নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে তৃতীয় লিঙ্গের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। তার নাম সুলতানা আহমেদ সাগরিকা। শহরের ১৯, ২০, ২১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত আসন-৭ এর কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন তিনি।
তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী থেকে সাগরিকাই কেবল কোনো পদে একমাত্র প্রার্থী। এই নির্বাচনে তিনি আনারস প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন।
শুক্রবার জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। সেখানে সংরক্ষিত আসন-৭ এর ছয় প্রার্থীর মধ্যে তিন জন আনারস প্রতীক চান। শেষ পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে আনারস প্রতীক পান সাগরিকা। পছন্দের প্রতীক পাওয়াকে নিজের ‘প্রাথমিক জয়’ হিসেবেই দেখছেন তিনি।
সাগরিকা বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত গুজব তৈরি করছেন। আমি তাদের স্বাগত জানাই। গুজব ছিল, আমার নমিনেশন বাতিল করা হয়েছে। আমি মার্কা পাব না। আজ দেখিয়ে দিতে চাই। এই দেখুন আনারস। লটারির মাধ্যমে আমি আনারস জয় করেছি। প্রাথমিক জয় হয়েছে আমার।’
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে কোনো জনগোষ্ঠীকে ফেলে রেখে নয়। সবাইকেই সঙ্গে নিতে হবে। সে জন্য আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমাদের ভয়েস পৌঁছাতে হবে সিটি কর্পোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ এবং সংসদে। কারণ, আমাদের ব্যাপারে সরকারের কাছে ভুল তথ্য যায়। আমরা যদি প্রতিনিধিত্ব করতে পারি, তাহলে সঠিক তথ্যটাই সরকার পাবে। আমরা আমাদের জনগোষ্ঠীর চাহিদাটাও রাষ্ট্রকে বলতে পারব।’
দুই বছর ধরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানিয়ে সাগরিকা বলেন, ‘দুই বছর ধরে আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্বাচিত হলে তিনটি ওয়ার্ডেই সংরক্ষিত কাউন্সিলরের চেম্বার করে দেব, অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেব, সকল নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করব, ধর্মীয় শিক্ষার জন্য এলাকাভিত্তিক সুযোগ তৈরি করব, সুখে-দুঃখে হটলাইন নম্বরের মতো এলাকার পাশে থাকব। আশা করি নির্বাচন কমিশন কোনো বিতর্কিত নির্বাচন উপহার দেবে না। জনগণ ভোট দিয়ে তার পছন্দের যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেবে।’
সাগরিকার বাড়ি নগরীর শাহমখদুম থানার শিল্পীপাড়া এলাকায়। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হওয়ায় নবম শ্রেণিতে ওঠার পরে আর স্কুলে টিকতে পারেননি। সহপাঠীদের নানা টিপ্পনীর কারণে স্কুল ছাড়েন। একসময় ছাড়তে হয়েছিল বাবা-মাকেও। এরপর শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। এখন সাগরিকা মা ও বোনের কাছে থাকেন।
হলফনামার তথ্যমতে, সুলতানা আহমেদ সাগরিকার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাশ। মৌসুমি ব্যবসা করে তার বার্ষিক আয় ১ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে তার আছে এক ভরি স্বর্ণ এবং ৮০ হাজার টাকার আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী। নিজের হাতে নগদ কিংবা ব্যাংকে কোনো টাকা নেই। নিজের কোনো বাড়িও নেই। থাকেন টিনশেড ভাড়া বাড়িতে। সাগরিকার কোনো জায়গা-জমি নেই। তার নামে কোন মামলা নেই, কোনও ঋণও নেই।