বিজয়ের আবেগে উল্লোসিত হয়ে কেউ যাতে আর সহিংসতা করতে না পারে সেজন্য দলীয় নেতা কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত। নতুন করে কেউ যাতে আর কোন সহিংসতা বা লুটপাটের ঘটনা যাতে কেউ ঘটাতে না পারে সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী বিএনপি’র দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহবান জানান। রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির আয়োজনে রাজশাহীতে চলমান অনাকাংখিত বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি নেতা সৈয়দ শাহীন শওকত বলেন, দেশে স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীন দেশে আর কোন প্রকার রাহাজানী ও লুটপাত করতে দেয়া হবেনা। গতকাল সোমবার বাকশালী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে দেশের সকল মানুষ আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েন। দেশবাসী সবাই রাস্তার নেমে আসেন এবং আনন্দ করেন। এই ফাঁকে কিছু দুস্কৃতিকারী এই ডামি সরকারের সন্ত্রাসীরা বিএনপিসহ স্বাধীনতাকামী শিক্ষার্থীদে মধ্যে মিশে তারা সন্ত্রাসী ও লুটপাট করছে। বিএনপি এটা সমর্থন করেনা বলে উল্লেখ করেন তিনি। এই লুটপাট রুখতে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগি নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি। শহর এবং পাড়া মহল্লায় এজন্য মাইকিং করার আহবান জানান নেতা কর্মীদের।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপি ও সদস্য দেবাশিষ রায় মধু, রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, ওয়ালিউল হক রানা, আসলাম সরকার, জয়নাল আবেদিন শিবলী, বজলুল হক মন্টু, জেলা বিএনপি’র সদস্য রায়হানুর আলম রায়হান, গোলাম মোস্তফা মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সোমবার বিকেলে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে রাজশাহীতে শুরু হয় ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ, বিজয় মিছিল। এ সময় উৎসুক জনতা আগুন ধরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন স্থাপনায়। ভাঙচুর করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। রোববার দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
বিকেলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সদর দপ্তরে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে পুলিশের কয়েকটি গাড়ি পুড়ে যায়। আগুন দেওয়া হয় আরএমপির বেশিরভাগ থানা ও ফাঁড়িতে। নগর ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। নগর ভবনের কক্ষগুলো থেকে ফ্যান ও এসিসহ আসববাবপত্র খুলে নিয়ে যায় সাধারণ মানুষ।
নগরীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার ও রিসোর্টে ভাঙচুর করা হয়েছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলা চালাতে গেলে সেনা সদস্যরা তা প্রতিহত করেন।
উপশহরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নগরীর রানীবাজারে লিটনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। ভবনটিতে থাকা কয়েকটি পোশাকের শোরুমও ভাঙচুর করা হয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের বহুতল ভবন ‘সরকার টাওয়ার’-এ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
কুমারপাড়ায় মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দলীয় কার্যালয়ের পাশে থাকা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ম্যুরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগের পুরোনো দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করা ও আগুন দেয়া হয়েছে।
নগরীর রেলগেট এলাকায় ডালাস হোটেলে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নিউমার্কেট এলাকায় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন বহুতল ভবন ‘থিম ওমর প্লাজায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
এছাড়া, নগরীর প্রায় সব এলাকায় আওয়ামীলীগ নেতাদের স্থাপনা ও কার্যালয় ভাংচুর করা হয়। বেশিরভাগ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় ভাংচুর ও আগুন দেয়া হয়।