নিজস্ব প্রতিবেদক
গভীর শ্রদ্ধায় নানা কর্মসুচীর মধ্য দিয়ে রাজশাহীতে জাতীয় শোক দিবস পালিত হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় নগরীর সিএন্ডবি মোড়ে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। পরে পুষ্পস্তবক অর্পন করে সিটি কর্পোরেশনপর কাউন্সিলরসহ কর্মকর্তা কর্মচারীরা। সাড়ে দশটায় মহানগর আওয়ামীলীগ কুমারপাড়াস্থ দলীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিকে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কৃর্তপক্ষ বঙ্গবন্ধু হলের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। নগরীতে শোক র্যালী ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে রাজশাহী কলেজ। এছাড়াও শোক র্যালী ও আলোচনা সভা করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে রক্তদান কর্মসুচী ও দুঃস্থদের মধ্যে খাবার বিতরনের আয়োজন রয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
পিআইডি এক তথ্য বিবরণীতে জানায়. সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সভায় বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আজকে আমরা যে দিবস পালন করতে এসেছি এর অতীত ছিল অনেক নির্মম এবং নিষ্ঠুর। ৭৫’র এই দিনে ভোরবেলা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যা করা হয়, এমন কি তাঁর ১০ বছরের ছেলে রাসেলকেও হত্যা করে ঘাতকেরাÑ এই ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে কলঙ্কিত এক অধ্যায়।
ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সঠিক ভাবে জানতে হলে ব্যক্তি হিসাবে না- তাঁর নীতি ও আদর্শকে জানতে হবে। আমরা যদি তাঁর নীতি ও আদর্শকে সঠিকভাবে ধারণ ও লালন করি, তবেই আজকে এই দিনটি সার্থকভাবে পালিত হবে।
তিনি বলেন, নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেক মহল থেকে বঙ্গবন্ধুকে গণভবনের বাসায় ওঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল; কিš‘ তিনি উঠেননি। তিনি বলেছিলেনÑ ‘ধানমন্ডির ৩২নং রোডের ৬৭৭নং বাসা ছেড়ে গেলে আমি মানুষের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে যাব- আমি তা চাই না, আমি মানুষের পাশে থাকতে চাই।’ অনেকেই বলেছিল সেনা সদস্যরা আপনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে, তা শুনে বঙ্গবন্ধু হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেনÑ ‘পাকিস্তানি সেনারা ষড়যন্ত্র করে আমার কিছু করতে পারেনি, আর ওরা তো আমার নিজের মানুষ, ওরা আমার কিছুই করবে না।’ তিনি ছিলেন একজন নির্ভীক মানুষ।
৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রসঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ ১৮ মিনিটের ভাষণের মাধ্যমে বাঙ্গালি জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় এনে দিয়েছেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সেই জাতি কতটা নিষ্ঠুর তাঁর বুকেই ১৮টি গুলি করে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে।
আগেও ষড়যন্ত্র হয়েছে, এখনও ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করে তিনি সকলকে ষড়যন্ত্রের উর্ধ্বে থেকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান।
সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুল হাদী অনুষ্ঠানে আলোচক হিসাবে বক্তৃতা করেন।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনিসুর রহমান, আরএমপি’র কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, পুলিশ সুপার মো: সাইদুর রহমান আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মুক্তিযোদ্ধা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপ¯ি’ত ছিলেন। আলোচনা সভা শেষে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিভাগীয় কমিশনার।
এর আগে নগরীর বঙ্গবন্ধু চত্বরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, সং¯’া, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার মহান ¯’পতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি শোক র্যালি বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়।