রাজশাহী শহরঘেঁষা পবা ও উত্তরের মোহনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৩ আসন। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) চারপাশ ঘিরে থাকা জাতীয় সংসদের ৫৪ নম্বর এই আসনটিকে সদরের পর রাজশাহীর গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তৃণমূলের তুমুল নেতা হিসেবে পরিচিত রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পুরস্কার হিসেবে প্রথমবারের মতো নৌকা প্রতীক পেয়েছেন তিনি। প্রতীক পেয়েই নিজের নির্বাচনি এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। বলা যায়, তিনি একাই পুরো পবা ও মোহনপুরে জমজমাট নির্বাচনী আমেজ তৈরী করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে রাজশাহী সংবাদ।
রাজশাহী সংবাদ : প্রথমবারের মতো দলীয় নৌকা প্রতীক পেয়ে কেমন লাগছে ?
আসাদুজ্জামান আসাদ : নৌকা পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতীক। এই প্রতীককে ধারণ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, এই প্রতীকের কারণে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে বিজয় লাভ করেছি। এই প্রতীককে ধারণ করে ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছে। যে প্রতীকে বঙ্গবন্ধুর হাতের ছোঁয়া আছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আছে, সেই প্রতীক পাওয়া অবশ্যই সৌভাগ্যের বিষয়।
রাজশাহী সংবাদ : জনগণ কেন আপনাকে ভোট দেবে?
আসাদুজ্জামান আসাদ : জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণ তাদের একজন ভাই তথা ভালোবাসার মানুষকে দেখতে চায়। যিনি বিপদে পাশে দাঁড়াবে, সুপরামর্শ দিয়ে সামনে এগিয়ে নেবে। আমি তৃণমূলের মানুষ হওয়ায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না হয়েও জনগণের পাশে ছিলাম। কোন স্বার্থ নিয়ে নয়, ভালোবাসার টানে মানুষের পাশে থাকি আমি। জনগণও আমাকে ভালোবাসে। সেই ভালোবাসায় আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে জনগণকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। এই এলাকার মানুষের সাথে আমার পথ চলা বহু বছরের। আমার জন্মও এই পবা উপজেলার ভুগরইল এলাকায়। আমার ছোট বেলার গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় কেটেছে সেখানেই। সেই থেকে এখন পর্যন্ত আমি এই অঞ্চলেই রয়েছি। এই এলাকার মানুষের সাথে আমার সম্পর্কটা অনেক গভীর। রাজনৈতিক সম্পর্ক শুধু নয়, আত্মার সম্পর্ক বলা চলে। এই এলাকার মানুষের ভালোবাসা পাওয়া আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক দিনে নির্বাচনী প্রচারে নেমে তাদের অফুরান ভালোবাসা দেখেছি। শুধু রাজনৈতিক কর্মী নয়, গ্রামের অগনিত সাধারণ মানুষ তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করেছে। এই এলাকার মানুষের এসব ভালোবাসা আমার আত্মবিশ^াসকে বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের এই ভালোবাসা এখন আমার বড় শক্তি। বড় আস্থার জায়গা।
রাজশাহী সংবাদ: নির্বাচিত হলে পবা-মোহনপুরকে কোন জায়গায় দেখতে চান?
আসাদুজ্জামান আসাদ : স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য সরকারের যতটুকু সাপোর্ট প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু নিয়ে এসে রাজশাহী-৩ আসনকে রোল মডেল করতে চাই। এই এলাকার মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের যে প্রত্যাশা করে আমি সেটা করতে চাই। পুরানো রাস্তার সংস্কার যেমন দরকার তেমনি নতুন কিছু রাস্তার দাবি রয়েছে স্থানীয়দের।
আমি এলাকায় ঘুরে একটা বিষয় উপলব্ধি করেছি যে, এই এলাকার মানুষ শান্তিপ্রিয়। তারা নিজেরা নিজের মত করে বাঁচতে চান, সম্মান নিয়ে বাঁচতে চান। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চান না। তাদের এই চাওয়াগুলোর প্রতি আমার শতভাগ সমর্থন থাকবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সংসদ সদস্য সম্পর্কে বিরুপ ধারনা রয়েছে। এই পদটা সম্পর্কেই তারা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোশন করেন। আমি এটি ভাঙ্গতে চাই। এই পদটাকে আমি সম্মানিত করতে চাই। আমি নির্বাচিত হলে মানুষের সাথে এমনভাবে কাজ করতে চাই যাতে এই পদটাকে মানুষ সম্মান করে, ভালোবাসে।
রাজশাহী সংবাদ : কৃষি সমৃদ্ধ এলাকা পবা-মোহনপুর। এই কৃষির উন্নয়নে আপনার ভাবনা জানতে চাই।
আসাদুজ্জামান আসাদ : কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও বাজারজাতকরণে মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা খেয়ে ফেলে। মোহনপুরের পান বিখ্যাত। এছাড়া পবা-মোহনপুর আলুসহ বিভিন্ন ধরণের সবজি ও ফলফলাদিতেও সমৃদ্ধ, যা ঢাকা হয়ে দেশেরও বাইরে যায়। তাই রাজশাহীর শাহ্ মখদুম বিমানবন্দর থেকে কার্গো বিমান চালু করা সম্ভব হলে রাজশাহীতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য পৌঁছে যাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, অপরদিকে কৃষকেরা তথা কৃষির সাথে যারা জড়িত তারাও লাভবান হবে। পাশাপাশি বিমানবন্দরটি এতোদিন এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে না পারলেও কার্গোর হাতধরে হয়ে উঠবে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। ফলে নির্বাচিত হলে কার্গো বিমান চালুর চেষ্টা করবো। পাশাপাশি বিমানবন্দরটিকে আধুনিকায়ন করা হবে।
রাজশাহী সংবাদ : পবা উপজেলার বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী চরে বসবাস করেন। তাদের জীবনমান উন্নয়নে কি করতে চান?
আসাদুজ্জামান আসাদ : চরে এক সময় অনেক মানুষ বাস করতেন। নানা সংকটের কারণে তাদের অনেকেই শহরমুখী হয়েছেন। তবে যারা আছেন তাদের জন্য চর উন্নয়ন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে চর আধুনিকায়ন হচ্ছে। চরে সৌরবিদ্যুৎ থেকে যেখানে সম্ভব বিদ্যুৎ যাচ্ছে, ঢালাইয়ের রাস্তা তৈরি হচ্ছে, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা আধুনিকায়ন হচ্ছে। এককথায় শহর উপযোগী গ্রাম গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা সরকারের আছে সেই পরিকল্পনাটির অংশ হিসেবে চর উন্নয়ন প্রকল্প নাম দিয়ে পবার তিনটি চরে আধুনাকায়নের কাজটি করা হবে।
রাজশাহী সংবাদ: শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
আসাদুজ্জামান আসাদ: আমার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গঠনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। পবা-মোহনপুরবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ। মানসম্মত, যুগোপযোগী শিক্ষাবান্ধব ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডি গঠনে বিশেষ দৃষ্টি প্রদান। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সরকারিকরণ ও এমপিওভুক্ত করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ স্থাপন। খেলার মাঠসমূহের আধুনিকীকরণসহ নিয়মিত খেলাধূলার ব্যবস্থা ও প্রতিযোগিতার আয়োজন। গরীব, দুঃস্থ ও অসহায় শিক্ষার্থীদের সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি স্থানীয় উদ্যোগে সহযোগিতার ব্যবস্থা করা। স্বাক্ষরতার হার ১০০ ভাগে উন্নীত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টির লক্ষ্যে পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
রাজশাহী সংবাদ: কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কী করতে চান?
আসাদুজ্জামান আসাদ: দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষন প্রদান পূর্বক আউট সোর্সিং, আত্মকর্মসংস্থান, ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি পূর্বক বিভিন্ন পন্থায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারি/বেসরকারি উদ্যোগে আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
রাজশাহী সংবাদ: পবা মোহনপুরের সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে আপনার বার্তা কী ?
আসাদুজ্জামান আসাদ: এই এলাকার মানুষের কাছে আমার সবিনয় চাওয়া, আপনারা আমার নির্বাচনী প্রচারে যেভাবে স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করেছেন, আমার প্রতি যেভাবে সম্মান দেখিয়েছেন সেটি যেন আজীবন থাকে। আমি আপনাদের সাথে নিয়েই এলাকার জন্য কাজ করতে চাই। আমি যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই তাহলে আপনাদের মতামতের গুরুত্ব বাড়বে। আপনাদের চাওয়াগুলোর প্রতি আমার যথাযথ সম্মান থাকবে। ভোটের আগে নানান ধরনের অপপ্রচার চলে। এসবে আপনারা আগে যেমন কান দেননি, এখনো দিবেন না। এবারের নির্বাচনটি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ন। সাধারণ ভোটারদের কাছে আমার নিবেদন কেন্দ্রে আসুন, ভোট দিন। আপনার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে উন্নয়নের অংশিদার হোন।
উল্লেখ্য, রাজশাহী-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৮০ জন, মহিলা ভোটার ২ লাখ ৪৭৮ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার আছেন ৩ জন।
এই আসনে নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদের সাথে ভোটের মাঠে রয়েছেন বিএনএমের প্রার্থী মতিউর রহমান মন্টু, এনপিপির প্রার্থী সইবুর রহমান, বিএনএফ-এর প্রার্থী বজলুর রহমান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুস সালাম খান, সাংস্কৃতি মুক্তি জোটের প্রার্থী এনামুল হক।