আবু সাঈদ রনি
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর ছয় সংসদীয় আসনে ভোটের মাঠে লড়ছেন ৩৮ জন প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দিদের মধ্যে বেশিরভাগই পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্যবসা। আবার অনেকেই ব্যবসায়ী হওয়ার সুবাদে দখলে রেখেছেন দলীয় মনোয়নপত্র। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া এবং উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
রাজশাহীর ছয় আসনে নির্বাচনে অংশ নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে দেওয়া হলফনামা পর্যবেক্ষণ করে প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় ৫৫ শতাংশ ব্যবসায়ীর সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রার্থীদের মধ্যে শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, কৃষিজীবী, গৃহিণী ও টিউশনি পেশায় থাকা ব্যক্তিও দেখা গেছে। এদিকে বর্তমান ছয় সংসদ সদস্যের মধ্যেও পাঁচজনই ব্যবসায়ী পেশার বলে জানা গেছে। আর অপরজন চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত। এমনকি জেলার তিন আসনে নৌকার নতুন মাঝিদেরও প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবসায় জড়িত।
হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের বর্তমান এমপি ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী পেশার বিবরণে শুধুমাত্র ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। এই খাত থেকে তার বার্ষিক আয় ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই আসনের বাকি প্রার্থীদের মধ্যেও দুইজন ব্যবসায়ী, দুইজন শিক্ষক, একজন চিকিৎসক, একজন গৃহিণী ও একজন টিউশন পেশায় নিয়োজিত।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনের বর্তমান এমপি ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা পেশার বিবরণে আইনজীবী ও ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। তবে আইন পেশা থেকে কোনো উপার্জন না দেখালেও ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ২৩ লাখ ১৪ হাজার ১১৪ টাকা। এই আসনের বাকি প্রার্থীদের মধ্যেও পাঁচজনই ব্যবসায়ী ও একজনের পেশা উল্লেখ নেই।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের বর্তমান এমপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আয়েন পেশার বিবরণে কৃষি ও মৎসচাষ উল্লেখ করেছেন। এই খাত থেকে তার বার্ষিক আয় ২৮ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৩ টাকা। এই আসনের বাকি প্রার্থীদের মধ্যেও পাঁচজনই ব্যবসায়ী ও অপরজন আইন পেশায় নিয়োজিত।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের বর্তমান এমপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এনামুল হক ইঞ্জিনিয়ার হলেও হলফনামায় পেশার বিবরণে উল্লেখ করেছেন ব্যবসা। এই খাত থেকে তার বার্ষিক আয় ১৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এই আসনের বাকি প্রার্থীদের মধ্যেও দুইজন ব্যবসায়ী ও অপরজন শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের বর্তমান এমপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মনসুর রহমান পেশায় চিকিৎসক হলেও এই খাতে তার কোনো আয় দেখানো হয় নি। তবে ব্যবসা ও কৃষি খাত থেকে বছরে মোট ৩৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। এই আসনের বাকি প্রার্থীদের মধ্যে দুইজন শিক্ষকতা, একজন আইনজীবী, একজন কৃষিকাজ ও একজন ব্যবসা পেশায় নিয়োজিত।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের বর্তমান এমপি ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম পেশার বিবরণে শুধুমাত্র ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। এই খাত থেকে তার বার্ষিক আয় ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর পাশাপাশি কৃষি বাবদ ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও প্রতিমন্ত্রী সম্মানি বাবদ ১১ লাখ ৪ হাজার টাকা বার্ষিক আয় তার। এই আসনের বাকি প্রার্থীদের মধ্যেও চারজন ব্যবসায়ী, একজন শিক্ষক ও একজন মৎস চাষী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি আহমেদ শফিউদ্দীন বলেন, ব্যবসায়ীরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যদি সংসদে এমন আইন প্রণয়ন করেন যেটা মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা ও সকল মানুষের জন্য উন্নয়ন, সেই সৎ নিয়তে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে থাকেন তো খুবই ভালো কথা। সেটাকে আমরা স্বাগত জানাবো। কিন্তু যদি দেখা যায়, এই নির্বাচনের পথকে আরও সম্পদ বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছেন এবং রাতারাতি বহুগুণ সম্পদের মালিক হয়ে যাচ্ছেন, তাহলে এটা হতাশাজনক। বহুদিন ধরে মানুষ চায়, নির্বাচনে যেন সত্যিকার অর্থে মানুষের সেবা করবার লক্ষ্য নিয়ে জনপ্রতিনিধি হয়। বাস্তবে যদি দেখা যায়, জনপ্রতিনিধিরা সেবার পরিবর্তে আত্মসেবায় ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন, তখনই সংকটা শুরু হয়। রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি না থেকে ক্রমাগত ব্যবসায়ী বা বিশেষ শ্রেণির হাতে চলে যায়, যাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে নিজেদের সেবা করা, সেটাও খুব দুঃখজনক হবে। এই কারণেই নির্বাচন পদ্ধতির মধ্যে যেন নিরপেক্ষতা থাকে ও সুন্দর পরিবেশ থাকে, মানুষ যাতে তাদের পছন্দের যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার সুযোগ পায় সেই চেষ্টাটি গুরুত্বপূর্ণ।