নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগিদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। সরকারীভাবে রোগিদের উন্নতমানের খাবার বরাদ্দ দেয়া হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালটির কিছু অসাদু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে বলে রোগিদের অভিযোগ। রোগিদের ভাষ্যমতে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগিদের এতোটাই নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হয় যা রোগিরা খেলে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন। রোগি ও অভিভাবকরা হাসপাতালের খাবারের মানের বিষয়ে অভিযোগ দিলেও কর্মকর্তারা বিষয়টি দেখছেন না।
জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত বরাদ্দে প্রতিটি রোগির জন্য সকালে ২৫০গ্রাম ওজনের পাউরুটি, একটি কলা, একটি ডিম, ৫০ গ্রাম চিনি। দুপুরে উন্নতমানের ২৫০গ্রাম চালের ভাত, ৯৫গ্রাম মুরগির মাংস (বয়লার) অথবা ১শ’ ১১ গ্রাম মাছ মাছ রুই কাতলা মৃগেল অথবা সিলভার কাপ, মশুর ডাল ৫০ গ্রাম মৌসুমী সবজি ১৫০ গ্রাম দিতে হবে। রাতেও ওই একই রকমের খাবার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও উন্নত মানের খাবারের মধ্যে সকালে ৫০গ্রাম সেমাই লাচ্ছা, একটি পাকা কলা, একশগ্রাম আপেল, ৫০গ্রাম চিনি। দুপুরের খাবারে ২শ’ গ্রামের বোলাওয়ের চালের ভাত, দেশি মুরগির মাংস ৭৫ গ্রাম, ৪১গ্রাম খাসি, ১শ’ গ্রাম ওজনের মিস্টি রসগোল্লা। রাতেও একই ধরনের খাবার সরবরাহ করার কথা। এছাড়াও ডায়রিয়ার রোগিদেও বিশেষ তথ্য কমলা, আপেল, ডাব, সবরি কলা দেয়ার কথা থধাকলেও রোগিরা তা পায় না।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রোগিদের উপরোক্ত খাবার দেয়ার কথা থাকলেও রোগিরা তা পায় না। রোগিরা বছরেও কোনো দিন খাসির মাংস বা দেশি মুরগির মাংস চোখে দেখতে পান না। ডিম কলা ভাত দেয়া হয় নিম্নমানের। রুই মাছের কথা বলা হলেও পুরো বছর সিলভার কাপ বা পাঙ্গাস মাছ দিয়ে রোগিদের খাবার সরবরাহ করা হয়। রোগিরা এসব খাবারের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো লাভ হয় না।
এদিকে, ১৩ মে শনিবার দুপরে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগিদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহ ও নানা অনিয়মের বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে যান স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক। তারা রোগিদের খাবার সরবরাহ দেখেন। তবে যে খাবার সরবরাহ করা হয় রোগিদের অভিযোগের বিষয়টির সাথে মিলে যায়। সাংবাদিকরা নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের বিষয়টি জানতে রোগিদের সাথে কথা বলেন। রোগিদের তথ্য মতে যে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে তা নিম্নমানের প্রমান মেলে।
জানা গেছে, আবাসিক মেডিকেল অফিসার প্রতিদিন (‘আরএমও) সশরীরে রান্না ঘরে এসে খাবারের পরিমাপ ও মান দেখার কথা থাকলেও তিনি তা করেন না। ঠিকাদারের লোকজন খাবার দিয়ে যাওয়ার সময় শুধু আরএমওকে মোবাইলে তা জানানো হয়। এমন কি ঠিকাদারের লোকজন বাজার যে করে দিয়ে যান তা দেখেন কুক মশালচি সাইদ। পরে তিনি আরএমওকে যা বলেন তিনি তা লিখে নেন। তিনি সরজমিন কোনো কিছু দেখেন না।
দেখা গেছে, এ হাসপাতালে বরাদ্দপত্রের সাথে পরিবেশন করা খাবারের মিল নেই। এসব বিষয় নিয়ে হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকরা টিএসও ডাঃ আরিফুল কবির ও আরএমও ডাঃ রাশিদুল ইসলামের সাথে দেখা করে হাসপাতালের নানা অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরেন। এসময় হাসপাতালে খাবার পরিবেশেনকারী ঠিকাদার মেসার্স রিয়া এন্টারপ্রাইজ এর প্রোপাইটর বিপুল হোসেন সাংবাদিকদের অন্যায় অশ্লীল অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ মারতে তেড়ে আসেন। পরে ওই ঠিকাদার বিপুল সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন, তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুমকি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হবে বলেও হুমকি দেন।
মোহনপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ইকবাল হোসেন জানান, বর্তমান সরকার সেবাখাতকে জনকল্যাণমূলক করতে নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। হাসপাতালে যারা ভর্তি থাকেন তাদের বেশিরভাগই গরিব রোগি। তাদের চিকিৎসার পাশাপাশি খাদ্য সরবরাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খাবারের মান নিয়ে যেহেতু রোগিদের অভিযোগ সেহুত এখানে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার বিষয়টি জড়িত।
একাধিক রোগিরা জানান, প্রতিদিন পোল্টি মুরগির মাংস কিংবা সিলভার কার্প জাতীয় মাছসহ নিম্নমানের খাবার দেয়া হয়। যা খাওয়ার অনুপযুক্ত। আবার নিম্নমানের খাবারের জন্য অনেক রোগি বা অভিভাবকরা নেন না। এসব খাবারের পুষ্টিমান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন রয়েছে। শুধু রোগিদের খাবারই নয়, এই ঠিকাদার ও আরএমও বিরুদ্ধে রোগি ভর্তি না থাকলেও তা রেজিস্ট্রার ভর্তি দেখিয়ে সরকারের বিপুল পরিমান টাকা লোপাট করার অভিযোগ রয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুল কবীর জানান, স্থানীয়রা বেশ কিছু দিন থেকে নিম্নমানের খাবারের অভিযোগ দিয়ে আসছিল। যার কারণে আমরা বিষয়টি তদরকি করছি। ঠিকাদারকেও এব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। আশা করা যায় সামনের দিনগুলোতে এমন অবস্থা থাকবে না। হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাশিদুল ইসলামজানান, নিম্নমানের খাবারের ব্যাপারে কোনো রোগি আমাদেরকে অভিযোগ দেয়নি। আমরা প্রতিনিয়ত খাবারের বিষয়টি তদারকি করি।