আধুনিক যুগে এসে কোনো বিদেশি খেলোয়াড় ছাড়াই একটা ফুটবল ক্লাব পরিচালিত হচ্ছে, এমন কিছু খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এমনকি বাংলাদেশের লিগেও সব দলেরই প্রচেষ্টা থাকে বিদেশি খেলোয়াড় এনে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করা। কিন্তু এরমাঝেও ব্যতিক্রমী এক ক্লাব অ্যাতলেটিকো বিলবাও। স্পেনের ইতিহাসে অন্যতম সফল এই ক্লাব গত ১২৫ বছর ধরে নিজেদের ক্লাবে নেয়নি কোনো বিদেশী ফুটবলারকে।
অ্যাতলেটিক ক্লাব বা অ্যাতলেটিক বিলবাও, স্পেনের ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সফল এক ক্লাব। ৮ বারের দেশটির ঘরোয়া লা লিগা চ্যাম্পিয়ন তারা। আরেক ঘরোয়া প্রতিযোগিতা কোপা দেল রের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ বার শিরোপা জিতেছে ক্লাবটি। কদিন আগেই রিয়াল মায়োর্কাকে হারিয়ে পেয়েছে এই প্রতিযোগিতার ২৪তম শিরোপা। এছাড়া ৪ বারের স্প্যানিশ সুপার কাপজয়ী দল এটি।
কিন্তু ক্লাবের এত সাফল্যের মূলে নেই কোনো বিদেশি তারকা। লিগে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা কিংবা অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ যখন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করছে বিদেশি ফুটবলার আনতে, তখন বিলবাও ভরসা রেখেছে নিজেদের অঞ্চলের খেলোয়াড়দের ওপরেই।
শুধু বিদেশই না, বরং নিজ অঞ্চলের বাইরের কোনো খেলোয়াড়কেই দলে নেয়না ক্লাবটি। স্পেনের উত্তরাঞ্চলীয় বাস্ক এলাকার ক্লাব তারা। ক্লাবের সব খেলোয়াড়কেই হতে হয় বাস্ক অঞ্চলের বাসিন্দা। অবশ্য খেলোয়াড় নিজে বাস্ক অঞ্চলের না হলেও যদি বাবা কিংবা মায়ের কেউ একজন ওই এলাকার হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রেও অ্যাতলেটিক বিলবাও এর হয়ে খেলা সম্ভব।
ক্লাবের স্কোয়াডে বর্তমানে একজনই আছেন যিনি স্পেনের নাগরিক নন। নাম তার ইনাকি উইলিয়ামস। তিনি খেলছেন ঘানার হয়ে। যদিও তারই আপন ভাই নিকো উইলিয়ামস খেলছেন স্পেনের জার্সিতে। তাদের পারিবারিকভাবে বাস্ক অঞ্চলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। ইনাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাবার দেশ ঘানার হয়ে খেলতে।
জানা যায়, ১৮৯৮ সালে বাস্ক অঞ্চলের ব্রিটিশ শ্রমিক এবং তরুণ বাস্কদের নিয়ে গঠিত হয় অ্যাতলেটিক ক্লাব। অঞ্চলের রাজধানী বিলবাও হওয়ার কারণে পরবর্তীতে অ্যাতলেটিকো বিলবাও নামেও পরিচিতি পায় তারা। শুরুর দিকে অবশ্য তাতে বেশ অনেক বিদেশি খেলোয়াড়ই খেলেছিলেন।
১৯১১ সালে কোপা দেল রে ফাইনাল জেতে তারা। তবে সেবার তাদের শিরোপা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ ছিল অন্যায়ভাবে এক বিদেশি খেলোয়াড় মাঠে নামিয়েছে তারা। এরপর যদিও ক্লাবটিকে সেই শিরোপা ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তবে নিজেদের নিয়ম সেদিন চিরতরে বদলে ফেলে অ্যাতলেটিক ক্লাব। সেবছরের এপ্রিল মাসে সবশেষ অ্যান্ড্রু ভিচ নামের এক ইংরেজ ফুটবলার সবশেষ এই ক্লাবের হয়ে খেলেছেন।
উল্লেখ্য, স্পেনের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা ছাড়াও ফ্রান্সের অল্প কিছু এলাকা বাস্ক অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। সে হিসেবে অতীতে কিছু ফ্রেঞ্চ ফুটবলারকেও দেখা গিয়েছে এই ক্লাবে। উনাই সিমন, কেপা আরিজাবালাগা, আইমরিক লাপোর্তেসহ হালের বেশ কিছু মেধাবী ফুটবলারের যাত্রাও হয়েছিল এই ক্লাব থেকেই। স্প্যানিশ ফুটবলের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৫টি শিরোপা পেয়েছে এই ক্লাবটি। আর এর সবটাই এসেছে স্থানীয় ফুটবলারদের হাত ধরে।