নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২০১৮ সালের তুলনায় এবার শিক্ষিত, ব্যবসায়ী ও কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এই তথ্য জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। শনিবার রাজশাহী নগরের একটি রেস্তরাঁয় সুজন রাজশাহী জেলা কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে রাসিক নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজন এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। তিনি বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তেমন প্রতিযোগতিামুলক না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বিএনপিসহ অন্যান্য কয়েকটি সংগঠন নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। রাসিক নির্বাচনে যেন প্রকৃত অর্থেই গণরায়ের প্রতিফলন ঘটে সেই প্রত্যাশা করা হয় সুজনের পক্ষ থেকে।
সুজন এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ সরকার বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৫ লক্ষ টাকার কম স¤পদের মালিক ছিলেন ৬৭ দশমিক ২৮ভাগ প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে এই হার ৫০ভাগ। অপরদিকে এবারে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। গত নির্বাচনে কোটিপতির হার ১ দশমিক ৮৪ ভাগ থাকলেও, এবারের নির্বাচনে তা হয়েছে ৩ দশমিক ৭০ভাগ। ২০১৮ সালে কোটি টাকার অধিক উপার্জনকারী কোনো প্রার্থী না থাকলেও এবারের নির্বাচনে ৩ জন (১ দশমিক ৮৫ভাগ) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দিলীপ কুমার সরকার জানান, নির্বাচনে চারজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজনের বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকার কম আর একজনের ৫ কোটি টাকার অধিক। তিনজন মেয়র প্রার্থীর আয়করের তথ্য পাওয়া গেছে। তার মধ্যে দুজন ৪ হাজার টাকা কর প্রদান করেছেন আর একজন ৫১ লাখ টাকা কর প্রদান করেছেন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি, সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি, ভূমিদস্যু, কালোটাকার মালিক, কোনো অসৎ, অযোগ্য ও গণবিরোধী ব্যক্তিকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এই নির্বাচন নিয়ে সুজনের প্রত্যাশা তুলে ধরে বলা হয়, সব দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ না হলেও যেসব দল ও প্রার্থীরা এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তারা সবাই যেন নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের কাছে সম-সুযোগ ও সম-আচরণ পান। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন, সরকার, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব অংশীজন নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজ নিজ ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করে এই নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করবেন। তাদের প্রত্যাশা, যেন এই নির্বাচনে প্রকৃত অর্থেই গণরায়ের প্রতিফলন ঘটে।
বরিশালের নির্বাচনের পর ইসলামী আন্দোলন সিলেট ও রাজশাহীর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় এই দুটি নির্বাচন আরও প্রতিযোগিতাহীন হয়ে পড়বে বলে মনে করে সুজন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৩ সালের নির্বাচনে স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর (এসএসসি ও তার নিচে) হার কমেছে। ২০১৮ সালে এই হার ছিল ৫৪ দশমিক ৩৭ ভাগ, যা এবার ৫২দশমিক ৩৭ভাগ। অপরদিকে উচ্চ শিক্ষিত (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী) প্রার্থীর হার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালের ২৫ দশমিক ৩৪ ভাগ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালের নির্বাচনে এই হার দাড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৬৩ ভাগে। সল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার হ্রাস পাওয়া এবং উচ্চ শিক্ষিত প্রার্থীর হার বৃদ্ধি পাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে সুজন।
২০১৮ সালের নির্বাচনের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে, এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার হার গতবারের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালে প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ীর হার ছিল ৪৮ দশমিক ৩৮ভাগ। এবারের নির্বাচনে তা দাড়িয়েছে ৫৮ দশমিক ৬৪ভাগ।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী জেলা সুজনের সভাপতি আহম্মেদ শফিউদ্দিন, মহানগর সুজনের সভাপতি পিয়ার বখশ্, জেলা সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম, সুজন রাজশাহীর সমন্নয়কারী মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।