নিজস্ব প্রতিবেদক
২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে উত্তরবঙ্গের শিক্ষা নগরী রাজশাহীকে স্মার্ট মহানগর বিনির্মাণে ‘স্মার্ট রাজশাহী সিটি’ বিষয়ক আলোচনা সভা ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারের কনফারেন্স রুমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পুনঃনির্বাচিত মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্মেদ পলকের উপস্থিতিতে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এটুআই-এর যুগ্ম-প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো: সাইফুল ইসলাম ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ.বি.এম. শরীফ উদ্দিন স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে রাজশাহী সিটির রূপান্তর নিয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এটুআই এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এর যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নিহত সদস্যদের স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহ্মেদ পলক। এ সময় ‘অটোমেশন অন সিটিজেন সার্ভিস’ বিষয়ক আলোচনা করেন এমসিসি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সানি মো. আশরাফ খান, ‘স্মার্ট কর্মসংস্থান’ বিষয়ক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন এটুআই এর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ইনোভেশন স্পেশালিস্ট এইচ.এম. আসাদ-উজ-জামান এবং ‘স্মার্ট রাজশাহী সিটি’ বিষয়ক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন এটুআই-এর চিফ ই-গভর্ন্যান্স স্পেশালিষ্ট জনাব ফরহাদ জাহিদ শেখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাসিকের পুনঃনির্বাচিত মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘স্মার্ট রাজশাহী গড়ার জন্য আমরাও আগ্রহী। কোভিড-১৯ এর কারণে এর কাজটি ব্যহত হয়েছে। এবার আমরা সেটি করতে যাচ্ছি। নাগরিকরা অনলাইনে ঘরে বসে সিটি কর্পোরেশনের অনেক সেবা নিতে পারবে। রাজশাহীকে দেশের মধ্যে প্রথম স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, রাজশাহী ও আশপাশের জেলা পিছিয়ে পড়া একটি জনপদ। এই অঞ্চলে কর্মসংস্থানের অভাব। তবে ধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। কোথায় কী লাগবে সবদিকে তিনি দৃষ্টি রাখেন। রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক গড়ে দিয়েছেন। এখানে অনেক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, অনেক ফ্রিল্যান্সার তৈরি হচ্ছে, আগামীতেও হবে।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্নক্ষেত্রে রাজশাহী সিটির অনেক অর্জন রয়েছে। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন পরপর তিনবার প্রথম স্থান অর্জন করেছে। ইপিআই কার্যক্রমে টানা ১১বার দেশসেরা, দুইপার পরিবেশ পদক অর্জন করেছি। এই অর্জন ধরে রেখে রাজশাহীকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
সভাপতির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, ‘আমাদের টার্গেট স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। স্মাট বাংলাদেশ বির্নিমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে টার্গেট দিয়েছেন, স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ব্যবস্থা ও স্মার্ট সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। আমরা দুইটি নগরীকে স্মার্ট নগরী হিসেবে প্রথম পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাই। তার মধ্যে প্রথম ও প্রধান রাজশাহী সিটিকে আমাদের প্রিয় নেতা স্মার্ট লিডার খায়রুজ্জামান লিটন ভাইয়ের সুযোগ্য নেতৃত্বে স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তুলে সারাদেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে। স্মার্ট নগরীটা কেমন হতে পাওে, সেটি রাজশাহী দেখে মানুষ জানতে পারবে। রাজশাহী শিক্ষানগরী, এখন ধীরে ধীরে সিলিকন নগরীতে পরিণত হচ্ছে, এখানে স্মার্ট কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে কাজ করা হবে। আগামীতে রাজশাহী স্মার্ট সিটি হিসেবে সারাবিশ্বে একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
তিনি আরো বলেন, ২০১১ সালে রাজশাহীতে জনসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হাইটেক পার্ক নির্মাণের প্রথম দাবি জানিয়েছিলেন খায়রুজ্জামান লিটন ভাই। এরপরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটের্ক পার্ক করে দিয়েছেন। বর্তমানে জয় সিলিকন টাওয়ার ও শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর ট্রেনিং সেন্টারের কাজ শেষ হয়ে সেটি হাজার হাজার তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত কর্মসংস্থানের ঠিকানা হয়েছে। রাজশাহীতে এই উদ্যোগটি প্রথম নেওয়ার ফলে সারাদেশে জাগরণ সৃষিব্ট হয়েছে। আমরা সারাদেশে ১২টি হাইটেক পার্ক ও ৬৪টি শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর সেন্টার নির্মাণ করছি। মাননীয় আইসিটি উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্দেশনায় গ্রামের তরুণ-তরুণীদের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আমরা করতে পারছি।
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর সচিব মো. সামসুল আরেফিন, এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী, চিফ ই-গভর্ন্যান্স স্পেশালিস্ট ফরহাদ জাহিদ শেখ এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও এটুআই এর অন্যান্য কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানের শেষে স্মার্ট বাংলাদেশের উপর একটি অ্যানিমেশন ভিডিও উপস্থাপন করা হয়।