• ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:৫৭ অপরাহ্ন
নোটিশ
রাজশাহীতে আমরাই প্রথম পূর্ণঙ্গ ই-পেপারে। ভিজিট করুন epaper.rajshahisangbad.com

শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ফেরার পথে আওয়ামী লীগ কর্মী খুন

রিপোর্টার নাম:
সর্বশেষ: বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ফেরার পথে আওয়ামী লীগ কর্মী খুন
শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ফেরার পথে আওয়ামী লীগ কর্মী খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে জিয়াউর রহমান (৩৬) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী খুন হয়েছেন। মঙ্গলবার দিনগত গভীর রাতে তালন্দ ইউনিয়নের বিলশহর গ্রামে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। গতকাল বুধবার ভোরে গ্রামের একটি সড়কের প্রান্ত থেকে তার ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করেছে তানোর থানা পুলিশ।
নিহত আওয়ামী লীগ কর্মী জিয়াউর রহমান তালন্দ ইউনিয়নের বিলশহর গ্রামের মহির আলী মণ্ডলের ছেলে। তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
গত সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলার রাব্বানীর কাঁচি প্রতীকের পক্ষে কাজ করায় জিয়াউরকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। বিষয়টি তিনি কয়েকবার পুলিশকেও জানিয়েছিলেন। পুলিশ ঘটনার পর গ্রাম থেকে তিন আওয়ামী লীগ কর্মীকে আটক করেছেন।  এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দিনগত গভীর রাতে তানোর উপজেলা সদরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে নিজের মোটরসাইকেলে করে পাঁচ কিলোমিটার দুরে নিজ বাড়ি বিলশহর গ্রামের দিকে চলে যান জিয়াউর। বুধবার ভোরের দিকে পুকুরে মাছ ধরতে যাওয়া লোকজন সড়কের পার্শ্ববর্তী একটি জায়গায় জিয়াউরের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন। সকাল আটটায় তানোর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জিয়াউরের মরদেহ উদ্ধার করেন। জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউরকে শক্ত কোন বস্তু দিয়ে প্রথমে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। এরপর মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারাল অস্ত্র দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করার পর পেটে কয়েকবার  ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। অন্য কোথাও হত্যা করে জিয়াউরের মরদেহ বিলশহর গ্রামের উত্তরপ্রান্তে ফেলে দেওয়া হয় বলে পুলিশ জানিয়েছেন। পূর্ব শক্রতার জের ধরে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তানোর থানা পুলিশ। মরদেহের পাশে তার মোটরসাইকেলটিও পড়েছিল।
জানা গেছে,  জিয়াউর রাজশাহী-১ ( গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানীর চাচাত ভাই। গোলাম রাব্বানী অভিযোগ করে বলেছেন, গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে জিয়াউর তার পক্ষে ব্যাপকভাবে কাজ করেন। ওই নির্বাচনে তার ব্যাপক ভুমিকার কারণে লালপুর স্কুল ভোট কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁচি প্রতীক, নৌকা প্রতীকের চেয়ে ছয় শতাধিক ভোট বেশি পেয়েছিল। ভোটের পর থেকে প্রতিপক্ষের ব্যাপক হুমকিতে ছিলেন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা জিয়াউরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী।
এদিকে, এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তালন্দ ইউপি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান মেম্বারের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছে। নিহত জিয়াউর ছিলেন বাবু চেয়ারম্যানের পক্ষের লোক। গত সংসদ নির্বাচনে বাবু চেয়ারম্যানসহ তার পক্ষের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। গত ৭ জানুয়ারি ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরদিন এলাকার সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হাসান মেম্বারের নির্দেশে নিহত জিয়াউরের একটি গভীর নলকুপে তালা মেরে দেন। গত কয়েকদিন আগে নিহত জিয়াউরের একটি কাঁচামালের গুদামে অগ্নিসংযোগ করা হয়। জিয়াউরকে এলাকা ত্যাগের জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল হাসান মেম্বারের ক্যাডাররা।
এলাকাবাসী আরও জানায়, গত কিছুদিন ধরে হাসান মেম্বারের সশস্ত্র ক্যাডার ফরহাদ, শাওন, মিঠু, ও হাসান মেম্বারের ভাই হাকিম বাবুসহ ক্যাডাররা নিহত জিয়াউরকে নারায়ণপুর বাজার মোড়ে ঘেরাও করেছিল। কিন্তু জিয়াউর দ্রুত মোটরসাইকেলে চড়ে স্থান ত্যাগ করায় ওই দিন প্রাণে বেঁচে যান। বুধবার ভোরে পুলিশ ফরহাদ, শাওন ও হাসান মেম্বারের দ্বিতীয় স্ত্রী ফুলবানুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে গেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মেম্বারসহ তার ক্যাডাররা ঘটনার পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।
ঘটনার বিষয়ে তানোর থানার এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, জিয়াউর হত্যায় জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করেছে।


আরো খবর