• ঢাকা, বাংলাদেশ শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য হলেন সাংবাদিক মঈন উদ্দীন বাড়ির কাছেই মিলছে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ  বিভাগীয় কমিশনারের সাথে রাজশাহী প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সিন্ডিকেট ভাঙতে নগরীতে শিক্ষার্থীদের ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি আরএমপি কমিশনারের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় ব্র্যাকের কমিউনিটিভিত্তিক পর্যটন প্রকল্প ‘অতিথি’র যাত্রা শুরু নগর বিএনপির উদ্যোগে ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন রাজশাহীতে পুকুর দখলের চেষ্টার অভিযোগ, নিরাপত্তার দাবি চাষির রাজশাহীতে কৃষককে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান: নগরীতে সুপারির ভেতরে ১৪শ পিস ইয়াবা উদ্ধার
নোটিশ
রাজশাহীতে আমরাই প্রথম পূর্ণঙ্গ ই-পেপারে। ভিজিট করুন epaper.rajshahisangbad.com

রাসিক নির্বাচনে একমাত্র হিজড়া প্রার্থী সাগরিকা 

রিপোর্টার নাম:
সর্বশেষ: সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে কাউন্সিলর হিসেবে লড়ছেন হিজড়া জনগোষ্ঠির মানুষ সুলতানা আহমেদ সাগরিকার। তৃতীয় লিঙ্গের একমাত্র তিনিই প্রার্থী হয়েছেন। রাসিকের ১৯,২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী তিনি। তিনটি ওয়ার্ডে সমানতালে ছুটছেন সাগরিকা। এরই মধ্যে মানুষের মধ্যে একটা আলোচনার অংশও হয়েছেন তিনি। সাগরিকা বলছেন, তিনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই সাড়া পাচ্ছেন। মানুষ তাকে ভালোবাসছে। কেউ কেউ আবার বলছেন হিজড়া যদি কাউন্সিলর হয় তাহলে এই জনগোষ্ঠির চাঁদাবাজি বেড়ে যাবে। এর জবাবও গুছিয়েই দিচ্ছেন সাগরিকা।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সাগরিকা পাড়া মহল্লায় শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার ফেস্টুন টাঙ্গিয়ে ছিলেন। তখন থেকেই গুঞ্জন চলছিলো ভোটের মাঠে আসবেন তিনি। শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হয়ে সেটাই দেখালেন। সাগরিকা লড়ছেন আনারস প্রতীক নিয়ে।

সাগরিকা বলেন, তিনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হওয়ায় নবম শ্রেণিতে ওঠার পরে আর স্কুলে টিকতে পারেন নি। সহপাঠীদের নানা টিপ্পনির কারণে তিনি স্কুল ছাড়েন। শুধু তাই নয় সমাজের ও পারিপার্শ্বিক জনগণের লাগাতার অত্যাচার ও তার পরিবারকে প্রতিনিয়ত হেয়প্রতিপন্ন করায় এক সময় তাকে নিজ বাড়ি ও বাবা-মাকে ছাড়তে হয়েছে। এরপর শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। সমাজের অবহেলিত মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠায় নিজের মনের মধ্যে অনেকদিন দরেই এক ধরনের জেদ ছিলো প্রত্যাশা ছিলো এই সমাজের মাঝে তিনিও প্রতিনিধিত্ব করতে চান। হিজড়া জনগোষ্ঠিকে সমাজ তেকে বিচ্ছিন্ন করে নয় তাদেরকে সাথে নিয়েই উন্নয়নের কথা ভাবতে হবে। এই ম্যাসেজটি তিনি বহু আগে থেকেই দিতে চেয়েছিলেন। তারই অংশ হিসেবে তিনি এবারে জনপ্রতিনিধি হবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এবং সেই লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের সন্তানেরা অন্য গ্রহের মানুষ নয়। তারা এই পরিবার, সমাজ তথা দেশের মানুষ। তারাও কোন কোন বাবা-মায়ের মাধ্যমে এই পৃথিবীতে এসেছেন। তারাও মানুষ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এক শ্রেণির মানুষ তাদের মানুষ হিসেবে মানতে চায় না। অথচ সরকার তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। সরকারের এই স্বীকৃতি ও ভোটার হওয়ার কারনে তিনি আজ অন্যান্যদের সাথে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারছেন বলে তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

সাগরিকা বলেন, সমাজের সকল বাধা অতিক্রম করে তিনি এখন জনগণের সেবা করতে চান। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও যে সকলের ন্যায় মানুষকে ভালবাসতে পারে এবং জনগণের সেবা করতে পারে তা তিনি দেখানোর জন্যই সমাজ সেবায় আসতে চাচ্ছেন। আর এই সুযোগটা করে দেয়ার জন্য অত্র ওয়ার্ডবাসীর নিকট দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করেন সাগরিকা।

সাগরিকা বলেন, মূলত একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য কাজ করছেন। যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি জনসাধারণের ও তার সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকারের কথা বলতে পারবেন। মাঠপর্যায়ে প্রতিদিনই মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন নানা বিষয়ে। মানুষ ভিন্ন ধরনের নেতৃত্ব চায়। হিজড়াদের যোগাযোগ ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে বেশি। নারী কাউন্সিলররা রাত-বিরাতে চলতে পারেন না। পুরুষেরাও নারীদের নিয়ে কাজ করতে দ্বিধা-দ্বন্দে ভোগেন। কিন্তু হিজড়াদের বেড়ে ওঠাটাই অন্যদের থেকে আলাদা। তারা যেকোনো সময় মানুষের বিপদ-আপদে দাঁড়াতে পারেন।

ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানিয়ে সাগরিকা বলেন, ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নানা কথা ছড়াচ্ছেন। তারা বলছেন যে, হিজড়া জনপ্রতিনিধি হলে অত্যাচার বেড়ে যাবে। হিজড়াদের সম্পর্কে আগে যে ধ্যানধারণা ছিল, তা সামনে আনার চেষ্টা করছেন তারা। তবে জনগণ তাদেরও ভালোবাসতে শিখে গেছে। অনেক জায়গায় তাদের সম্প্রদায়ের জনপ্রতিনিধিরা ভালো করছেন। তিনিও সব বাধা অতিক্রম করে ভাল কাজ করবেন। আর এই সুযোগটা করে দেবেন ভোটারগণ।

সুলতানা আহমেদ সাগরিকা ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘের সাধারণ সম্পাদক। ২০০০ সালে ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’ নামের সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৫ সালে মহিলা অধিদপ্তর ও ২০০৭ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায় সংগঠনটি। তিনি হিজড়াদের ভোটাধিকার, বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশীদারত্ব নিয়ে কাজ করেছেন।

সাগরিকা প্রতিদিনই ছুটছেন তার নির্বাচনী এলাকায়। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন। নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি। তিনি এলাকার মানুষকে উপহার হিসেবে এম্বুলেন্স দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সাথে সবসময় মানষের বিপদ আপদে পাশে থাকার ঘোষণা দিচ্ছেন। সাগরিকা বলেন, তিনি আগে থেকেই এই ওয়ার্ডগুলোর মানুষের সঙ্গে পরিচিত। নির্বাচনের মাঠ তিনি নিজের করে নিতে পেরেছেন। ভোটাররা বিকল্প চান, তিনি সেই বিকল্পের প্রতীক। তারা সহজভাবে গ্রহণ করছেন তাকে। তবে কিছু মানুষ বাজে কথা বলছেন। সাগরিকা বলছেন, আমি মাঠের বর্তমান চিত্র দেখে আশাবাদি। খুব আশাবাদি। মানুষ বিকল্প খুঁজছে। আমিই সেই বিকল্প। আশাবাদি আমি মানুষের ভালোবাসায় বিজয়ী হতে পারবো। এবং মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পাবো।


আরো খবর