• ঢাকা, বাংলাদেশ সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৪:১৭ অপরাহ্ন

কেন্দ্রে কেন্দ্রে গেলো ভোটের সরঞ্জাম

রিপোর্টার নাম:
সর্বশেষ: মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩

ভোটের জন্য প্রস্তুত রাজশাহী

 

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আজ। ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহনের সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আনসার ও পুলিশের পাশাপাশি এখানে র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা মাঠে থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবেন একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট। এবারে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মাঠের হিসাব বলছে, আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন আবারো মেয়র নির্বাচিত হচ্ছেন সহজভাবেই। এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট হবার সম্ভাবনা দেখছেন না সাধারণ মানুষ। তবে, ভোট জমবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটে। সবখানেই কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবার আভাস মিলছে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা শেষ হয়েছে সোমবার। এর পর থেকেই প্রার্থী ও ভোটাররা অপেক্ষায় ভোট দেয়ার জন্য। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে চারজন প্রার্থী রয়েছেন। এরা হলেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পাটির্র সাইফুল ইসলাম স্বপন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুরশিদ আলম এবং জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুরশিদ আলম ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে প্রচারনা থেকে সরে দাঁড়ান। গত ২ জুন থেকে ভোটের প্রচারণা শুরুর পর থেকে শেষ পর্যন্ত অন্য তিন প্রার্থীর তেমন জোরালো প্রচারণা দেখা না গেলেও এককভাবে নৌকার প্রচারণায় কোন ঘাটতি ছিলো না। নগরীর প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ব্যাক প্রচারনা চালায় এই দলটির নেতা কর্মীরা। নৌকার প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন প্রতিদিনই দুই বেলা গণসংযোগ করেছেন, শহর জুড়ে হয়েছে মাইকিং, পুরো নগরী ছেয়ে গেছে নৌকার পোস্টার আর ব্যানারে। দলের সব পর্যায়ের নেতা কর্মী নৌকার প্রচারে অংশ নেয়। অন্যদিকে, বাকি তিন প্রার্থীর পোস্টার ব্যানার এখনো সেভাবে চোখে পড়ে না। মাইংকিং হয়েছে খুবই সীমিত পরিসরে। যদিও জাতীয় পার্টি প্রার্থী স্বপন এবং জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ারের বক্তব্য তারা গণসংযোগকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার চালিয়েছেন। ভোটের মাঠ সম্পর্কে তারা ইতিবাচক। কোন অভিযোগও নেই তাদের। নৌকার প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন এরআগে দুইবার মেয়র ছিলেন। দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য। সেই হিসেবে তিনি এমনিতেই জনপ্রিয় নেতা। অন্যদিকে তার প্রতিপক্ষ যেসব প্রার্থী রয়েছেন তাদের জনপ্রিয়তা সেই তুলনায় কম। সেই হিসেবে এবারে সহজ জয় পাওয়ার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক নেতারাও। সোমবার খায়রুজ্জামান লিটনের এনিয়ে কথা হয় এই প্রতিবেদেকর। মেয়র পদে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে মনে করেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মনে হয় না। কারণ কী জানতে চাইলে লিটন বলেন, তাদের সেভাবে কর্মী সমর্থক নাই। এছাড়া নির্বাচনের প্রচার চলাকালেও তাদের তেমন কার্যক্রম দেখা যায়নি। তাহলে কি নির্বাচন উৎসবমুখর হবে বা জমবে কি? লিটন বলেন, আমার মনে হয় নির্বাচন উৎবমুখর হবে এবং বেশ জমমজাট হবে। কারণ, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস রয়েছে। একই কারণে ভোটার উপস্থিতিও ভালোই হবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে, রাজশাহীর ৩০টি কাউন্সিলর পদের মধ্যে ২৯টিতে লড়ছেন ১১১ জন প্রার্থী। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী রয়েছে। রবিউল ইসলাম সেখানে একমাত্র প্রার্থী থাকায় সাধারণ কাউন্সিলর পদে ভোট হচ্ছে না। এছাড়া সংরক্ষিত ১০টি আসনের বিপরিতে ৪৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন।
১৫৫ কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৮টিই গুরুত্বপূর্ণ
রাজশাহী নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে,, রাসিক নির্বাচনে মোট ১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন। এছাড়া হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৬জন। এর মধ্যে এবার ৩০ হাজার ১৫৭ জন তরুণ-তরুণী প্রথম ভোটার হয়েছেন। এসব ভোটারের ভোট গ্রহন করা হবে ১৫৫টি কেন্দ্রে। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে ১৪৮ টি আর সাধারণ সাধারণ কেন্দ্র ৭ টি। সুষ্ঠভাবে ভোট সম্পন্ন করতে প্রিজাইডিং অফিসারসহ ৩৬১৪ নির্বাচনী কর্মকর্তা মাঠে থাকবেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন থাকবে সাড়ে তিন হাজার পুলিশ সদস্য, ৩শ র‌্যাব সদস্য। সেই সাথে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকছে ১০ প্লাটুন বিজিবি। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। ভ্রাম্যমান অবস্থায় থাকবেন ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়াও মাঠে থাকছেন নির্বাচন কমিশনের ১০জন নিজস্ব পর্যবেক্ষক।
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ অডিটোরিয়াম থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয় নির্বাচনী সরঞ্জাম। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ্ ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এসব সরঞ্জাম বিতরণ করেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামীকাল ২১ জুন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রস্তুত রয়েছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন (আরএমপি) পুলিশ ।

৫ স্তরের নিরাপত্তা
রাসিক নির্বাচন ঘিরে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার। মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী পুলিশ লাইন্স মাঠে নিরাপত্তা বিষয়ক ব্রিফিং এ মহানগর পুলিশ কমিশনার এই তথ্য জানান। পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। শান্তি শৃঙ্খলা নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে এবারের রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হবে একটি মডেল স্বরূপ। ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা করার কেনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ পুলিশ এখন স্মার্ট পুলিশ। আগামীকাল নির্বাচনে এর প্রতিফলন ঘটাবে।
তিনি আরও বলেন, ১৫৫ টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে। এর মধ্যে ১৪৮ টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৭ টি সাধারণ ভোট কেন্দ্র। কিন্তু আমরা সব কেন্দ্রগুলোকেই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। প্রতিটি কেন্দ্র এলাকায় ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে আইন-শৃঙ্খলা পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার সদস্যবৃন্দ দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন পূর্ববর্তী এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতির কথা তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন এবং সকলের সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

র‌্যাবের কঠোর অবস্থান
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে র‌্যাব-৫। নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে র‌্যাব-৫ এর সদর দপ্তরে প্রেস ব্রিফিং করেন র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে: কর্ণেল রিয়াজ শাহিয়ার। তিনি বলেন, বুধবার ভোর ৬টা থেকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অন্যান্য আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাব এর অফিসার, ডিএডিসহ মোট ৩০০ জন র‌্যাব সদস্য মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা এবং বোমা নিস্ক্রিয়কারী হিসেবে নির্বাচনে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়োজিত থাকবে।
র‌্যাব-৫ এর ১৫টি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং পেট্রোল, স্ট্রাইকিং ফোর্স কমান্ডারসহ ১০টি জীপ, ২টি স্ট্রাইকিং ফোর্স রিজার্ভ টিম, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা দল, সুপার মোবাইল মোটরসাইকেল টিম এবং এ্যাম্বুলেন্স নির্বাচনের দিন আইন-শৃংখলা নিয়ন্ত্রনে নিয়োজিত থাকবে।
যেকোন উদ্বুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রয়নের জন্য র‌্যাব-৫ এর বোম ডিসপোজাল ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে। র‌্যাব সদর দপ্তরে র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্স হেলিকাপ্টারসহ যেকোন পরিস্থিতিতে মোতায়েন এর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও সার্বিক পরিস্থিতি তদারকির জন্য নির্বাচন সেল এবং কন্টোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।
নির্বাচনে কেউ বাধা সৃষ্টি করলে অথবা সহিংসতা বা নাশকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে র‌্যাব কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী অথবা সিটি কর্পোরেশন এলাকার ভোটার নন এরকম নাগরিকদের নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ অথবা ভোটের দিন নির্বাচন কমিশনের বিধি নিষেধ মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষে অনুপ্রবেশকারী কোন ব্যক্তিদের অপতৎপরতা আইন-শৃংখলা বাহিনী কঠোর ভাবে দমন করবে।
তিনি আরো বলেন, অবৈধ অস্ত্রের ব্যাপারে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রয়েছে এবং আমরা ইতি মধ্যে বেশ কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছি। নির্বাচন কমিশনের বিধি নিষেধ অনুযায়ী নির্বাচন চলাকালে সকল নাগরিক’কে কোন প্রকার লাইসেন্স ধারী অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন না করার জন্য কঠোর ভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।
নির্বাচন চলাকালীন সময়ে প্রত্যেক নাগরিক’কে নিজ নিজ এনআইডি কার্ড বহন এবং জেলা প্রশাসন এর নির্দেশনা অনুযায়ী অঅনুমোদিত যানবাহন ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, একটি সুষ্ঠু, নিরোপেক্ষ শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের জন্য যা যা করনীয় সবকিছু করা হয়েছে। ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে কেন্দ্রে আসবেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

 

 

 


আরো খবর