• ঢাকা, বাংলাদেশ সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬:১৪ অপরাহ্ন

রাজশাহীতে হঠাৎ দুই বোনের মৃত্যুর কারণ কী ?

নিজস্ব প্রতিবেদক
সর্বশেষ: রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪

রাজশাহীতে বরই খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে দুই বোনের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পায়নি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। তবে, তারা ধারনা করছেন ঐ দুই শিশু মারা গেছে মেনিংগোকোকাল মেনিনজাইটিস নামে এক বিরল রোগে। রোববার দুপুরে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ তাহমিনা শিরীন এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, এই মৃত্যুর কারণ বলতে আমরা সরাসরি কোন এভিডেন্স পাইনি। আমরা এনালাইসিস করে সাসপেক্ট করেছি এই মৃত্যুর কারণ মেনিংগোকোকাল মেনিনজাইটিস।
ফেব্রুয়ার মাসে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধিন অবস্থায় তিন দিনের ব্যবধানে দুই বোনের মৃত্যু হয়। এরা হলো মুনতাহা মারিশা ও মুফতাউল মাশিয়া। মুনতাহা মারিশার বয়স ২ বছর। আর মুফতাউল মাশিয়ার বয়স ৫ বছর। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামের মনজুর রহমানে দুই মেয়ে সন্তান। মনজুর রহমানে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক ও তার স্ত্রী পলি খাতুন। তারা রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারে থাকতেন।
তিন দিনের ব্যবধানে দুই বোনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করে আইইডিসিআর। আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। অসুস্থতার লক্ষণ দেখে দুই শিশুর মারা যাবার কারণ সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছিলো নিপাহ ভাইরাসের কারণে তারা মারা গিয়ে থাকতে পারে। তবে, নমুনা পরীক্ষার পর আইইডিসিআর জানিয়েছে, নিপাহ ভাইরাসে নয়, অন্য কোন কারণে তাদের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
ঢাকা থেকে আসা আইইডিসিআরের ৩ সদস্যের তদন্ত টিম শিশুদের পিতা মিজানুর রহমান ও মাতা পলি খাতুনের সাথে কথা বলেন। দুই শিশু ও তাদের বাবা মায়ের রোগের কেস হিস্ট্রির বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেন তারা। এছাড়া মৃত দুই শিশুর নমুনাও সংগ্রহ করেন প্রতিনিধি দল।
রোববার আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ তাহমিনা শিরীন জানান, এই দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ জানতে আমরা সেখানে যায় ও কিছু নমুনা সংগ্রহ করি। এরপর আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সাসপেক্ট হিসেবে মেনিংগোকোকাল মেনিনজাইটিস রোগে মৃত্যু হতে পরে বলে ধরণা করছি। আমরা বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছিলাম। তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই রোগে মৃত্যু হতে পরে বলে ধারণা করা হয়েছে। তবে যেহেতু শিশু দুটি মারা গেছে আমরা এর বেশি আর কিছু বের করা সম্ভব নয়। তাই ধরেই নিতে হবে মেনিংগোকোকাল মেনিনজাইটিস রোগেই তাদের মৃত্যু হতে পারে।
এদিকে, মেনিংগোকোকাল মেনিনজাইটিস রোগ সম্পর্কে অনেকেই তেমন কিছু জানেন না। রাজশাহী সংবাদের পাঠকদের এ বিষয়ে জানানোর জন্য আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।
মেনিংগোকোকাল মেনিনজাইটিস: একটি বিরল কিন্তু মারাত্বক ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন শিরোনামে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরল হলেও মেনিংগোকোকাল মেনিনজাইটিস অত্যন্ত জটিল এবং মারাত্বক একটি ইনফেকশন যা সরাসরি মস্তিষ্ক এবং শরীরের রক্তকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে মস্তিষ্ক এবং স্পাইনাল কর্ডের উপরের ঝিল্লিতে জ্বালা অনুভব হয়। বর্তমান সময়ে চিকিৎসার প্রভুত অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও, এই ইনফেকশন কিন্তু রিতীমতো ভয়াবহ। যা মাত্র ২৪-৪৮ ঘণ্টার১ মধ্যেই কোনও বাচ্চার মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে সক্ষম। এমনকী যারা এই সংক্রমণের সংস্পর্শে আসে, পরবর্তীকালে তাদের মধ্যেও বধিরতা, শরীরে ক্ষতচিহ্ন, অঙ্গচ্ছেদ২ ইত্যাদির মতো বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা লক্ষ্য করা যায়। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া ১৫ শতাংশ মানুষ তাদের বাকি জীবদ্দশায় মস্তিষ্ক এবং স্নায়ু রোগ মতো জটিল সমস্যায় ভুগতে থাকে।
কেউই সুরক্ষিত নয়:
অনুর্ধ্ব ৫ বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে, বয়ঃসন্ধিকালে এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যেই মূলত এই রোগ দেখা যায়। যদিও এই রোগটি অত্যন্ত অনিশ্চিত। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে, যে কোনও মানুষ, যে কোনও বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে৪। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুস্থ-সবল ব্যক্তিরাই এই রোগে আক্রান্ত হন।
কারণ:
মেনিংগোকোকাল মেনিনজাইটিস-এর মূল কারণ হল নেইসেরিয়া মেনিনজাইটিডিস নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া, যাকে মেনিগোকোকাসও বলা হয়। অন্য কিছু ব্যাকটেরিয়ার থেকেও মেনিনজাইটিস সংক্রমিত হতে পারে। তবে সেটি কোনও ভাবেই মেনিংগোকোকাল মেনিনজাইটিস নয়। রাখতে হবে যে, সারা বিশ্বে এই ব্যাকটেরিয়াগুলি সঞ্চালনের কোনও সঠিক দিকনির্দেশ নেই এবং এটি সময়, মানুষের বয়স এবং ভৌগোলিক অবস্থার উপরেও নির্ভর করে।
এটি ছড়ায় কীভাবে?
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন ব্যক্তি, তাদের নাকের পিছনের অংশে এবং গলায় মেনিংগোকোকাল ব্যাকটেরিয়া বহন করে। বাইরে থেকে যার কোনও নির্দিষ্ট কোনও চিহ্ন থাকে না৫। এটিকে বলা হয় বাহক৬। বাইরে থেকে কিছু বোঝা না গেলেও এই ব্যাকটেরিয়া কিন্তু যে কোনও সময় মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। অবশ্য, সাধারণ সর্দি-কাশি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের মতো মেনিংগোকোকাল অত সহজে ছড়িয়ে না। তবে এই ধরনের অন্যান্য রোগের তুলনায় অনেক এটি অনেক বেশি ভয়াবহ৭। সংক্রামক ব্যক্তিকে চুম্বন, তাদের কাশি, সর্দি-কফ ইত্যাদি থেকে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ।
মেনিংগোকোকাল মেনিনজাইটিস-এর লক্ষণগুলি ক্ষেত্র বিশেষে পরিবর্তিত হতে পারে। প্রথম দিকের লক্ষণগুলি বিভ্রান্তিকর হতে পারে কারণ এটি সাধারণ জ্বরেরই অনুরূপ। যেমন, অস্বস্তিবোধ, জ্বর, খিদে কমে যাওয়া, ইত্যাদি। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ নির্ণয় করা খুবই কঠিন। তবে, এর মধ্যে কোনও একটি লক্ষণ দেখা গেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নেওয়া আবশ্যিক। কারণ ২৪ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে এটি মারাত্মক আকার নিতে পারে।


আরো খবর