আবারো আলোচনায় মাজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ১০ তলাবিশিষ্ট শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান হলের একাংশ ধ্বসে পড়েছে। এতে ৬ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এই ধ্বসের ঘটনার পর আবারো আলোচনায় এসেছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের বালিশকাণ্ডে আলোচিত মাজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন। কারণ রাবির এই ভবনটি নির্মাণ করছে আলোচিত এই প্রতিষ্ঠানটি। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্মাণ ত্রটির কারণেই ভবনের ঐ অংশ ধসে পড়ে। রাবি কর্তৃপক্ষ বলছে, ঘটনা তদন্ত করা হবে এবং কারো দায় পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান আবাসিক হলের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। মঙ্গলবার সকাল থেকে একটি অংশের বিম ঢালাইয়ের কাজ চলছিলো। বেলা ১২টার দিকে হঠাৎ সেই অংশটি ধসে পড়ে। নির্মাণ শ্রমিক, সাধারণ শিক্ষার্থী ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে উদ্ধার কাজ করে। এসময় আহত অবস্থায় ৬জনকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা এলাকার আজাদুল হক, চাপাইনবাগঞ্জ জেলার অনুপনগর এলাকার সিফাত ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের সিহাবকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা নির্মাণ শ্রমিক রাসেল (৩৩) বলেন, আমরা ৯ জন সেখানে কাজ করছিলাম। হঠাৎ করে বিকট শব্দ শুনি। এরপর আমরা পড়ে যাই। আমি মুখে সামান্য ব্যথা পেয়েছি। তবে, কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। নিচে কেউ চাপা পড়েছে কিনা আমার জানা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ছেলেদের আবাসিক হলের ছাদের জন্য বিমগুলোর ঢালাই কাজ চলছিল। এসময় অনাকাঙ্খিতভাবে বিমগুলো ধসে পড়ে। আহত শ্রমিকদের দ্রুত উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
এদিকে, রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবু সামা বলেন, ঘটনার খবর পেয়েই ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে। ৮টি ইউনিট এই উদ্ধার কাজ চালায়। মুলত ধসে পড়া রড বা ইট খোয়ার নিচে কেউ চাপা পড়ে আছে কি না এটির জন্যই উদ্ধার কাজটি চলে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ইট খোয়া, সিমেন্ট সরানো এবং রড কেটে জায়গাটি পরিস্কারের কাজ করে ফায়ার সার্ভিস। তখন পর্যন্ত নিচে চাপা পড়া কাউকে পাওয়া যায়নি।
আবারো আলোচনায় মাজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের বালিশকাণ্ডে বেশ আলোচিত ছিলো তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদেরই একটি মাজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। তাদের ওয়েবসাইটের সূত্রে জানাযায়, তারা বর্তমানে রাজশাহী বিশি^বিদ্যালয়, রুয়েট, সিটি কর্পোরেশনে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করছেন। তবে এবার আলোচিত এই প্রতিষ্ঠানটির একটি ভবনের একাংশ ভেঙ্গে পড়েছে। এই মাজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন রাজশাহীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজ পেয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম রুয়েটের যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগের ১০ তলা ভবন নির্মাণ কাজ, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ২০ তলা সাইন্স বিল্ডিং ও ১০ তলা বিশিষ্ট শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হল নির্মাণ কাজ।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৭০ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে দশতলা এই ভবন নির্মাণ শুরু হয়ে শেষ হওয়ার মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের জুন মাসে। তবে নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় পরে সময় বাড়ানো হয়। মঙ্গলবার ভবনটির একটি অংশে ছাদের জন্য বিম ঢালাই চলছিলো। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎই এই অংশটি ধসে পড়ে।
রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক ওহিদুল ইসলাম বলেন, নির্মাণ ত্রুটির কারণেই এই অংশটি ধসের ঘটনা ঘটেছে। কোন কিছু যদি ত্রুটি নাই থাকে তবে সেটি তো আর এমনি এমনি ভেঙ্গে পড়বে না।
এবিষয়ে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই ঘটনায় রাবি প্রশাসন সভা আহবান করেছে। সেখানেই এনিয়ে আলোচনা হবে।
মাজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড বিষয়ে তিনি বলেন, তারা রুয়েটেও কাজ পেয়েছে। তারা সিটি কর্পোরেশনেও কাজ পেয়েছে। তবে, এই কাজটি নিম্ন মানের বলে মনে হয়নি। যে কাজটি চলছিলো সেটির সাটারিং দুর্বলতা ছিলো বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আমরা এবিষয়ে পদক্ষেপ নিবো। আমরা মিটিং করবো। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো। উপাচার্য বলেন, আমি এখন গোটা কাজটি নিয়ে সন্দিহান। আমি এক্সপার্টদের ডেকে আনবো, যেটা করা দরকার করা হবে। এটির সাথে আমাদের অর্থ ও শিক্ষার্থীদের জীবন জড়িত। শিক্ষার্থীদের জীবনটার বড় গুরুত্ব।
এবিষয়ে কথা বলতে মাজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের টেলিফোন নম্বরে যোগযোগ করা হলে তাদের অফিসের একজন ফোন ধরে জানান, স্যারেরা সবাই বাহিরে আছে। তাদের সাথে যোগাযোগের নম্বর চাইলে তিনি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এভাবে মোবাইল নম্বর দেওয়া যায় না। এরপরই তিনি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।