• ঢাকা, বাংলাদেশ শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
নোটিশ
রাজশাহীতে আমরাই প্রথম পূর্ণঙ্গ ই-পেপারে। ভিজিট করুন epaper.rajshahisangbad.com

বাঘায় পানির সংকট নিরসনে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ভ্যানগাড়িতে চলছে বিশুদ্ধ পানি সরবারহ

বাঘা প্রতিনিধি
সর্বশেষ: মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

তীব্র তাপপ্রবাহ ও সঙ্গে তপ্ত বাতাসে মানুষজন নাকাল। নিত্য-প্রয়োজনীয় সাংসারিক কাজকর্মে পানির ব্যবহার, ফসলী জমিতে সেচ ব্যবস্থা, শ্যালো মেশিন, অগভীর নলকুপ, টিউবয়েল, বাড়িতে ব্যবহ্নিত মোটর  পাম্পগুলোতে পানি উঠছেনা। দেশে অনাবৃষ্টি ও অতি খরার কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে এই সংকট । উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন ও ২ টি পৌরসভা এলাকা দীর্ঘ ৬ মাস বৃষ্টি না হওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। মানুষরা করছেন একটু পানির আশায় হাহাকার। জনজীবনে বিরাজ করছে অস্বস্তি, ত্রাহি ত্রাহি প্রাণীকুল।

সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের বাউসা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ব্যাংক এশিয়া,বাউসা বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার পরিচালক রতন কুমার ভৌমিক এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়িতে করে বড় বড় ট্যাংকি পানি বোঝায় করে সকাল ও বিকেল গ্রামে গ্রামে মানুষের বাড়িতে বিশুদ্ধ পানি সরবারহ করছেন। তিনি নিজ অর্থায়নে বিভিন্ন সময়ে নানা সংকটে সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে সর্ব মহলে প্রসংশিত হয়েছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বাউসা বাজারে নিজ সাবমার্সেবুল (জল মোটর) থেকে পানি নিয়ে  উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের আড়ানী রেল স্টেশন, নূননগর ,বেড়েরবাড়ি, হরিপুর, বাউসা ইউনিয়নের বাউসা বেনুপুর, হাট বাউসা, বাউসা মিয়াপাড়া, টাউরিপাড়া, তেনাচুরা, সরকারপাড়া, ভেড়ালিপাড়া,পূর্বপাড়া গ্রামে প্রতিদিন পানি সরবারহ করছেন।

বাউসা হাটপাড়া গ্রামের রোজিনা বেগম বলেন, গ্রামে যে সময় কোন টিউবয়েলে পানি উঠছেনা,সাংসারিক নানা প্রয়োজনে পানি দরকার। সেই সময়ে আমাদের পাশ দাঁড়িয়েছেন রতন দাদা। তার দেওয়া পানিতে আমরা উপকৃত হচ্ছি।

বাউসা বাজারের দোকানদার আজের আলী বলেন, আশেপাশে কোন টিউবয়েলে পানি উঠছেনা। বাড়িতে ও বাজারে খাবার পানি সংকট দেখা দেয়। এমন সময় রতন ভৌমিকের ঘোষণা পানি প্রয়োজন হলে মুঠোফোনে জানাবেন পৌঁছে যাবে পানি।

জানা গেছে, রাজশাহীর পূর্ব দক্ষিণ বাঘা- চারঘাট উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদী শুকিয়ে খাঁ-খাঁ করছে। উপজলার আড়ানী পৌর এলাকা দিয়ে বয়ে বড়াল নদসহ অন্য শাখা নদীগুলো মৃতপ্রায়। বর্তমানে খাল-বিলসহ প্রায় নদীতেও মাছের পরিবর্তে চাষ হচ্ছে নানা ফসল, নিধন করা হচ্ছে গাছপালা। এতে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশই নিচে নামছে। ক্রমশ মানুষের মাঝে বাড়ছে পানির জন্য হাহাকার।

পানিবাহী ভ্যানগাড়ির চালক কালাম হোসেন বলেন, রতন দাদা এমন কাজকে সমর্থন জানিয়ে ৪ জন ভ্যানগাড়ি চালক পানি সরবারহ করছি। ভাড়া যাইহোক এ কাজ করে আনন্দ পাচ্ছি। বিভিন্ন এলাকা থেকে মুঠোফোনে পানি প্রয়োজনের বিষয়ে জানালে পানি পৌঁছে দিচ্ছি ।

বাউসা বাজারের কিটনাশক ব্যবসায়ী ও সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বলেন, বাউসা এলাকায় পানি সংকট নিরসনে  রতন কুমার ভৌমিকের এমন উদ্যোগে সাধাবাদ জানায়। সেই সমাজের  বৃত্তবান, রাজনৈতিক নেতা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সমাজকর্মীদের পানি সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে আসার আহবান জানান।
এ বিষয়ে রতন কুমার ভৌমিক বলেন, মানুষ চাইলেও প্রয়োজনী পানি সংগ্রহ করতে পারছেনা। তাই জনস্বার্থে নিজ অর্থায়নে  পানি বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সংকট থাকা পর্যন্ত নিয়মিত পানি সরবারহ চালিয়ে যাওয়া চেষ্টা করবো।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের প্রকৌশলী মিঠন কুমার রবি দাস বলেন, ভূ-গর্ভস্থ পানি স্তর ৩০ থেকে ৩৫ ফিট নিচে নেমে যাওয়ায় পানি পেতে সমস্যা হচ্ছে। তীব্র তাপপ্রবাহ ,অনাবৃষ্টি, পুকুর খনন, জলাশয় ভরাট, গভীর নলকূপের বসানো কারণে এলাকার পানিস্তর নেমে যাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন,পানির স্তর নেমে যাওয়ার দেখা দিয়েছে সংকট। শুনেছি উপজেলার অনেকে বাউসা এলাকায় রতন কুমার ভৌমিকের মত ভ্যানগাড়িতে করে গ্রামের লোকজনের বাড়ি ও বাজারের দোকানগুলোতে নিজ উদ্যোগে পানি সরাবরহ করছেন। কাজ সত্যই প্রসংশার যোগ্য।#


আরো খবর