নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে সামনে পেয়ে রাজশাহীর সংসদ সদস্য প্রার্থীরা নানান সংশয় আর অভিযোগের কথা তুলে ধরলেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপি হবে কি না সেই প্রসঙ্গও উঠে আসে মতবিনিময় সভায়। তবে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রার্থীদের সুষ্ঠু ভোটের বিষয়ে আশ^স্ত করেছেন। বলেছেন, যত প্রভাবশালীই হোকনা কেন নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে চলতে হবে সবাইকেই। রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
রাজশাহী সার্কিট হাউস মিলনায়তনে বুধবার সকালে মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে সেটা এই মুহুর্তে বলা যাবে না। তবে আমরা এবং প্রার্থীরা সকলে মিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চেষ্টা করছি। আমরা বিশ^াস করি, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দিতামুলক হবে এবং ভোটাররা আসবেন। এই বিশ^াস, প্রত্যয় আমাদের আছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এই নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন যারা প্রার্থী তাদের সাথে আমাদের মত বিনিময় হয়েছে। তারা কিছু কিছু সমস্যার কথা বলেছেন, তারা অত্যন্ত আন্তরিক। আমরা তাদের কথা শুনেছি, কমিশন শুনেছে। স্থানীয় প্রশাসন শুনেছে। সেই সমস্যাগুলো যদি সত্যি হয় তাহলে সেগুলো কিভাবে নিরসন করা যায় সেই গাইডলাইন আমরা দিয়েছি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আপনারা আশ্বাস রাখুন সকলের প্রয়াসে নির্বাচন সফল হবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
এসময় একজন সাংবাদিক জানতে চান নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বতাপূর্ণ না হলে সফল হবে কিভাবে ? তবে এবিষয়ে আর কোন কথা না বলে চলে যান সিইসি।
এদিকে, মতবিনিময় শেষে বের হওয়ার পর প্রার্থীরা জানিয়েছেন তারা সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য যে দাবি জানিয়েছে, সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাদের আশ^স্ত করেছেন।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাজশাহী-২ আসনের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, দুটো জিনিস খুব গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়েছে। একটা হলো লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড। আরেকটা হলো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না। নির্বাচনে কোন কারচুপি হবে কি না সেই প্রশ্নটা এসছে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার উদ্বুদ্ধ করেছেন, যেন সকলে ভোট দিতে যায়। ভোটে অংশ গ্রহণ করে। এবং প্রত্যেকে যেন নিজের ভোট নিজে দেয় সেব্যাপারে প্রার্থীদের যারা এজেন্ট থাকবে ভেতরে তারা কেয়ারফুলি জিনিসগুলো যেন হ্যান্ডেল করে। আপনারা যদি দেখেন যে একজনের ভোট অন্যজন দিয়ে দিচ্ছে আপনারা কোন অভিযোগ করছেন না তাহলে কিন্তু নির্বাচন কমিশন কিছু করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে এগুলো আস্বস্ত করেছেন। অনেক প্রার্থী নিজ নিজ এলাকা নিয়ে কমপ্লেন ছিলো। এলাকায় সন্ত্রাস হচ্ছে এসব কথা উঠেছে।
রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পবা মোহনপুর আসনের প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহোদর প্রার্থীদের ডেকেছিলেন শুভেচ্ছা বিনিময় এবং নির্বাচনী বিধি বিধান মেনে চলার বার্তা দেয়ার জন্য। নির্বাচন কমিশনের যেটা মুল বার্তা সেটা হলো, আপনি যতবড় প্রার্থীই হোন আর যত শক্তিশালি হোন নির্বাচনের যে আইন আছে সেই আইনের ব্যত্যয় ঘটলে আপনি ছাড় পাবেন না। এটি মেনেই চলতে হবে। আরেকটা ভালো বিষয় হলো বিভিন্ন প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদেরকে তারাও প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করবে। এটি একটি ভালো দিক।
রাজশাহী-১ আসনের প্রার্থী চলচিত্র অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি বলেন, উনি আশ^স্ত করেছেন সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে। যত বড়ই ক্ষমতাশীল মানুষ হোকনা কেন, ক্ষমতাশীল দল হোক না কেন, কাউকে তারা ছাড় দিবেন না। এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। কিন্তু ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনার দায়িত্বটা আমাদের। কার কত জনপ্রিয়তা সেটা দিয়ে যাতে আমরা ভোটারদের কেন্দ্রে আনি সেটাই।
প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা, ইসি সচিব জাহাঙ্গীর আলম, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান হুমায়ুন কবির, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, আএমপি কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
পরে সিইসি নির্বাচন উপলক্ষে রাজশাহী বিভাগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন।