দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শুক্র ও শনিবার রাজশাহী শহরের বিভিন্ন জায়গায় ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি করছেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে বাজারমূল্যের তুলনায় ২ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কম দামে এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। উদ্যোগটির প্রশংসা করেছেন ক্রেতাসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। আর শিক্ষার্থীরা বলছেন, চলমান বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতেই এমন উদ্যোগে শামিল হয়েছেন তাঁরা। খুব ভোরে গ্রামের হাট গিয়ে তাজা শাকসবজি কিনে আনেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ‘আমরা রাজশাহীবাসী’র ব্যানারে সকাল ও সন্ধ্যায় শহরে বিভিন্ন স্থানে বসানো হয় ভ্রাম্যমাণ দোকান। সেখান থেকে এসব পণ্য কিনতে ভিড় করেন অনেকেই।
শনিবার ভোরে পবা উপজেলার খড়খড়ি বাইপাস এলাকায় গিয়ে সবজি কিনে আনেন শিক্ষার্থীরা। পরে একটি ভ্যানে করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে এসব আনেন মুশফিক মঈন ও জহিরুল ইসলাম নামের দুই শিক্ষার্থী। তাঁরা ভ্যান থেকে সবজি নামাতে শুরু করলে সেখানে হাজির হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার। কিছু সময়ের মধ্যে হাজির হন এ কার্যক্রমের উদ্যোক্তা ও চিকিৎসক রায়হানুল নঈমী আশিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন। তাঁরা সবাই মিলে বিনোদপুরে বাজারে সকাল সকাল পণ্য বিক্রির কাজ শুরু করেন। তাঁদের দোকানে আলু, জালি কুমড়া, শসা, পেঁপে, ফুলকপি, টমেটো, শিম, পটোল, শাল, সবুজ শাক, করলা, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন পণ্যের সমাহার দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই দেশ কয়েক দফা বন্যার কবলে পড়ে। এতে নতুন সরকারের জন্য বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যে নতুন করে পুরোনো সিন্ডিকেট আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ফলে নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সারা দেশেই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা কাজ শুরু করেছেন। তাঁরা রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ন্যায্যমূল্যে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি শুরু করেছেন।
বিনোদপুরে সবজি কেনেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়াতুল ফেরদৌসী। তিনি বলেন, সব জায়গাতেই ছোট-বড় সিন্ডিকেট আছে। এ ধরনের উদ্যোগ সেই সিন্ডিকেট কিছুটা হলেও দুর্বল করবে। আর তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ উদ্যোগ নিয়েছেন, যা দামেও কম।
ভ্যানচালক রবিউল ইসলাম বলেন, বাজারে একই ধরনের শাকের আঁটি ১২ থেকে ১৫ টাকা, অথচ সেখান থেকে মাত্র ১০ টাকায় এ পণ্য পাচ্ছেন। এ ছাড়া ৬৮ টাকা কেজি দরে কিনেছেন আলু। বাজারে এই পণ্য ৭০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগ আরও বড় পরিসরে করা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, যেসব কাঁচাবাজারে স্থানীয় সিন্ডিকেট আছে। সেখানেই তাঁরা আবার ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়েছেন। এটি তাঁদের জন্য একটি প্রতিবাদী দোকান। সিন্ডিকেটে যুক্তরা যদি এটা থেকে শিক্ষা না নেয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা আরও বড় পরিসরে দোকান বসাবেন। বাজারে বড় ধরনের বৈষম্য আছে। তাঁরা খুব অল্প পরিমাণে পণ্য কিনেও কম দামে বিক্রি করতে পারছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা পারছেন না। মূলত সিন্ডিকেট ভাঙার জন্যই এ উদ্যোগ।