কাপড় ও পাটের ব্যাগ ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান উপদেষ্টা রিজওয়ানার
বালু ও মাটি দস্যুতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে
ইজারা বাদ দিয়ে সরকারি উদ্যোগে নদী থেকে বালু উত্তোলনের ভাবনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, দেশে বালু দস্যুতা এবং মাটি দস্যুতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এগুলো বন্ধের ব্যাপারে প্রশাসনকে ১০ দফা স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। এসময় তিনি শুধু দিনে নয় প্রয়োজনে রাতেও অভিযান চালাতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। রাজশাহীর চারঘাটে বড়াল নদী পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সোমবার সকালে রাজশাহীর চারঘাটের বড়াল নদের উৎসমুখ পরিদর্শনে যান। এসময় স্থানীয়রা অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়টি তুলে ধরেন। সাংবাদিকর এবিষয়ে জানতে চান উপদেষ্টার কাছে। এসময় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই বালু দস্যুতা এবং মাটি দস্যুতা একটা চরম রুপ নিয়েছে। ইটভাটার জন্য মাটি আর নির্মাণ কাজে বালু তোলে। পাহাড় কাটে আর কৃষি জমির উপরের ভাগ কেটে নিয়ে যায়। কৃষক রাতে ঘুমিয়ে পড়ে সকালে এসে দেখে তার জমির মাটি নেই। এই রকম ভয়ঙ্কর অবস্থায় আমরা চলে গেছি। এই ভয়ঙ্কর অনিয়মগুলো অনেকদিন জমা হয়েছে। এখন একদম চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আমরা সেদিন স্বরাষ্ট উপদেষ্টা, ভূমি উপদেষ্টা এবং আমি ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকের সাথে বসেছিলাম, পুলিশ সুপারের সাথে বসেছিলাম শুধুমাত্র বালু উত্তোলনটাকে নিয়ন্ত্রনে আনবার জন্য নির্দেশনা দিতে। সেখানে আমরা দশ দফা নির্দেশনা স্পষ্ট করে দিয়েছি। বালু মহাল নিয়ন্ত্রন আইন এবং বিধিমালা অনুযায়ি যে সার্ভে করে দেখার কথা বালু আছে কিনা। সেই সার্ভে দেখা যায় দশ বছর আগের। দশ বছর পরে আর সেখানে বালু নেই। তাও ঐ একই জায়গা ইজারা দেয়া হচ্ছে। আর যে ইজারা পাচ্ছে সে পাশের জায়গা থেকে বালু তুলছে। আমরা বলেছি নতুন করে সার্ভেগুলো করতে হবে। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। একটা যুক্তি থাকে আমি দিনের বেলা অভিযান করছি রাতের বেলা বালু তুলছে। এখন অপরাধ যদি রাতের বেলা হয় তাহলে প্রশাসন কি বলতে পারে যে রাতের বেলা আমি দেখতে পাচ্ছি না? ডিসি সাহেবদের একটা স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সরকার নিজেই বালু উত্তোলনের কথা ভাবছে
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সরকারি উদ্যোগে বালু উত্তোলনের কথা ভাবছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। বালু মহালগুলো ইজারা না দিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বালু তোলার ভালো দিক নিয়েও কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, এবছর যেকটা বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়েছে তার বিপরিতে সরকার আড়াইশ কোটি টাকাও পুরা পায়নি। এই আড়াইশ কোটি টাকার জন্য সরকার আসলে বালু মহালগুলো এভাবেই ইজারা দিবে নাকি নদীর নাব্যতা যেহেতু সরকারের দায়িত্ব সরকার আস্তে আস্তে ইনজেগড হবে? কারণ এসব যন্ত্রপাতিতো সরকারেরই আছে। সেটাই করবে ? তাহলে লোকেও কমদামে বালু পাবে, নদীর পরিবেশও রক্ষা হবে এবং আশেপাশের মানুষও রক্ষা পাবে।
উপদেষ্টা বলেন ফারাক্কা ইস্যুতে ভারতের সাথে যে চুক্তি আছে এখনই তা নবায়নের প্রসঙ্গটি আসছে না। তবে, পদ্মার পানির নায্য হিস্যা বুঝে নিতে সরকার কাজ করছে। যথাসময়ে ফারাক্কা চুক্তি নবায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি। সরকার এবিষয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
কাপড় ও পাটের ব্যাগ ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান
পলিথিনের বিকল্প হিসেবে কাপড় ও পাটের ব্যাগ ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সোমবার দুপুরে রাজশাহী সার্কিট হাউজে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে প্লাস্টিকের ব্যবহার সীমিত করতে হবে। বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ব্যাগ সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা জরুরি। পলিথিনের পরিবর্তে কাপড় ও পাটের ব্যাগ ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে সরকার ইতোমধ্যে নানান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ এগিয়ে আসলে এ কাজে সফল হওয়া যাবে।
সভায় নগরায়নের চাপে পুকুর, খাল ও অন্যান্য জলাশয় ভরাটের প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পরিবেশ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, পানি সংরক্ষণ ও ভূগর্ভস্থ পানির ভারসাম্য রক্ষায় প্রাকৃতিক জলাধার রক্ষা করা অপরিহার্য। এসময় তরুণ প্রজন্মকে পরিবেশবান্ধব জীবনধারার চর্চায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং বলেন, আমাদের প্রতিটি ছোট পদক্ষেপ বড় পরিবর্তনের পথ তৈরি করতে পারে।
সভায় রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবীরসহ পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যেক জেলাতেই একটি করে নদী দখল-দূষণমুক্ত করার পরিকল্পনা