এক নিলামের পরেই ইতিহাস গড়ে ফেলেছিলেন মিচেল স্টার্ক। ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রূপির বিশাল প্রাইসট্যাগের জন্যই কি না, নিজের চিরায়ত বোলিংটাই ভুলে গেলেন এই অজি তারকা। আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামী এই ক্রিকেটার এখন পর্যন্ত বল হাতে উইকেট শূন্য। দুই ম্যাচে দিয়েছেন ১০০ রান।
আগেই গণনা করে জানা গিয়েছিল শাহরুখ খানের ডেড়ায় স্টার্ক যদি প্রতিটি ম্যাচে চার ওভার করেই বল করেন তাহলে বল প্রতি ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৭ টাকা করে পাবেন তিনি। সেই হিসেবে প্রতি ম্যাচে ৪ ওভারে ২৪ বল করা স্টার্ক পেয়েছেন ১ কোটি ৭৬ লাখ ৭৮ হাজার ৫৬৮ রূপি।
আইপিএলের সাম্প্রতিক আসরগুলোর দিকে নজর দিলে অবশ্য স্টার্ককে খুব একটা দোষী বলা চলে না। সবশেষ কিছু আসর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাড়তি দামে নেয়া ক্রিকেটাররাই হতাশ করেছেন বেশি। যেন উচ্চমূল্য আর প্রত্যাশার চাপেই নুইয়ে পড়েছেন তারা।
২০২০ আইপিএলের সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার ছিলেন প্যাট কামিন্স। সেবার সাড়ে ১৫ কোটি রুপিতে কলকাতা নাইট রাউডার্সই কিনে নেয় তাকে। তবে শাহরুখ খানের দলে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলারের পারফর্ম্যান্স ছিল একেবারেই গড়পড়তা। প্রথম ৫ ম্যাচে সাড়ে ১৫ কোটির কামিন্স ছিলেন উইকেটশূন্য। যদিও দিল্লী ক্যাপিটালসের বিপক্ষে এক ম্যাচে ১৭ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। পরে চেন্নাইয়ের বিপক্ষে নিয়েছিলেন আরও ২ উইকেট।
সর্বসাকূল্যে ১৩ ম্যাচে তাঁর উইকেট ৮টি। ব্যাট হাতে অবশ্য মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংস তার মান রক্ষা করেছিল। কিন্তু সে আসরের সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার মোটাদাগে ব্যর্থই ছিলেন। এমনকি এবারের আসরেও তাকে হায়দ্রাবাদ কিনেছে ২০ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে। সেখানেও খুব একটা সফল না কামিন্স।
২০২০ আইপিএলে একইরকম ব্যর্থতা দেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার তারকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও। মারকুটে ব্যাটার হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ছিলেন লাইমলাইটে। ১০.৭ কোটি রুপিতে দলে নিয়েছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে তাদের প্রত্যাশা ছিল ব্যাপক। কিন্তু সেবার ১৩ ইনিংসে মোটে ১০৮ রান করেছিলেন তিনি।
আইপিএলের সবচেয়ে দামী তারকা হয়েছিলেন স্যাম কারানও। ১৮ কোটি ৫০ লক্ষ রুপির রেকর্ড মূল্যে তাকে দলে নিয়েছিল পাঞ্জাব কিংস। কিন্তু সেই আসরে ব্যাট হাতে ১ ফিফটির সঙ্গে ২৭৬ রান করলেও বল হাতে ১৪ ম্যাচে মোটে ১০ উইকেট নিতে পেরেছিলেন এ ইংলিশ ক্রিকেটার।
তার আগে যিনি আইপিএলের দামী ক্রিকেটার ছিলেন, সেই ক্রিস মরিসও দামী ক্রিকেটারের ছাপ রাখতে পারেননি। ২০২১ আইপিএলের নিলামে ১৬ কোটি ২৫ লাখ রূপি দিয়ে ক্রিস মরিসকে কিনেছিল রাজস্থান রয়্যালস।
তবে সে আসরে বল হাতে ১৫ উইকেট নিলেও ইকোনমি রেট ছিল ৯.১৭। আর ব্যাট হাতে ১১ ইনিংসে মোটে ৬৭ রান যোগ করতে পেরেছিলেন প্রোটিয়া এ ক্রিকেটার। এমনকি ওই আসরের সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার ক্রিস মরিস এরপর আর আইপিএলেই খেলার সুযোগ পাননি।
২০২৪ আইপিএলে রেকর্ড ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে মিশেল স্টার্ককে দলে ভিড়িয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। আগের আসরের দামী তারকাদের মতো স্টার্কও প্রথম দুই ম্যাচে ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ। সামনের দিনগুলোতে অবশ্য তাকে নিয়ে আশাবাদী কলকাতার টিম ম্যানেজমেন্ট।
কেকেআরের বোলিং কোচ ভরত অরুণ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘স্টার্ক বিশ্বের অন্যতম অভিজ্ঞ বোলার। হতে পারে প্রথম দুই ম্যাচে ও ভালো বল করতে পারেনি। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ও সেরা ফর্মে ফিরবে।’ ভারতের আবহাওয়ায় ভালো করার বিষয়ে স্টার্কের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে তার। অরুণ বলেন, তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। স্টার্কের শক্তি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। নেটে ও ভালো বল করছে। ম্যাচে বিধ্বংসী রূপে ফেরা শুধু সময়ের অপেক্ষা।’