রাজশাহী সংবাদ ডেস্ক
বর্তমান সরকারের অধীনেই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। কাতারের দোহায় র্যাফলস্ হোটেলে অনুষ্ঠিত কাতার ইকোনোমিক ফোরামে বুধবার ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথোপকথন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাতার ইকোনোমিক ফোরামের এডিটর অ্যাট লার্জ হাসলিন্ডা আমিন। এ সময় অর্থনীতি-রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সঞ্চালকের করা প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। খবর: নিউজবাংলা
এদিন অন্যান্য দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও এ কথোপকথন অনুষ্ঠান হয়। আলাদা আলাদা সঞ্চালকরা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের প্রশ্ন করেন। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে হাসলিন্ডার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারের অধীনে নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক স্বৈরশাসকরা বাংলাদেশের সকল নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। তখন নির্বাচনটা শুধু একটা খেলা ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নত দেশ হওয়া উচিত। সেটিই আমার লক্ষ্য। জনগণের অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠিত করেছি; কেন আমি সেটা নষ্ট করব?’
নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বিএনপি) স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে নাও পারে। কিন্তু অন্য অনেক দল আছে, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
‘কিছু দল আছে যারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। তারা কিভাবে অংশগ্রহণ করবে? কারণ তাদের আমলে দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দেশের জনগণ কষ্ট পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) সময় দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে গিয়েছিল। দেশের সবত্রই ছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও শোষণ। তারা কখনো মানুষকে নিয়ে ভাবেনি। দেশের জনগণের দিনে একবেলা খাবার পাওয়া ছিল খুব কঠিন। এমনই ছিল তখন দেশের পরিস্থিতি।
‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জনগণের সবকিছু নিশ্চিত করেছে। নির্বাচন এখন জনগণের অধিকার। আমরা জনগণের জন্য কী করেছি মানুষ এটা বুঝতে পেরেছে। তারা যদি আমাদের ভোট দেয় আমি এখানে আছি, যদি না দেয়, ঠিক আছে।’
এ সময় ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা এবং পরবর্তীতে দেশে ফিরে আসার কথা স্মৃতিচারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তখন থেকে আমরা গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটদানের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম শুরু করেছি। এটা ছিল আমাদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার সংগ্রাম এবং আমরা এটি করেছি।’
বিএনপিকে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তো কেউ কোনো প্রশ্ন তোলেনি! কী ছিল সেই নির্বাচনের ফলাফল? যে দলটি (বিএনপি) প্রশ্ন তোলে তাদের দল, তাদের নেতৃত্বাধীন ২০ দল মিলে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল।’
দৃঢ় কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এখানে আছি জনগণের ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। কারণ জনগণেরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত কে দেশ পরিচালনা করবে।
‘এটি (ভোট) জনগণের শক্তি, আমি জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চাই। আমি এখানে ক্ষমতা দখল করার জন্য নয় বরং জনগণের ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করতেই রয়েছি। তাদের (জনগণের) সরকার তাদেরই বেছে নেয়ার অধিকার থাকা উচিত।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিভিন্ন উপনির্বাচনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারের আমলে অনেক উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। আপনি দেখতে পারেন, কারা সমস্যা তৈরি করছে; আমরা নই।’
তবে প্রত্যেক নির্বাচনে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান তিনি। এসময় বিএনপিকে একটি ‘অপরাধী ও খুনীদের’ দল বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
সাম্প্রতি আইএমএফ–এর ঋণ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা লোন পরিশোধ করতে পারে আইএমএফ শুধু তাদের লোন দেয়। কোনো দেশ লোন পরিশোধ করতে পারবে কি না, সেটা বিবেচনা করে আইএমএফ সে দেশকে লোন দেয়। বাংলাদেশ অবশ্যই আইএমএফ-এর লোন পরিশোধে সক্ষম।’