কেন দেশবাসীর মধ্যে অস্বস্তিকর নীরবতা? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে দলগুলোর অন্দরে। তবে বেশি চিন্তিত যেনো বিজেপি। সোমবার(২০ মে) শেষ হয়েছে পঞ্চম ধাপের ভোট। সাত দফার লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ ধাপ ভোট হবে আগামী ২৫ মে। সপ্তম অর্থাৎ শেষ ধাপের ভোট হবে ১ জুন। একযোগে ফলাফল প্রকাশ হবে আগামী ৪ জুন। গত ১৯ এপ্রিল শুরু হয়েছিল প্রথম ধাপের ভোট।
বাকি দু’ধাপের ভোটের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে নড়েচড়ে বসেছে বিজেপির শীর্ষস্তরের নেতৃত্বে। সোমবার জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। দলের সব সাধারণ সম্পাদক ও উচ্চ স্থানীয়দের নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন নাড্ডা। ভোটের মাঝে বিজেপির এমন স্ট্র্যাটেজি বৈঠক এক কথায় নজিরবিহীন।
বৈঠকে অন্যতম আলোচ্য ছিল, ভোট শতাংশ হারে কেন এত ধস নামছে? শহর কিংবা গ্রাম, ভোট কেন কম পড়ছে? সেটা জানার জন্য দ্বিতীয় ধাপের ভোটের পরই, বিজেপি বিভিন্ন রাজ্যগুলোকে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাতে বলেছিল। বিজেপির কাছে চিন্তার কারণ হল, বিগত তিন বছর ধরে সবথেকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে বুথ স্তরের সংগঠনে। বুথস্তর কমিটি গঠন এবং তাদের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে দিয়েছিল। কিন্তু বিজেপির নিজের ভোটব্যাঙ্ক যেখানে শক্তিশালী, সেই রাজ্য এবং লোকসভা আসনগুলিতে কেন ভোটাররা বুথমুখী হচ্ছেন না?
দলের শীর্ষ নেতৃত্বরা মনে করছে, বিজেপির বুথস্তরের কর্মী ও নেতারাই ভোটারদের বুথে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হচ্ছেন। প্রতিটি ভোটপর্বেই দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের তুলনায় বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের হার কমেছে। সবথেকে বিস্ময়করভাবে কম ভোট পড়েছে মহারাষ্ট্রে। রাজ্যটিতে ভোট পড়েছে মাত্র ৪৯ শতাংশ। মহারাষ্ট্র নিয়ে এবার ইন্ডিয়া এবং এনডিএ -দুই পক্ষই আশা-আশঙ্কার স্রোত প্রবলভাবে বইছে। সেখানেই ভোটের হার কম কেন? উল্লেখ্য, প্রথম ধাপে ভারতে ভোট পড়েছে ৬৬.১৪ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে ৬৬.৭১, তৃতীয় ধাপে ৬৫.৬৯ , চতুর্থ ধাপে ৬৯.১৬ এবং পঞ্চম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০.০৯ শতাংশ। ফলে বিজেপির এই আশঙ্কা থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, বিজেপি শিবিরে কোনও ইস্যুই এবারের নির্বাচনকে দেশব্যাপী প্রভাবিত করতে পারছে না। এই প্রথম বিজেপির কোনও স্লোগান ভোটের ময়দানে সেভাবে সাড়া জাগাতে পারছে না। মোদির ‘গ্যারান্টি’ও না।
একই দশা বিজেপি বিরোধী দলগুলোয়ও। তাদের নিজেদের মধ্যেই কোনো সামঞ্জস্য নেই। যে বার্তা দিয়ে গতবছর ইন্ডিয়া জোট তৈরি হয়েছিল। তা অনেকটাই অস্তাচলে। প্রায় সবকটা আঞ্চলিকদলের দুর্নীতি সামনে আসছে। ফলে তাদের উপর ভোটাররা কতটা আশা রাখবে তা সংশয়ের বিষয়। তার উপর আঞ্চলিক দলগুলো একবার বলছে তারা জোটের সঙ্গে আছে। কিন্তু বাস্তবে একে অপরের কুৎসা করে ফেলছে। ফলে ভারতীয় ভোটররা আক্ষরিক অর্থেই বিভ্রান্ত!
এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ পশ্চিবঙ্গ। রাজ্যটিতে একদিকে মমতা, বাম এবং কংগ্রেস যখন বলছে তারা ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে আছে এবং সর্বশক্তি দিয়ে তারা বিজেপিকে পরাস্ত করতে চায়। আবার বাস্তবে দেখা যাচ্ছে একে অপরকে কুৎসা করে ভোট বৈতরণি পার করতে চাইছে। পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূলের একে বুথস্তরের নেতার অভিমত, বাংলায় এবারে জাল ভোট পড়েনি বললেই চলে। ফলে ভোটাররা কোন পক্ষের, তা ফল বের হওয়া আগেই বোঝা খুব মুশকিল।
দলের বসে যাওয়া বিক্ষুদ্ধ এক নেতা বলেছেন, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায় পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করছেন। বাংলায় বিজেপি নিজের শক্তিতে ৮-১০ আসন পেতে পারত। তারবেশি নয়। কিন্তু নেত্রী তাদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে দেবে। সংখ্যটা ২৫ হলেও অবাক হব না। ইচ্ছা করেই বিভিন্ন আসনে ভুল প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। হুগলীর রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমানে ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ, বা তমলুকে বিজেপির শক্তিশালী প্রার্থী সাবেক বিচারপতি অভিজিতের বিপক্ষে ২৬ বছরের দেবাংশুর মত প্রার্থী দেয়? এ ধরনের প্রার্থী দেওয়া মানেই বিজেপিকে এগিয়ে দেওয়া। নেত্রীর একমাত্র লক্ষ্য বাংলায় ক্ষমতা ধরে রাখা। কারণ ২০২৬ এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। এখন পাইয়ে দিলে তখন তিনিও পাবেন। ফলে জোটের পরিস্থিতি যদি এই হয় তাহলে মানুষ কিভাবে ভরসা রাখবে?