• ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২০ অপরাহ্ন

বাজারে ৪০ শতাংশ চোরাই ফোন, ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারানোর শঙ্কা

রিপোর্টার নাম:
সর্বশেষ: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

রাজশাহী সংবাদ ডেস্ক :

বুধবার (২৭ মার্চ) ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। এতে উপস্থিত ছিলেন এমআইওবির সভাপতি ও এডিসন ইন্ডাস্ট্রিজের জাকারিয়া শাহিদ, সহ-সভাপতি ও ইস্মার্টু টেকনোলজির রেজওয়ানুল হক, সাধারণ সম্পাদক ও ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্সের মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক ও গ্রামীন ডিস্ট্রিবিউশনের জহুরুল হক বিপ্লব, কোষাধ্যক্ষ ও বেস্ট টাইকুনের ইমাম উদ্দিন, পরিচালক  ও হালিমা টেলিকমের আবুল কালাম হাসান টগর প্রমুখ।

জাকারিয়া শাহিদ বলেন, দেশে মোবাইল ফোনের বাজার প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার। এ শিল্পে সরাসরি তিন থেকে চার লাখ মানুষ জড়িত। ২০১৮ সালের আগে বাংলাদেশে শতভাগ মোবাইল ফোন বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। কিন্তু সরকারি প্রণোদনায় ২০১৮ সাল থেকে দেশে একের পর এক মোবাইল কারখানা স্থাপিত হতে থাকে। এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ১৭টি মোবাইল ফোন কারখানা দেশে স্থাপিত হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের চাহিদার প্রায় ৯৯ শতাংশ ফোনই এখন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু অবৈধভাবে ফোন আমদানি বন্ধ না করায় স্থানীয় বাজারের প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ এখন চোরাই ফোনের দখলে। তৈরি ফোন আমদানিতে যেখানে প্রায় ৫৮ শতাংশ কর রয়েছে, সেখানে এসব ফোন বিনা শুল্কে বাজারজাত হচ্ছে। ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে কারখানা স্থাপন করা ব্যবসায়ীরা।

তিনি আরও বলেন, ১৭টি কারখানায় বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এসব কারখানায় দক্ষ শ্রমিক ২৫ হাজারের বেশি। পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে আরও প্রায় ৫০ হাজার লোকের। সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠার। আরও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ মোবাইল ফোন রপ্তানির।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফোন প্রস্তুতকারকদের সংগঠন, মোবাইল ফোন অপারেটর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সব অংশীজনের সঙ্গে কয়েক বছরের পর্যালোচনা শেষে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ২০২১ সালে এনইআইআর চালু করে। এ সিস্টেমের মাধ্যমে কার্যকরভাবে মোবাইল ফোনের অবৈধ আমদানি ও বিক্রয় রোধ করা সম্ভব।

এতে জানানো হয়, এনইআইআর সিস্টেম চালুর মাধ্যমে অবৈধভাবে ও কর ফাঁকি দিয়ে মোবাইল ফোনের আমদানি বন্ধ করা হবে, এ আশ্বাসের ভিত্তিতেই দেশের প্রধান প্রধান মোবাইল আমদানিকারকরা স্থানীয়ভাবে কারখানা স্থাপন করেছিলেন। ২০২০ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিপুল সরকারি অর্থ ব্যয় করে এনইআইআর সিস্টেমটি কেনে এবং স্থাপন করে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে এনইআইআর চালুর কিছুদিনের মধ্যেই তা স্থগিত বা শিথিল করে দেওয়া হয়।

বক্তারা বলেন, এনইআইআর সিস্টেম শিথিল করে দেওয়ায় ফোন কারখানাগুলোর বিনিয়োগ এখন হুমকির মুখে। কারণ, অবৈধভাবে দেশে আসা হ্যান্ডসেটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা কঠিন, কারণ তারা কর ফাঁকি দেয়। বৈধ ফোন তৈরির কারখানাগুলোর জন্য রয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নানা রকমের নিয়ম-নীতি, বিধি-নিষেধ, উচ্চ লাইসেন্স ফি। অথচ অবৈধ ফোনের ক্ষেত্রে কমিশনের কোনো নিয়ম-নীতিই প্রযোজ্য নয়।
তারা বলেন, এনইআইআর সিস্টেম শিথিল করার ফলে সরকার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। গ্রাহক নিম্নমানের হ্যান্ডসেট কিনে প্রতারিত হচ্ছেন, তা ছাড়া অবৈধ মোবাইলের কোনো ওয়ারেন্টি নেই। অবৈধভাবে আমদানি করা মোবাইল ফোন দিয়ে নানারকম অপরাধ সংগঠিত হয়, যা প্রতিরোধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়। এনইআইআর চালু করার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো এসব অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করা।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, এনইআইআর চালু করার কিছুদিন আগে থেকেই অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানিকারকরা সাবধান হয়ে যান। এতে চোরাই পথে মোবাইল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এনইআইআর বন্ধ করে দেওয়ার ফলে বৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজারে বড় ধস নেমে আসে। অবৈধভাবে এবং কর ফাঁকি দিয়ে দেশে আনা হ্যান্ডসেট ব্যবহারে কোনো বাধা না থাকায় অবৈধভাবে আমদানি বেড়েই চলেছে। বর্তমানে মোবাইল ফোনের বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ দখল করে আছে অবৈধভাবে আমদানি করা হ্যান্ডসেট। এসবের ওপর সরকার কোনো রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। বর্তমান অর্থবছরে সরকার এ খাত থেকে দুই হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য রাজস্ব হারাবে।

এনইআইআর ব্যবস্থা চালু করা কেন প্রয়োজন, তা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে ১৭টি দেশি-বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে কারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদার প্রায় শতভাগ মুঠোফোন দেশে তৈরি করছে। এ শিল্পে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার দক্ষ লোক কর্মরত। বিশাল এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে অবৈধ আমদানি বন্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমানে সন্ত্রাসীরা সিমকার্ড ছাড়া ওয়াই-ফাই বা অন্য কোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম। যদি মুঠোফোনের আইএমইআই নম্বরটি সিমের সঙ্গে রেজিস্ট্রি করা থাকে, তবে আইপি অ্যাড্রেস ও আইএমইআইর মাধ্যমে এ সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা সম্ভব। এনইআইআর পদ্ধতি এ নিরাপত্তা খুব সহজেই প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

আরও বলা হয়, অবৈধভাবে আমদানি করা হ্যান্ডসেটের মান পরীক্ষা হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভোক্তা সঠিক পণ্য পান না এবং অনেক ক্ষেত্রেই পূর্বব্যবহৃত পণ্য নতুন বলে বিক্রয় করা হয় যা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নীতিমালা পরিপন্থী। অবৈধভাবে আমদানি করা হ্যান্ডসেটের কোনো পরিসংখ্যান কমিশনের ডাটাবেজে নেই। যদি ভোক্তার এনআইডির অধীনে মুঠোফোন রেজিস্ট্রি করা থাকে, সেক্ষেত্রে অন্য কেউ বেআইনিভাবে তা ব্যবহার করবে না এবং হ্যান্ডসেট চুরি, ছিনতাই অনেকটাই নিরুৎসাহিত হবে। তদুপরি বিভিন্ন হয়রানিমূলক কাজও বন্ধ হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এমআইওবির সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন বলেন, আমরা মোবাইল হ্যান্ডসেট শিল্পের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং এ বিষয়ে আশু সুচিন্তিত পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। এনইআইআর সিস্টেম অবিলম্বে পুনরায় চালু করা ছাড়া প্রতিশ্রুতিশীল মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরির শিল্প বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, বৈধ ফোনের কারখানা চালু রাখা এবং মোবাইল রপ্তানি ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে দেশে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে এবং প্রযুক্তি বিশ্বে বাংলাদেশ গর্বের সঙ্গে পদচারণায় সক্ষম হবে।


আরো খবর