নিজস্ব প্রতিবেদক :
নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল হামিদ সরকার টেকন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মারমুখী আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
রোববার সকাল ১০টা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এই কর্মসূচি পালন করেন।
এর আগে একই দাবিতে শনিবার বিকালে নগরীর সাগরপাড়ায় নবনির্মিত রাজশাহী মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি ঠিকাদার হিসেবে নির্মাণ করেছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল হামিদ সরকার টেকন। তিনি কাজ করেছেন অত্যন্ত নিম্নমানের। সিঁড়ির টাইলস নড়বড় করছে। যে কোন সময় টাইলস খসে মুক্তিযোদ্ধারা পড়ে আহত হবেন।
এছাড়া শৌচাগারে নিম্নমানের ফিটিংস ব্যবহার করা হয়েছে। বৈদ্যুতিক সুইচগুলোও নিম্নমানের। চাপ দিলে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। এতে যে কোন সময় মুক্তিযোদ্ধারা বিদ্যুতায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মহানগরের সাবেক কমান্ডার আবদুল মান্নান ঠিকাদার আবদুল হামিদ সরকার টেকনকে ফোন করে এগুলো সংস্কার করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত শুক্রবার আবদুল হামিদ সরকার টেকন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে আসেন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রাজশাহী মহানগর ইউনিট আয়োজিত রোববারের মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সভাপতি ডা. আবদুল মান্নান। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাসার পরিচালনা করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে থেকে মোহাম্মদ আলী কামাল, নওশের আলী, মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম, সাইদুল ইসলাম, মতিউর রহমান, খন্দকার আবুল হাসান, নজরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ‘কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজটি পেয়েছিল অন্য একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানকে তাড়িয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল হামিদ সরকার নিজেই কাজ নিয়েছেন। তিনি কাজ করেছেন অত্যন্ত নিম্নমানের। এর প্রতিবাদ করায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গেই মারমুখী আচরণ করেছেন। এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার তদন্ত হতে হবে।’
তাঁরা ঘটনাটি তদন্তের জন্য সিটি করপোরেশনের মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার, রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি জানান। একইসঙ্গে নিম্নমানের কাজের বিষয়টিও তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। তা না হলে রাজশাহীর বীর মুক্তিযোদ্ধারা আবারও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
কাউন্সিলর আবদুল হামিদ সরকার টেকন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের ভাই। আর তিনি নিজে নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। প্রায় ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনি সাড়ে তিনতলা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করেন। প্রায় ১১ মাস আগে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এতে অর্থায়ন করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর আবদুল হামিদ সরকার টেকন বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল মান্নানের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। কাজে কোথাও ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে আমাকে ভাল করে বললেই হতো। কিন্তু তিনি ফোন করে আমাকে সেভাবে বলেননি। সেটাও বিষয় নয়। ঘটনার দিন আমি গিয়ে তাদের প্রহরী নিয়োগ করার জন্য বলেছি। আর বলেছি, আমি কি মানুষ না? এভাবে কথা বলেন? এতেই তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এলজিইডি থেকে বড় একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটা পেয়েছিল। তারা অনেক কাজ করে। তাই এই কাজটা না করে আমাকে দিয়ে তারা চলে যায়। আমি কাজটা করেছি। বীর মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানিত, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তাই কাজটা সুন্দরভাবেই করেছি। শুধু তাই নয়, কমপ্লেক্সের জমি বরাদ্দ পেতে এলাকার কাউন্সিলর হিসেবে আমি তাদের পাশে থেকেছি। ছোট ঘটনা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন দুঃখজনক।’