চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার দেয়া রানের পাহাড় টপকানোর চেষ্টায় বাংলাদেশের ব্যাটাররা। জিততে হলে অবশ্য বিশ্বরেকর্ড করতে হবে টাইগার ব্যাটারদের। নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২১৫ রান তাড়া করে ম্যাচ জয় করা বাংলাদেশ ব্যাট করছে ৫১১ রানের টার্গেট নিয়ে। চলতি সিরিজে অবশ্য দুইবারেই এমন বিশাল রানপাহাড়ে চাপ পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে।
স্পিননির্ভর বাংলাদেশ দুই টেস্টেই লঙ্কান ব্যাটারদের চেপে ধরার মিশনে ভালোভাবেই ব্যর্থ হয়েছে। দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম এবং মেহেদি হাসান মিরাজ ছিলেন পুরোদমে ব্যর্থ। তাদেরকে নিয়ে রীতিমতো রানের উৎসব সেরে নিয়েছিলেন সফরকারী ব্যাটাররা।
দুই টেস্ট মিলিয়ে ২৪৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট পেয়েছেন মিরাজ। আর ২৩৫ রান দিয়ে ২ উইকেট পেয়েছেন তাইজুল। এর মাঝে সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেই চার উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। চট্টগ্রাম টেস্টে ১৪৬ রানে পেয়েছেন কেবল ১ উইকেট। আর তাইজুল চট্টগ্রামে ছিলেন উইকেট শূন্য। সিলেটেও উইকেট পেয়েছিলেন দ্বিতীয় ইনিংসে এসে।
অথচ মিরপুরের শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামেই এই দুই বোলারের পরিসংখ্যান রীতিমত ঈর্ষা জাগানিয়া। মেহেদি হাসান মিরাজের কথাই ধরা যাক। শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে নিজের খেলা ১১ টেস্টে ৫৮ উইকেট পেয়েছেন এই অলরাউন্ডার। প্রতি ১৮.৭১ রানের বিনিময়ে একটি করে উইকেট পেয়েছেন। মিরাজের এরচেয়ে কম গড়ে উইকেট নেয়ার কীর্তি আছে কেবল হারারের মাঠে (১৬.৪৪)।
সেই মিরাজই সিলেটে ৩ ম্যাচে নিয়েছেন মোটে ৯ উইকেট। সেটাও ৩৩.৩৩ গড়ে। চট্টগ্রামের মাটিতে মিরাজের অবস্থা আরও শোচনীয়। ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা বোলিং ফিগার (৮০/৬) এই মাঠে এলেও তার গড় বেড়েছে ৩৫.৫৭ এ। সবমিলিয়ে দেশের মাটিতে মিরাজের গড় ২৫.৭৮। তবে দেশের বাইরে গেলেই তা হয়ে যায় ৪৬ এর বেশি।
তাইজুল ইসলামের অবস্থাও প্রায় একই। মিরপুরের শের-ই বাংলায় ২৪.৩০ গড়ে ১৫ ম্যাচে ৭৪ উইকেট পেয়েছেন ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ তকমা পাওয়া এই স্পিনার। যদিও তাইজুলের গড় ভালো সিলেটে। ২০ এর নিচে গড়ে ৩ ম্যাচে পেয়েছেন ২৪ উইকেট। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার (৩৯/৮) অবশ্য ঢাকাতেই।
খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ২ ম্যাচ খেলেছেন। ২৫.২৫ গড়ে শিকার করেছেন ১২ উইকেট। আর চট্টগ্রামে অপেক্ষাকৃত স্পোর্টিং উইকেটে ১২ ম্যাচে তাইজুলের শিকার ৪৭ উইকেট। তবে সেখানে প্রতি উইকেটের জন্য খরচ করেছেন ৩৮ রান। তাইজুলের দেশের মাটিতে গড় ২৮ এর ঘরে থাকলেও, দেশের বাইরে তা ৪৭ এর কাছাকাছি।
তবে এই দুজনের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন অবস্থা সাকিব আল হাসানের। দেশের স্পিন বোলিংয়ের আরেক বোলার তিনি। দেশে তার গড় ৩১ আর দেশের বাইরে ৩১.৭০। ঘরে-বাইরে যিনি সমান কার্যকর। শের-ই বাংলায় যার গড় ৩০.০৫, চট্টগ্রামে তার গড় হয়ে যায় ৩৩.০১। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে দেশের ক্রিকেটের বড় নাম হওয়া সাকিব যে সতীর্থদের তুলনায় কতখানি ধারাবাহিক, সেটা স্পষ্ট হয় এই ক্ষুদ্র পরিসংখ্যানেই।
এমনকি শের-ই বাংলার তুলনায় নিউজিল্যান্ডের হ্যাগলি ওভাল কিংবা মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সাকিবের গড় অনেকটা ভাল। মিরপুরের বাইরেও এতগুলো বছর নিজের কাজ ঠিকই করে গিয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার। কিন্তু বেলায় বেলায় শেষের প্রান্তে চলে এসেছেন সাকিব। তার পরবর্তী সময়ে এই দায়িত্ব ঠিক কে কীভাবে পালন করবেন, সেটাই হয়ত বড় দুশ্চিন্তা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য।