতে ফিরতে পারেন। তবে বাড়িতে ফেরার কিছুক্ষণ পরই ইউপি চেয়ারম্যান এমরান হোসেন দলবলসহ সেখানে লাঠিসোঠা নিয়ে প্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে ছিলো ইউপি চেয়ারম্যানের তিন ছেলে। ওই মুহুর্তে মনজুর হোসেনের সামনেই তার ছেলে মাহফুজুর রহমান তামান্নাকে কয়েক দফায় মারপিট করেন তারা। সেই সাথে ওই শিক্ষকের বাড়ির কোন সদস্যকে পথেঘাটে দেখামাত্রই মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। এমন তান্ডব চলাকালীন মুহুর্তে স্থানীয়রা এগিয়ে গেলে দলবল নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান চেয়ারম্যান এমরান হোসেন।
মারধরের শিকার মাহফুজুর রহমান তামান্না বলেন, এলাকায় চলাফেরার সময়ে যেহেতু একসঙ্গে থাকতে হয় এখানে বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তার সময় ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকতেই পারে। সেটিকে পুঁজি করে গত ১ মাস যাবত আমাদের পরিবারকে নানানভাবে হয়রানির চেষ্টা করে আসছিলেন চেয়ারম্যান। বিএনপিপন্থী হওয়ায় সরকার পতনের পরই তিনি আমাদের উপর পূর্বে জিয়ে রাখা ক্ষোভের প্রতিশোধ নিতে ছুটে আসেন। আমাকে অন্যায়ভাবে মারপিট করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী মনজুর হোসেন বলেন, গত ১২ জুলাই আমার ছেলে চিকিৎসক সাকলায়েনের সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান পুত্রদের কথাকাটাকাটি হয়। এরপর থেকে আমার ওই ছেলে ঘরছাড়া। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর চেয়ারম্যান আমাদেরকে এলাকায় কোনঠাসা করে ফেলেছেন। নিজেদের কৃজি জমিগুলো চাষাবাদ করতেও যেতে পারছি না। আমি আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই।
ডাঃ গোলাম মোহাম্মদ সাকলাইন বলেন, গ্রামের সড়কে আমার রোপনকৃত কাঠবাদাম গাছের ডাল কেটেছিলো চেয়ারম্যানের ছেলেরা। গত ১২ জুলাই এর প্রতিবাদ করার ২ দিন পর আমাদের পুকুরে বিষপ্রয়োগ করে সমস্ত মাছ মেরে ফেলা হয়েছে। আমি ও আমার পরিবারকে তখন থেকেই হুমকির মুখে রেখেছিলো। তাদের অত্যাচারে আমি গ্রামে নিজ বাড়িতে যেতে পারছি না। ১৮ জুলাই এ ঘটনায় নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছিলাম। সেই ক্ষোভ সরকার পতনের পর আমার পরিবারের উপর দিয়ে গেলো। বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছি আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা। এ অবস্থ্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বালুভরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমরান হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ আনা হয়েছে এসব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।


আরো খবর