• ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৭:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম
পবায় নির্বাচন বর্জন কর্মসূচিতে পুলিশের সাথে বিএনপির নেতাদের ধস্তাধস্তি পুঠিয়ায় তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে সম্পদশালী মাসুদ ৭ দিনের মধ্যে অবৈধভাবে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলো রাবি তানোরে যত্রতত্র ভাবে পশু জবাই, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মানুষ বাঘায় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিশাল শোডাউন গোদাগাড়ীতে ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন শিক্ষার্থীদের কাছে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরা হলো পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের  মহানন্দা নদীতে ডুবে যুবকের মৃত্যু তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রাচ্য পলাশ পেলেন বেস্ট ব্র্যান্ড কনসালটেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ পোরশায় পাঁচ মাদক সেবনকারী আটক

গায়েবি ক্ষমতার বলে তিনি রুয়েট কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
সর্বশেষ: শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
গায়েবি ক্ষমতার বলে তিনি রুয়েট কর্মকর্তা
গায়েবি ক্ষমতার বলে তিনি রুয়েট কর্মকর্তা

প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সনদ না থাকা সত্ত্বেও গায়েবি ক্ষমতাবলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান শাহ মো. আলবেরুনী ফারুক। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যে যোগ্যতা চাওয়া হয় সেটিও মানা হয়নি তার নিয়োগের ক্ষেত্রে। রুয়েটে নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি হয়ে উঠেন প্রভাবশালী কর্মকর্তা। যোগ্যাতা ছাড়াই সহকারী রেজিস্ট্রার হওয়ার পর আরো পদোন্নতি মিলেছে তার। এখন তিনি এখানকার ডেপুটি রেজিস্ট্রার হয়ে গেছেন। শাহ মো. আলবেরুনী ফারুক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ সভাপতি। রুয়েটে তার দাপট নিয়ে অনেক জায়গাতেই কানাকানি হলেও মুখ খুলতে চান না কেউ। তবে, খোঁজ নিতে গিয়ে এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে নিয়োগ সংক্রান্ত তার জালিয়াতির কিছু তথ্য। তবে, এবিষয়ে এই কর্মকর্তার দাবি ‘শুধু আমি নই, এখানে এসএসসি, এইচএসসি, বিএতে থার্ডক্লাস পাশও ডেপুটি রেজিস্ট্রার আছে। তাদের বিষয়েও লিখেন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, রুয়েটে পিএস টু ভিসি পদে নিয়োগের জন্য ২০১১ সালে সার্কুলার হয়। পিএস টু ভিসি পদে একজনকে নিয়োগের কথা বলা হয়। সে অনুসারে ৩৩ জন প্রার্থী আবেদন করেন। তাদের মধ্য থেকে আলবেরুনী ফারুককে নিয়োগ দেয়া হয়। এই নিয়োগ পরীক্ষা ঘিরে ঐ সময় ক্যাম্পাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরী হয়। আলবেরুনী ফারুকের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরই প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের নিয়ে তৎকালীন উপাচার্যের দপ্তর ঘেরাওয়ের ঘটনাও ঘটে। উপাচার্যের উপর চাপ তৈরী করা হয়। ২০১২ সালে আলবেরুনী ফারুককে এই পদে চাকরি দেন তৎকালীন উপাচার্য ড. সিরাজুল করিম চৌধুরী।
তার এই পদের আবেদন ও পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম পর্যালোচনা করে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি আবেদন ফরমে অভিজ্ঞতার কলামে কাটাকাটি লেখা রয়েছে। এই কলামে তিনি তার অভিজ্ঞতার একটি সনদ যুক্ত করেছেন। অথচ পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরমে তিনি যে তথ্য উল্লেখ করেছেন সেখানে কোন অভিজ্ঞতা নেই বলে উল্লেখ করেছেন।
তিনি নিয়োগ পাওয়ার কিছুদিন পরই রুয়েটে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের জন্য ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। এতে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি আবেদনের শেষ সময় বেঁধে দিয়ে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক/একাডেমিক/পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে ১ম শ্রেনীর কর্মকর্তা হিসেবে কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। কিন্তু মাত্র ১ বছর ১০ মাসের চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়েই ওই পদে আবেদন করেন আলবেরুনী ফারুক। এছাড়া পিএস টু ভিসি পদে চাকরিতে প্রবেশের আবেদন ফরমে কোনো অভিজ্ঞতা সনদ দেয়া না হলেও সহকারী রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতির আবেদনে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার অভিজ্ঞতার সনদ যুক্ত করেন তিনি। প্রায় ৬ বছর ২ মাস চাকরি করার এই অভিজ্ঞতা সনদ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এবং এই নিয়োগে জালিয়াতি করার উদ্দেশ্যে পিএসটু ভিসি পদের আবেদনে তিনি ঘঁসামাজা করে থাকতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, শাহ মো. আলবেরুনী ফারুক সহকারী রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি পেতে আবেদনের সঙ্গে ১ জুন ২০০৫ থেকে ৩১ জুলাই ২০১১ পর্যন্ত রাজশাহীর একটি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরির অভিজ্ঞতা সনদ যুক্ত করেন। (সেটি প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা মানের কোন পদ নয়।) অথচ ওই সময়ে তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে থাকায় ঢাকায় অবস্থান করতেন। আবার পিএসটু ভিসি পদে নিয়োগের সময় পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফরমে এই অভিজ্ঞতা সনদের অস্তিত্ব না থাকায় বিতর্ক তৈরী হয়েছে। বিতর্কিত এই সনদ দিয়েই ২০১৫ সালের ১ জুন সহকারী রেজিস্ট্রার হয়ে যান শাহ মো. আলবেরুনী ফারুক। এখানেই থেমে যান নি তিনি। পরবর্তিতে তিনি সহকারী থেকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে আপগ্রেডেশন/পর্যান্নোয়ন পান। ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর তার এই আপগ্রেডেশন নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ছাড়াই তিনি এই পদ পান বলে সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, একের পর এক পদ হাতিয়ে নেওয়ার পর তিনি হয়ে উঠেছেন দাপুটে কর্মকর্তা। রুয়েটের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অশালীন আচরণসহ ক্যাম্পাসে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি চেষ্টারও অভিযোগ উঠে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ক্যাম্পাসে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়ায় রুয়েটের শুদ্ধাচার কৌশল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত ‘আকস্মিক পরিদর্শন কমিটি’র সদস্যদের হুমকি প্রদান করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া, কাফনের কাপড় পাঠিয়ে রুয়েটের ৯ শিক্ষক কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকি প্রদানের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আদালতে তলবও করা হয়। যোগ্যতা না থাকলেও কিভাবে এই কর্মকর্তার নিয়োগ হলো এবিষয়ে জানতে তৎকালীন উপাচার্য ড. সিরাজুল করিম চৌধুরীর সাথে যোগযোগ করে জানা যায়, তিনি অসুস্থ। একারণে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয় নি।
অভিজ্ঞতা না থাকা সত্বেও সহকারী রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে রুয়েটের সাবেক ভিসি রফিকুল ইসলাম বেগ বলেন, এত আগের খবর আমি বলতে পারবো না। এটা একটি কমিটি করে দেয়া হয় তারা যাচাই বাছাই করে সেটির জন্য রেজিস্ট্রার দপ্তরে সুপারিশ করে। আমি এগুলো দেখি না। আর এই বিষয়ে বলতেও পারবো না। আমার আমলের রেজিস্ট্রারের সাথেই যোগাযোগ করেন তিনিই ভালো বলতে পারবেন। সেই সময়ের রেজিস্ট্রার ড. সেলিম হোসেন বলেন, এটি কীভাবে হয়েছে এখন বলা সম্ভব নয়। তবে আপনারা যেহেতু বলছেন আমি এটি বর্তমান রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে আপনাদের জানাতে পারবো।
এবিষয়ে বর্তমান রেজিস্ট্রার আরিফ আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, যদি কোন তথ্য গোপন করে বা পরে কাঁটাছেড়া করে তবে সেটি ফৌজদারী অপরাধ। আমরা বিষয়গুলো তার কাছে জানতে চাইবো। তখন এসব বিষয়ে বিস্তÍারিত বলা যাবে। তবে তার ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে আপগ্রেডেশনের ক্ষেত্রেও শিথিলতা করা হয়েছে। প্রতিটি পদেই তার জন্য শিথিলতা কেন জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে চান নি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে রুয়েটের উপাচার্য ড. জাহাঙ্গীর আলমকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি। শনিবার তার কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শাহ মো. আলবেরুনী ওরফে ফারুক বলেন, কোন অভিজ্ঞতারই পুলিশ ভেরিফিকেশন হয় না। ধরেন অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতা কোন একটা শিথিল করা আছে নীতিমালায়, সেই জায়গা থেকেই ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুধু আমি নই, এখানে এসএসসি, এইচএসসি, বিএতে থার্ডক্লাস পাশও ডেপুটি রেজিস্ট্রার আছে। তাদের বিষয়েও লিখেন, তারা কীভাবে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হলো। তারপর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ পেয়েছেন লিখেন। এগুলো সব দিয়ে আমাদের নাম টাম জড়িয়ে কী ভাবে নিউজ করবেন কইরেন। তিনি বলেন, শুদ্ধাচার কমিটিতে আমি বলেছিলাম দেড়শ টাকার বই পাঁচ হাজার টাকায় কেনা হয়, চোরকে চোর বলেছি। এটা বলা আমার জন্য যদি দোষ হয় তাহলে আমি দোষ মনে করি না। এটি তো দুই বছর আগের কথা, এখন কেন উঠছে। আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। সেখান থেকে চাকরি করে খাচ্ছি। আমি কন্টাকটারি করে খাই না।


আরো খবর