• ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন
নোটিশ
রাজশাহীতে আমরাই প্রথম পূর্ণঙ্গ ই-পেপারে। ভিজিট করুন epaper.rajshahisangbad.com

রাজশাহীতে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরীর ২ হোতা গ্রেপ্তার

রিপোর্টার নাম:
সর্বশেষ: মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক 
রাজশাহীতে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট তৈরীর সরঞ্জাম, দেশী-বিদেশী ভূয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরীর মূল সরঞ্জামসহ ২জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, নগরীর পূর্ব মোল্লাপাড়া এলাকার মৃত কাবিল উদ্দিনের ছেলে আনিসুর রহমান ওরফে রেজাউল (৬৬) ও কোর্টবুলনপুর এলাকার রাজিব হোসেনের ছেলে শেখ রেজওয়ানুল করিম ওরফে সানিক (২২)। আনিসুর জাল কাগজপত্র তৈরীর মুল কারিগর। আর তার সহযোগি হিসেবে কাজ করতেন সানিক। সোমবার স›ন্ধ্যায় রাজশাহী র‌্যাব-৫ মোল্লাাপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা রাজপাড়া থানার পূর্ব মোল্লাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার ও ওই সরঞ্জমাদি উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া মালামালের মধ্যে রয়েছে-স্বাধীনতা সংগ্রামের ভূয়া ১৪ টি সনদপত্র, ঔঙণ ইঅঘএখঅ লেখা সম্বলিত ফাঁকা ১৫টি সনদটি, ২হাজার ৫৪৮টি বাংলাদেশী স্ট্যাম্প, ৮৩৩ টি পাকিস্তানী বিভিন্ন অঙ্কের স্ট্যাম্প, ভারতীয় বিভিন্ন অঙ্কের ২৫৩ টি স্ট্যাম্প, জাল-জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার নামীয় ও পদবী সম্বলিত ভূয়া সীল-২০৫টি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম সম্বলিত লোহার পাত ২টি ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম সম্বলিত লোহার পাত ২টি (যার সাহায্যে স্ট্যাম্পের পিছনে জল ছাপ দিয়া জালিয়াতির সাহায্যে বিভিন্ন ভূয়া দলিল প্রনয়ণ করা হয়), জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত দোয়াত কলম-৩টি, দোয়াত কালি-১টি, স্ট্যাম্প প্যাড-১টি, মোবাইল-২ টি, সীমকার্ড-৪টি। মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাব-৫ এর পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

র‌্যাব জানায়, আনিছুর রহমান দীর্ঘদিন যাবৎ ভূয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরীর কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি সুকৌশলে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রমাণক হিসেবে ব্যবহৃত অস্ত্র জমা দেয়ার ঔঙণ ইঅঘএখঅ লেখা সনদও প্রস্তুত করে দিতেন। তিনি ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও দলিল তৈরীতে সিদ্ধহস্ত। তার নিকট কেউ ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ, ভূয়া জামানত, ভূয়া দলিল চাইলে বিভিন্ন অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তৈরী করে দিতেন। ভূয়া দলিল দ্বারা জমি দখলদারদের পুরাতন পাকিস্তানী আমলের দলিলও নিজস্ব পন্থায় প্রস্তুত করে দিতেন। জাল দলিল প্রস্তুতির জন্য তিনি কালীকলম ব্যবহার করতেন। কারণ পাকিস্তান আমলে কালি-কলমে দলিল লেখা হতো। তিনি পুরাতন দলিল প্রস্তুত করণের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের সীল নিজে প্রস্তুত করে ব্যবহার করতেন। তার কাছে বিভিন্ন কর্মকর্তার সর্বমোট ২০৫ টি ভূয়া সীলমোহর পাওয়া যায়। তিনি নিজেকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ভূয়া জালদলিল প্রস্তুতকারক হিসেবে দাবী করেন। তার কাছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভূয়া দলিল প্রস্তুত করতে প্রতারক/জমি দখলকারীরা যোগাযোগ করেন। তিনি এ যাবৎ সহস্রাধিক জাল দলিলসহ বহু মুক্তিযুদ্ধের জাল সনদ প্রস্তুত করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। তিনি বিশেষ কেমিকেল ব্যবহার করে দলিলকে পুরাতন দেখানোর পন্থা আবিষ্কার করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি জাল দলিল প্রস্তুত করেন যা ধরার উপায় থাকে না। আনিসুর রহমান সম্পর্কে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যার দিকে র‌্যাব ৫ এর একটি দল রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানাধীন পূর্ব মোল্লাপাড়া এলাকায় মোঃ আনিছুর রহমান ওরফে রেজাউল করিমের বসতবাড়ীতে অভিযান চালায়। র‌্যাবের দলটি তার বাড়িতে পৌঁছা মাত্রই ২ জন ব্যক্তি কৌশলে পালানোর চেষ্টা করে। তবে র‌্যাব সদস্যরা তাদের ধরে ফেলে। এরপর সেখান থেকেই বিভিন্ন মালঅমাল উদ্ধার করা হয়।
র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে যে, তারা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে লোক চক্ষুর অন্তরালে এই বাড়িতে সংগোপনে জাল কাগজপত্র তৈরী করতেন। এবং এগুলো সরবরাহ করে মানুষের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিতো।
এ ঘটনায় রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানায় জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণা আইনে মামলা হয়েছে।

 


আরো খবর