ভয়াল ২১ আগস্টের ১৯ বছর
রাশিক দত্ত
রক্তাক্ত বিভীষিকাময় আগস্ট মাস কে ঘিরেই বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বাকি সদস্য হত্যার ছক কষে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি। এমনই একটি দিন বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল একটি দিন। কাল ছিলো সেই নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার ১৯ তম বার্ষিকী। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায় তারা। এ হামলার মাধ্যমে আক্রান্ত হয় মানবতা। সেই সাথে আক্রান্ত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামীলীগ সভাপতি, মানবতার নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীরা মানব ঢাল তৈরি করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করলেও গ্রেনেডের আঘাতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী প্রাণ হারান। প্রচন্ড আঘাত পান জননেত্রী ও কানের পর্দাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় ঐক্যজোট সরকার। সেদিন ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐ অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রধান অতিথি। সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশের আগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অস্থায়ী মঞ্চ ট্রাকে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্য শেষ হওয়ার পরপরই তাকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা করে সন্ত্রাসীরা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে উঠার আগেই ১২/১৩ টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। চারিদিকে জুতা, স্যান্ডেল, রক্ত, মাংশ স্পিন্টারের আঘাতে মানুষের ছিন্নভিন্ন হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছিলো। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। রক্তে লাল সাগর হয়েযায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সামনের পিচঢালা কালো পথ। মুহূর্তেই পুরো এলাকা কালো গাড়ো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভেসে আসে শত শত মানুষের যন্ত্রণাময় আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক দৃশ্যের জন্ম হয়েছিলো সেই দিন।সেদিন রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালে আহতদের জন্য তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ভাগ্যগুণে নারকীয় গ্রেনেড হামলায় অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় জননেত্রী শেখ হাসিনা আপা। পরবর্তিতে সেই ঘাতকদের লক্ষ ভ্রষ্ট হওয়া প্রধান টার্গেট শেখ হাসিনার বেঁচে যাওয়া দেখে তার গাড়ি লক্ষ্য করে আবারো গুলি বর্ষন করে। তবে টার্গেট করা গুলি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ি ভেদ করতে সক্ষম হয়নি। রাখে আল্লাহ মারে কে। হামলার পরপরই প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাওয়া হয় তার তৎকালীন বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনে। ২১ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। এই নারকীয় হামলায় আওয়ামী লীগের ৪ শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে শরীরে স্পিন্টার নিয়ে আজও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আহত হয়েছিলেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ভায়েরা। অনেক নেতাকর্মী সেদিনের সেই গ্রেনেডের স্পিন্টারের মৃত্যু যন্ত্রণায় আজো কাতরাচ্ছেন। অনেক নেতাকর্মীকে তাৎক্ষণিক দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করালেও তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি।গ্রেনেড হামলার পর ভয়, শঙ্কা ও ত্রাস গ্রাস করে ফেলে গোটা রাজধানীকে। এই গণহত্যার উত্তেজনা ও শোক আছড়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। হামলার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজে বাঁচতে ও অন্যদের বাঁচাতে যখন ব্যস্ত হয়ে পড়েন, ঠিক তখনই পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলের ওপর বেধড়ক লাঠি-টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। একইসঙ্গে নষ্ট করা হয় সেই রোমহর্ষক ঘটনার যাবতীয় আলামত। তবে শেখ হাসিনা মানবতার নেত্রী ও মনবতার সহিত বাংলাদেশ ও বাঙ্গালীকে আমৃত্যু ভালোবাসার নজির বিশ্ববাসীকে দেখাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পরও গ্রেনেড নয় বিরোধীদির দিকে একটা ঢিলও ছুড়ার নজির তৈরি করেন নি। আর এমন মানবতার দিক থেকেই শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়িয়ে এখন বিশ্বনেত্রীর আসনে আসিন। সর্বপরি ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও জননেত্রী শেখ হাসিনা আপার দীর্ঘ আয়ু কামনা করি।
রাশিক দত্ত
সভাপতি,
রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগ,
সাংগঠনিক সম্পাদক,
রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ।